খেলাধুলা

ব্রাদার্সের দাবী ‘পিচ ভেজা ছিলো, তাই খেলিনি’

বসন্তের শেষভাগে এসে হুট করেই টানা বৃষ্টির দেখা মিলছে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে। যার প্রভাব পড়ছে দেশের ক্রিকেটেও। আজ (মঙ্গলবার) সাভারের বিকেএসপিতে বৃষ্টির কারণে সৃষ্টি হয়েছে জটিল এক পরিস্থিতি। যেখানে ম্যাচের মাত্র এক ইনিংস খেলেই ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে জয় পেয়েছে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব।

Advertisement

তবে ঘটনা ঠিক এতোটা সহজ ছিলো না মাঠে। মোহামেডানের ইনিংস শেষ হওয়ার পরপরই বৃষ্টির কারণে থেমে যায় ম্যাচ। পরে বৃষ্টি থামলে মাঠ শুকাতেও ব্যয় হয় কয়েক ঘণ্টা সময়। ম্যাচের দুই আম্পায়ার মাসুদুর রহমান মুকুল এবং গাজী সোহেল বেলা ৩.৪৯ মিনিটের সময় মাঠ পর্যবেক্ষণ করে জানান ৪.০৬ মিনিটের মধ্যে খেলা শুরু করা যাবে। এতে ব্রাদার্স ইউনিয়নের সামনে নতুন লক্ষ্য দাঁড়াবে ১৭৪ রানের।

কিন্তু বৃষ্টিভেজা কন্ডিশন ও উইকেটে কার্টেল ওভারের এ ম্যাচ খেলতে অনীহা প্রকাশ করে ব্রাদার্স। তাদের দাবী আগামীকাল রিজার্ভ ডেতে নতুন করে তাদের পুরো ইনিংস খেলতে দেয়া হোক। তবে তা নিয়মের মধ্যে না থাকায় প্রতিপক্ষ খেলতে অনীহা জানানোর কারণে জয়ী ঘোষণা করা হয় মোহামেডানকে।

ঘটনার বিস্তারিত জানতে তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা হয় ম্যাচ রেফারি আখতার আহমেদ শিপারের সঙ্গে। তিনি সাভার থেকেই জাগোনিউজকে মুঠোফোনে জানান, ‘আম্পায়াররা ৪.০০টা বাজার আগে ১১ মিনিট আগে দুই দলকে জানিয়ে দেয় যে ৪.০৬ মিনিটে খেলা শুরু হবে এবং ম্যাচ হবে ২০ ওভারের। সে অনুযায়ী দুই আম্পায়ার মাঠে নামে। কিন্তু ৪.১৫ মিনিট পর্যন্ত ব্রাদার্স ইউনিয়ন মাঠে নামেনি। তাদের দাবী ছিলো আউটফিল্ড ভেজা।’

Advertisement

জাগোনিউজের কাছ থেকে প্রশ্ন রাখা হয়, ‘আউটফিল্ড কী সত্যিই ভেজা এবং খেলার অনুপযোগী ছিলো? ম্যাচ রেফারির উত্তর, ‘পিচের এক কোণায় একটু পানি জমে ছিলো এবং নরম ছিলো। তবে এ জায়গাটি এমন ছিলো যেখানে বলও যায় খুব কম এবং কোনো ফিল্ডারও সেখানে দাঁড়ায়নি। তাই আমাদের মনে হয়নি খেলা অসম্ভব। ফলে আম্পায়াররা ১০-১২ মিনিট অপেক্ষা করার পর ‘রিফিউজড টু প্লে’ নিয়মের আওতায় মোহামেডানকে জয়ী ঘোষণা করেছে।’

তবে ম্যাচ রেফারির মন্তব্যের ঠিক উল্টোটাই শোনা যায় ব্রাদার্স ইউনিয়নের পক্ষ থেকে। জাগোনিউজের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে ব্রাদার্স অধিনায়ক বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক পেসার মোহাম্মদ শরীফ উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় বিষয়টা একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। কারণ, পৌনে চারটার দিকেও আম্পায়াররা আমাদের বলেছেন পিচের এক কোনায় পানি জমে আছে। কাজেই পিচ পুরোপুরি না শুকালে খেলা আজকে আয়োজন সম্ভব না। তাই ম্যাচ হবে না ভেবে আমরা ফুটসাল খেলতে থাকি। কিন্তু ৩.৫৭ মিনিটের দিকে আমাদের বলা হয় খেলা হবে। ২০ ওভারের ম্যাচটি শুরু হবে ৪.০৬ মিনিট থেকে। আমরা তখন অপ্রস্তুত ও হতবাক হয়ে যাই।’

‘কারণ কয়েক মিনিট আগেই আম্পায়াররা আমাদের জানিয়েছেন পিচের একটা কোনায় কভার ফুটো হয়ে ভেজা থাকায় খেলা সম্ভব না। তাই আমরা মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিলাম আজ আর খেলা হবে না। হঠাৎ দেখি আম্পায়াররা আমাদের বলে বসলেন ৪.০৬ মিনিট থেকে খেলা শুরু, তোমরা মাঠে নামো। আম্পায়ারদের এই কয়েক মিনিটে কথার হেরফের এবং অল্প সময়ের ব্যবধানে মাঠে নামার বা ব্যাটিং শুরু করার কথা শুনে বিপাকে পড়ে যাই। তাই আমরা ব্যাটিংয়ে নামিনি।’

মোহাম্মদ শরীফের জোর দাবি, ‘পিচের এক কোনায় একটু পানি জমে ভিজে ছিলো এবং পাশের পিচও ছিলো খানিক ভেজা। আর ত্রিশ গজের বাইরেও তেমন শুকনো ছিলো না মাঠ। তবে সেটা আমাদের বিষয় না। কারণ আমরা তখন ব্যাটিংয়ে নামবো। এটা ফিল্ডিং দলেরই সমস্যা করবে। তাই আমরা পিচ ভেজা থাকাকেই গুরুত্ব দেই। মোদ্দা কথা, প্রথমে পিচ ভেজা আছে এবং এ পিচ না শুকালে আজ খেলা শুরু সম্ভব না- আম্পায়ারদের এ কথা এবং পরিবর্তিত লক্ষ্য আমাদের কাগজে-কলমে না দেয়ার কারণেই আমরা আর ব্যাটিংয়ে নামিনি।’

Advertisement

সিসিডিএমের শরণাপন্ন হবে ব্রাদার্স

আম্পায়ার এবং ম্যাচ রেফারি মিলে রিফিউজড টু প্লে নিয়মের আওতায় মোহামেডানকে জয়ী ঘোষণা করলেও, ব্রাদার্স ইউনিয়ন তা মেনে নিতে নারাজ। ব্রাদার্স ক্রিকেট কমিটির এক শীর্ষ কর্মকর্তা জাগোনিউজকে বলেছেন, ‘আমরা সিসিডিএমের কাছে বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত এবং পুনর্বিবেচনার দাবী জানাবো। এবং প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী এই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণের আবেদন জানাচ্ছি। আমরা মনে করি আমাদের সঙ্গে ন্যায় বিচার হয়নি।’

এদিকে ব্রাদার্স শিবিরের মন্তব্য মানতে রাজি নন ম্যাচের রেফারি আখতার আহমেদ শিপার। ব্রাদার্সের দাবীর কথা জানানো হলে তিনি বলেন, ‘আম্পায়ার এবং আমরা তো কারো পক্ষ না। মোহামেডান ইনিংসের পর যখন বৃষ্টি চলে আসে তখনই বৃষ্টি আইনে কত ওভারে কত টার্গেট হতে পারে তা জানানো হয়েছিল। এটা নতুন করে খেলা শুরুর সময় আর কাগজে কলমে জানানোর দরকার পড়ে না। আমার মনে হয়, আমাদের আম্পায়ার এবং আমরা সঠিক কাজটি করেছি। শেষ ঘণ্টায় ৪.০৫ থেকে ২০ ওভার খেলা চালানোর মতো আউটফিল্ড ও আলো ছিল।’

এআরবি/এসএএস/জেআইএম