বিশেষ প্রতিবেদন

সব শক্তি পায়ে মাড়িয়ে নদী দখলমুক্ত করবই

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। প্রতিমন্ত্রী, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। নদী, সমুদ্র, নৌবন্দর উন্নয়ন প্রসঙ্গ নিয়ে সম্প্রতি মুখোমুখি হন জাগো নিউজ-র। দখল হওয়া নদীর জমি উদ্ধার করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন তিনি। নদী, নদী বন্দরের উন্নয়নের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। একান্ত আলোচনায় নানা পরিকল্পনার কথাও জানান এই রাজনীতিক। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের প্রথমটি থাকছে আজ।

Advertisement

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু

জাগো নিউজ : নদী দখলমুক্ত করতে বুড়িগঙ্গায় উচ্ছেদ অভিযান চলছে। নদী নিয়ে যদি পরিকল্পনার কথা বলতেন?

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : প্রধানমন্ত্রী নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করে আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে। এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশকে আরও বেগবান করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নির্বাচনী ইশতেহারে সরকারের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য স্পষ্ট করা হয়েছে। সেখানে নদী, নদী বন্দর, নদীপথকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

Advertisement

ঢাকা ঘিরে যে চারটি নদী রয়েছে সেগুলো এবং চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা ফিরে আনতে প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই বিশেষ উদ্যোগের কথা বলেছেন। এই নদীগুলো দূষণমুক্ত করতেও প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি নদীগুলো দখলমুক্ত করতে সর্বোচ্চ তাগিদ দিয়েছেন। এজন্য তিনি ইতোমধ্যেই টাস্কফোর্স গঠন করে দিয়েছেন। নদী নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান করা হচ্ছে। হয়তো পরবর্তী সভায় মাস্টারপ্ল্যান অনুমোদন হবে। মূলত ঢাকার মধ্যকার চারটি নদী নিয়ে যে বিশেষ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে তারই অংশ হিসেবে উচ্ছেদ অভিযান চলছে।

জাগো নিউজ : নদী নিয়ে টাস্কফোর্স গঠনের গুরুত্ব সামনে আসল কেন? 

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : নদীগুলো আসলে দখল হয়ে গেছে। ঢাকার মধ্যকার খাল, নালা, ডোবা ভরাট হয়ে গেছে। নদী, খালের ওপর স্থাপনা তৈরি হয়ে গেছে। নদী, খাল পূর্বের অবস্থায় ফিরে আনার জন্যই টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। ৫টি নদীর ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেবে এই টাস্কফোর্স।

জাগো নিউজ : দেশের অন্য নদীগুলোতেও তো একই দশা...

Advertisement

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : বাংলাদেশে সাত শতাধিক নদী রয়েছে। আমরা সব নদী রক্ষা করতে চাই। ইতোমধ্যে নদী রক্ষা কমিশন গঠন করা হয়েছে। সংসদে এ কমিশন গঠন নিয়ে বিল পাস করা হয়েছে। নদী রক্ষা কমিশন ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। আমরা প্রতিটি জেলা, উপজেলায় নদী রক্ষা কমিটি গঠন করতে যাচ্ছি। জেলা প্রশাসক থাকবেন সে কমিটির সভাপতি। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই কমিটিতে থাকবেন।

আরও পড়ুন> নদী দখলমুক্ত করতে ১০ বছর মেয়াদি ‘মাস্টারপ্ল্যান’

নদী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, দখল করা হচ্ছে এটি মানুষ অনুভব করছেন। কিন্তু সামগ্রিকভাবে নদী রক্ষার জন্য আন্দোলনে অংশ নিতে হবে এটি এখন মানুষ বুঝতে পারছেন। নদী রক্ষা কমিশন তাদের দায়িত্ব পালন করছেন এবং তারা যথাযথভাবে আমাদের কাছে সুপারিশ করছেন। নৌ-মন্ত্রণালয় সে সুপারিশ অনুযায়ী কাজ শুরু করছে।

জাগো নিউজ : নদী দখলমুক্ত করার কথা বলছেন। অথচ নদী দখল হয়েছে রাজনৈতিক শক্তির বলেই। এখনও হচ্ছে।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : আমরা আসলে কাছাকাছি সময়ের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি। ২০ বা ৫০ বছর আগে কী হয়েছে, তা ভুলে যাই। নদী রক্ষার জন্যই স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু নৌ-মন্ত্রণালয় গঠন করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘নদীমাতৃক বাংলাদেশ বাঁচাতে হলে নদী রক্ষা করতে হবে এবং বঙ্গবন্ধু সেটা গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন।’ আজকে ‘ব্লু ইকোনমি’ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সমুদ্র আইন করে বঙ্গবন্ধু সামদ্রিক সম্পদ রক্ষার জন্য অনেক আগেই তাগিদ দিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের পর নদী-সমুদ্রে কী হয়েছে? সবই ধ্বংস হয়েছিল। আমরা শুধু নিকট অতীতের কথা বলি। আমরা গভীরে যেতে চাই না।

খাস খতিয়ান দেখিয়ে নদী বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। শুধু নদী না। কবরস্থান, শ্মশানের জমিও খাস খতিয়ান দেখিয়ে বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। ভূমির মালিক অথচ তাকে ভূমিহীন বানিয়ে জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়ার আমলে হাজার হাজার একর জমি এভাবে দখল করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে কী পরিমাণ সম্পত্তি ব্যক্তিমালিকানায় দখল করা হয়েছে, তা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো গবেষণা নেই। জিয়াউর রহমানের আমলে রাজনৈতিকভাবেই নদীর পাড়ে স্থাপনা করেছে। সড়কের পাশের জায়গা দখল করেছে। জিয়াউর রহমান এবং এরশাদের আমলের জবরদখল এখন আমাদের ওপর এসে পড়ছে। তাদের অপকর্মের দায়িত্ব আমাদের নিতে হচ্ছে।

জাগো নিউজ : দীর্ঘকাল আওয়ামী লীগও ক্ষমতায় থাকছে...

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বলেই তো নদীর জমি দখলমুক্ত করা হচ্ছে। আপনি বুড়িগঙ্গার পানিকে পানি বলতে পারবেন না। কেমিক্যাল বলতে হবে। অথচ এই অবস্থা থেকে কোনো সরকারই রক্ষা করেনি। আমরা এখন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে নদীর পরিবেশ ঠিক করছি। অথচ কতিপয় পরিবেশবাদী বলছেন, ‘সরকার নাকি নদীর জমি দখল করছে। নদীর জমি তো সরকারের। সরকার জনগণের। জনগণের স্বার্থে সরকার কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে প্রস্তুত। যারা সরকারের উচ্ছেদ অভিযানের সমালোচনা করছেন, তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ স্বীকার করে না। তাদের রক্তে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ধারা প্রবাহিত। তারা বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারেনি। বাংলাদেশের উন্নয়ন মেনে নিতে পারছে না। এ কারণে তারা সব জায়গায় জটিলতা সৃষ্টি করে চলছে।

জাগো নিউজ : নদী দখলমুক্ত করা চ্যালেঞ্জের। কীভাবে মোকাবেলা করছেন?

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : সংসদে বলেছি, সরকারের থেকে শক্তিশালী কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী হতে পারে না। পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে আখ্যা দিতে চেয়েছিল। শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাংককে ভুল প্রমাণিত করেছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব। সব শক্তি পায়ে মাড়িয়ে নদী দখলমুক্ত করবই।

এএসএস/এমআরএম/পিআর