সাংবাদিক গৌতম দাস হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতের দেয়া নয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মধ্যে পাঁচজনের সাজা বহাল রেখে চারজনকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।
Advertisement
ওই হত্যা মামলায় ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আসামিদের করা আপিলের ওপর শুনানি শেষে বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি এ কে এম আবদুল হাকিম ও বিচারপতি ফাতেমা নজীবের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হারুন-অর-রশীদ জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘এ মামলার আসামি আসিফ ইমরান, সিদ্দিকুর রহমান মিয়া, আসাদ বিন কাদির, আবু তাহের মতুর্জা ওরফে অ্যাপোলো ও তামজিদ হোসেন বাবুকে বিচারিক আদালতের দেয়া যাবজ্জীবন ও ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানার সাজা বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।’
Advertisement
‘অন্যদিকে, আসামি আসিফ ইমতিয়াজ বুলু, কামরুল ইসলাম আপন, রাজিব হাসান মিয়া ও কাজী মুরাদকে খালাস দিয়েছেন আদালত।’
গত ৯ জানুয়ারি বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের করা পাঁচটি আপিলের ওপর উভয়পক্ষের শুননি শেষ হলে বুধবার রায় ঘোষণার জন্য রেখেছিলেন উচ্চ আদালত।
মামলার ১০ আসামির মধ্যে অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি জাহিদ চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০০৬ সালে ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান। পরে মামলা থেকে তার নাম বাদ দেয়া হয়।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডিত আসামিরা পাঁচটি ফৌজদারি আপিল করেন হাইকোর্টে। এসব আপিলের ওপর গত ৯ জানুয়ারি উভয়পক্ষের শুনানি শেষ হয়।
Advertisement
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হারুন-অর রশীদ। তার সঙ্গে ছিলেন- সাথী শাহজাহান, জাহাঙ্গীর আলম ও জহির আহমদ।
আসামি সিদ্দিকুর রহমান মিয়া ও আবু তাহের মো. মোস্তফা ওরফে অ্যাপোলো বিশ্বাসের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হেলালউদ্দিন মোল্লা।
আসামি আসিফ ইমরান, আসিফ ইমতিয়াজ বুলু, কামরুল ইসলাম আপন ও রাজীব হাসান মনার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দ আলী মোকাররম।
আসামি তানজীর হোসেন বাবুর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আওলাদ হোসেন, আসাদ বিন কাদিরের পক্ষে আইনজীবী মো. আব্দুর রশীদ, ওমর ফারুক ও আসামি কাজী মুরাদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শেখ বাহারুল ইসলাম।
রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হারুন-অর রশীদ বলেন, ‘তের বছর আগে ফরিদপুরে সাংবদিক গৌতম দাসকে হত্যা মামলায় ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল নয় আসামিকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছিলেন।’
‘হাইকোর্ট আপিলের রায়ে নয় আসামির মধ্যে পাঁচজনের সাজা বহাল রেখে বাকি চারজনকে খালাস দিয়েছেন। খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।‘
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে সাংবাদিক গৌতম দাসকে হত্যার দায়ে নয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালে ফরিদপুর শহরের মুজিব সড়কের সংস্কার এবং পুনর্নির্মাণকাজের অনিয়ম ও দুর্নীতির সংবাদ পরিবেশন করায় ‘সমকাল’-এর নিজস্ব প্রতিবেদক ও ফরিদপুর ব্যুরো কার্যালয়ের প্রধান গৌতম দাসের ওপর ক্ষুব্ধ হয় তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকারের মদদপুষ্ট ঠিকাদার গোষ্ঠী ও তাদের সহযোগী সন্ত্রাসী চক্র।
ওই ঘটনার জের ধরে ওই বছরের ১৭ নভেম্বর স্থানীয় ব্যুরো কার্যালয়ে গৌতমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। ওই দিনই ‘সমকাল’-এর জেলা প্রতিনিধি হাসান উজ্জামান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন।
২০০৬ সালের ২০ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাম নবী আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
ওই বছরের ১৫ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। পরে মামলাটি ২০০৬ সালের ২৮ আগস্ট ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ স্থানান্তর করা হয়।
২০১৩ সালের ১৯ জুন মামলার যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শেষ হয় এবং আদালত রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন এবং ২৭ জুন রায় ঘোষণা করেন।
ফরিদপুর শহরের মুজিব সড়কের সংস্কারে অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর প্রকাশ করার জেরে দৈনিক সমকালের ফরিদপুর ব্যুরো প্রধান গৌতমকে ২০০৫ সালের ১৭ নভেম্বর তার কার্যালয়ে ঢুকে নির্যাতন ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে আসামিরা।
ওইদিনই সমকালের পক্ষে বাদি হয়ে ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন সমকালের স্থানীয় প্রতিনিধি হাসানউজ্জামান।
এফএইচ/এমএআর/পিআর/এমএস