সাম্প্রতিক বর্ষণে উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়ে কাপ্তাই বাঁধ। ঝুঁকি এড়াতে কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলি পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্প্রিলওয়ে দিয়ে লেকের অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে কাপ্তাই বাঁধ এখন ঝুঁকিমুক্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কাপ্তাই হ্রদ পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। উল্লেখ্য, কর্ণফুলি পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে ১৯৬০ সালে নির্মিত হয় কাপ্তাই বাঁধ। এর ফলে সৃষ্টি হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলরাশি কাপ্তাই লেক। যার আয়তন ৭শ বর্গ কিলোমিটারের অধিক। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে বর্ষণে উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই লেকে পানি বেড়ে যায়। এতে লেকের অতিরিক্ত পানির চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় হ্রদ পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা কমিটিকে। চলতি মৌসুমে কয়েক দফা টানা ও ভারি বর্ষণে লেকে অতিরিক্ত পানি বাড়ায় চাপ সামাল দিতে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার কর্ণফুলি পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্প্রিলওয়ের ১৬ গেট খুলে পানি ছেড়ে দিতে হয়েছে।কাপ্তাই হ্রদ পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন বলেন, এবার ১৯-২১ আগস্ট টানা তিন দিন পানি ছেড়ে লেকের অতিরিক্ত পানি কমানো হয়েছে। বর্তমানে কাপ্তাই বাঁধটি ঝুঁকিতে নেই। পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্প্রিলওয়ের সবগুলো গেট খুলে দিয়ে দ্রুত লেকের অতিরিক্ত পানি ছাড়া হয়। এছাড়া এখন আর বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। তিনি জানান, সম্প্রতি বর্ষণে কাপ্তাই লেকের পানি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে উচ্চতা ১০৮ ফুট অতিক্রম করে। এর ফলে শহরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বহু বাড়িঘর ও ফসলি জমি তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝুঁকির মধ্যে পড়ে কাপ্তাই বাঁধ। এ পরিস্থিতিতে ১৯ আগস্ট কর্ণফুলি পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্প্রিলওয়ের ১৬টি গেট খুলে পানি ছেড়ে ৩ ফুট কমানো হয়। কিন্তু এরপরও পানির চাপ সামাল দিতে না পারায় ২০ ও ২১ আগস্ট পানি ছেড়ে আরও পাঁচ ফুট কমানো হয়। বর্তমানে লেকে পানির পরিমাণ স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে। কর্ণফুলি পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. আবদুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, হ্রদে রুলকার্ভ অনুযায়ী স্বাভাবিক নিয়মে ৯৬ এমএসএল (মীন সি লেভেল) পানি থাকার কথা। বর্ষণে এবার লেকে পানির উচ্চতা গড়ায় ১০৮ দশমিক ৬ এমএসএল পর্যন্ত। হ্রদে পানি ধারণ ক্ষমতা ১০৯ ফুট বা এমএসএল। এ সীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা দেখা দিলে বাঁধ রক্ষায় অতিরিক্ত পানি স্প্রিলওয়ে দিয়ে ছেড়ে দিতে হয়। এবার লেকে থেকে অধিক পরিমাণে পানি ছাড়ার কারণে ভাটি এলাকার রাঙামাটি-বাঙালহালিয়া ভায়া রাজস্থলী-বান্দরবান সড়কের চন্দ্রঘোনা ফেরি চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। পানি ছাড়া বন্ধ করায় বর্তমানে তা স্বাভাবিক হয়েছে।সুশীল প্রসাদ চাকমা/এমজেড/আরআইপি
Advertisement