স্থানীয়দের মধ্যে কেউ একদমই ভাল খেলেননি- তা নয়, খেলেছেন। জুনায়েদ সিদ্দিকী, রনি তালুকদার মোটামুটি শুরু থেকেই ভাল খেলছেন। সাথে তরুণ আফিফ হোসেন ধ্রুব আর ইয়াসির আলী রাব্বি এক ম্যাচে রান পেয়েছেন। কাল (রোববার) দুপুরের খেলায় ম্যাচ সেরা হয়েছেন আরেক সম্ভাবনাময় তরুণ জাকির হাসানও।
Advertisement
কিন্তু সামগ্রিকভাবে এবার বিপিএলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের অবস্থা ভাল না। রীতিমত বেশ খারাপ। রোববার রাতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে ৭৫ রানের (৪১ বলে সাত বাউন্ডারি ও চার ছক্কায়) এক দারুণ ইনিংস খেলে স্থানীয় ব্যাটসম্যানদের মুখ রক্ষা করেছেন মুশফিকুর রহিম।
ঐ এক ইনিংসে রান তোলায় চার নম্বরে উঠে এসেছেন সব ফরম্যাটে দেশের এ নির্ভরযোগ্য উইলোবাজ। এছাড়া জাতীয় দলের তকমাধারি ব্যাটসম্যান আর কারো অবস্থাই ভাল না। তামিম ইকবাল, লিটন দাস, সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, আরিফুল হক ও মোহাম্মদ মিঠুন- কারো ব্যাটেই রান নেই।
আর জাতীয় দলের বাইরে থেকে আবার ঢোকার অপেক্ষায় থাকা এনামুল হক বিজয়, সাব্বির রহমান রুম্মন, মোসাদ্দেক হোসেন আর নাসির হোসেনরা আশার আলো জ্বালতে পারেননি একটুও। বরং আরও অন্ধকারে তলিয়ে গেছেন। তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। দেখে মনে হয় যেনো ব্যাটিং ভুলে গিয়েছেন।
Advertisement
রান তোলায় বিদেশিরা অনেক এগিয়ে। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশী রান এসেছে রপুর রাইডার্সের রিলে রুশোর ব্যাট থেকে। ৫ খেলায় এ ২৯ বছর বয়সী দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানের সংগ্রহ ২৩০ রান। তিন বার নট আউট থাকার কারণে গড়টাও বেশ ভাল- ১১৫.০০। পঞ্চাশের ঘরে পা রেখেছেন দু'বার, স্ট্রাইকরেট ১৩১.৪২।
রান সংগ্রহে দ্বিতীয় স্থানটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিকোলাস পুরানের। সিলেট সিক্সার্সের হয়ে খেলা পুরান তিন খেলায় করেছেন ১৬৫। তিনিও হাঁকিয়েছেন দুটি হাফ সেঞ্চুরি। তার গড় ৮২.৫০। স্ট্রাইকরেট দারুণ; ১৫৭.১৪। রান তোলায় তৃতীয় স্থানটি ঢাকা ডায়নামাইটসের আফগান ওপেনার হযরতউল্লাহ জাজাইয়ের। দুটি ফিফটি সহ চার ম্যাচে তার রান ১৪০, সর্বোচ্চ ৮৪। এ ২০ বছর বয়সী আফগান ওপেনারের স্ট্রাইকরেট এখন পর্যন্ত সবার চেয়ে বেশী ১৬৬.৬৬।
কালকের আগে ছিলেন বেশ নীচে। কিন্তু রোববার চতুর্থ ম্যাচে ৭৫ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে রান তোলায় চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছেন মুশফিকুর রহিম। এখন পর্যন্ত ৪ খেলায় তার রান ১৩৯। ঐ এক ম্যাচে হাত খুলে খেলায় মুশফিকের স্ট্রাইকরেটও বেড়েছে বহুগুণে। এখন মুশফিকের স্ট্রাইকরেট ১৩৩.৬৫।
এক সময় জাতীয় দলের ওপেনার ছিলেন। দেশের হয়ে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপও খেলেছেন, খুলনা টাইটান্সের সেই বাঁহাতি ওপেনার জুনায়েদ সিদ্দিকী রান সংগ্রহে পঞ্চম। চার খেলায় জুনায়েদের সংগ্রহ ১০৭। চার ম্যাচে মোটামুটি ধারাবাহিক রান করা জুনায়েদের স্ট্রাইকরেটও মন্দ নয়; ১৩৫.৪৪। এছাড়া ভাল খেলে রান তোলায় ছয় নম্বরে আছেন ঢাকা ডায়নামাইটসের রনি তালুকদার ( চার খেলায় ১০৪ )।
Advertisement
মুশফিকুর রহিম ছাড়া বর্তমান জাতীয় দলের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সেরা দশে আছেন শুধু মোহাম্মদ মিঠুন। রংপুর রাইডার্সের এ মিডল অর্ডার পাঁচ খেলায় অংশ নিয়ে চার বার ব্যাট করে তুলেছেন ৯৮ রান। ফিফটি নেই, সর্বোচ্চ ৪৯।
এছাড়া রান তোলায় সেরা দশের বাকি তিনজন হলেন খুলনা টাইটান্সের পল স্টার্লিং (চার খেলায় ৯৬), ঢাকা ডায়নামাইটসের ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান মিডল অর্ডার কাইরান পোলার্ড (চার খেলায় ৯৫) এবং একই দলের সুনিল নারিন (চার খেলায় ৯০)।
রান সংগ্রহে জাতীয় দলের তকমাধারি ও নামি উইলোবাজদের পিছনে ফেলে ১৪ নম্বরে জায়গা করে নিয়েছেন অফস্পিনিং অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ। রাজশাহী কিংসের অধিনায়ক অবশ্য এবার ওপরের দিকে ব্যাট করছেন। কখনো তিনে আবার কোন ম্যাচে ওপেনও করতে দেখা গিয়েছে তাকে। মিরাজের মোট সংগ্রহ ৪ খেলায় ৮২, সর্বোচ্চ ৫১। স্ট্রাইকরেট ১২৪.২৪।
এছাড়া বাংলাদেশের তারকা ব্যাটসম্যানদের প্রায় সবাই নিষ্প্রভ, অনুজ্জ্বল। কারো ব্যাটে রান নেই। চার ও ছক্কার ফুলঝুরির তো প্রশ্নই আসে না। বাংলাদেশের তারকাদের মধ্যে মুশফিকুর রহিম ছাড়া সবচেয়ে বেশী রান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। খুলনা টাইটান্স ক্যাপ্টেন ৪ খেলায় করেছেন ৭৬, সর্বোচ্চ ৩৩। স্ট্রাইকরেট ১০৪.১০।
এছাড়া তামিম চার খেলায় করেছেন ৬০, সর্বোচ্চ ৩৫। স্ট্রাইকরেট তামিমের মানের ধারে কাছেও নেই; মাত্র ৮৪.৫০। লিটন দাসের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। ব্যাটে ঝড় তোলা বহু দূরে, দেখে মনে হয় ব্যাটিংই ভুলে গিয়েছেন। তিন খেলায় লিটনের রান মোটে ১০, সর্বোচ্চ ৯। স্ট্রাইকরেট টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের তুলনায় অস্বাভাবিক কম; ৬২.৫০।
সৌম্য সরকারের অবস্থাও বেশ খারাপ। রাজশাহীর হয়ে খেলা এই বাঁহাতি ওপেনার চার খেলায় করেছেন মাত্র ৩৩। সর্বোচ্চ ১৮। স্ট্রাইকরেটও তার মানে বেশ কম, ৯৭.০৫।
স্টিভেন স্মিথ ইনজুরির কারণে দেশে ফেরার পর যার কাঁধে পড়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়কত্বের গুরু দায়িত্ব- সেই ইমরুল কায়েসও নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। ৪ খেলায় ইমরুলের মোট রান ৩২, সর্বোচ্চ ২৪। স্ট্রাইকরেট ৭৮.০৪।
দেশ ও বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার সাকিবও নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি। এখন পর্যন্ত তার ব্যাট থেকে বেরিয়ে আসেনি কোন ঝড়ো ইনিংস। চার খেলায় সাকিবের সংগহ ৬১। সর্বোচ্চ ৩৬। স্ট্রাইকরেট বিস্ময়কর রকম কম, ৯৮.৩৮।
মুমিনুল হক এক ম্যাচে রান পেলেও (৪৪) বাকি তিন খেলায় কিছু করতে পারেননি। চার খেলায় রাজশাহীর এ বাঁহাতি টপ অর্ডারের সংগ্রহ ৬৯। এছাড়া জাতীয় দলে থাকা আরিফুল এবং বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্নে বিভোর সাবির রহমান, এনামুল হক বিজয় ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের অবস্থা খুব খারাপ। তাদের ব্যাট কথা বলছে না। তিনজনই যেন রান করতে যেন ভুলে গিয়েছেন।
তিন খেলায় সাব্বিরের সংগ্রহ ১৯, সর্বোচ্চ ১২, স্ট্রাইকরেট ৯০.৪৭। মোসাদ্দেকও তথৈবচ; চার খেলায় রান ৩৩, সর্বোচ্চ ১২। নাসির দুই খেলায় ৪, সর্বোচ্চ ৩। আরিফুল চার ম্যাচে ৫২, সর্বোচ্চ ১৯* স্ট্রাইকরেট ৯২.৯৫। এনামুল হক বিজয় ৪ খেলায় ৫৭, সর্বোচ্চ ৪০, স্ট্রাইকরেট ১০৫.৫৫।
এছাড়া নিষেধাজ্ঞার খড়গ কাটিয়ে আবার বিপিএলে ফেরা আশরাফুলও সুবিধা করতে পারেননি। ২ খেলায় তার রান ২৫, সর্বোচ্চ ২২, স্ট্রাইকরেট ৮৯.২৮।
অমিত সম্ভাবনার আধার নাজমুল হাসান শান্তর অবস্থাও বিস্ময়কর রকমের খারাপ। তিন খেলায় এ বাঁহাতি টপ অর্ডারের সংগ্রহ ২০, সর্বোচ্চ ১৩, স্ট্রাইকরেট ৯৫.২৩। পেস বোলিং অলরাউন্ডার সাইফউদ্দীন চার খেলায় করেছেন ৩৮, সর্বোচ্চ ২৬, স্ট্রাইকরেট ১২৬.৬৬।
এআরবি/এসএএস/জেআইএম