প্রবাস

মিয়ানমারে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত চায় ১৪২টি দেশ

মিয়ানমারে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত চেয়েছে জাতিসংঘের ১৪২টি দেশ। একটি নিরপেক্ষ মেকানিজম প্রতিষ্ঠার দ্রুত তাগিদ দিয়ে প্রস্তাব পাস হয়েছে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের তৃতীয় কমিটিতে।

Advertisement

সম্প্রতি এ বিষয়ে ভোট হয়। ১৪২টি দেশ এই প্রস্তাব সমর্থন করে, ১০টি দেশ বিরোধিতা এবং ২৬টি দেশ ভোট দানে বিরত থাকে। থার্ড কমিটির রেজ্যুলেশনটি ৯৯টি দেশ কো-স্পন্সর করছে।

গত বছরেও থার্ড কমিটিতে রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি রেজ্যুলেশন পাস হয়। ওই রেজ্যুলেশনটিও ৯৭টি দেশ কো-স্পন্সর করেছিল।

রেজ্যুলেশনে বলা হয়েছে, রাখাইনে মুসলিমরা মিয়ানমারের স্বাধীনতার পূর্বেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বসবাস করছে। ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন পুনর্বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব প্রদানের আহ্বান জানিয়ে মিয়ানমার সরকারকে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের ওপর যারা অত্যাচার করেছে, তাদেরকে বিচারের আওতায় আনার জন্য।

Advertisement

বর্তমান রেজ্যুলেশনে মিয়ানমারে মানবাধিকার লংঘন তদন্তের জন্য দ্রুততার সঙ্গে নিরপেক্ষ মেকানিজম প্রতিষ্ঠার ওপরে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের মিলিটারির ওপরে যেন বেসামরিক সরকারের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।

রাখাইনে সামরিক অভিযানের কারণে নিয়মতান্ত্রিকভাবে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লংঘন করা হচ্ছে এবং মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানানো হয়, এই অভিযান বন্ধের এবং এর জন্য যারা দোষী তাদেরকে বিচারের আওতায় আনার জন্য।

আরও বলা হয়, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা যেন নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে রাখাইনে ফেরত যেতে পারে এবং রাখাইনে যেন জাতিসংঘসহ অন্যান্য সাহায্য সংস্থা কাজ করতে পারে।

রেজ্যুলেশনে জাতিসংঘের মহাসচিবকে ‘মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত’ নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রশংসা করে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ যেন মিয়ানমারকে সহায়তার প্রস্তাব করে।

Advertisement

এ ছাড়া, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনসহ সব সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সহযোগিতাকে উৎসাহিত করা হয়েছে।

রাখাইনে সহিংসতা বন্ধ, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন, নাগরিকত্ব প্রদান, কফি আনান কমিশন রিপোর্টের পূর্ণ বাস্তবায়ন, রোহিঙ্গাদের নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তনসহ বিভিন্ন বিষয় এই রেজ্যুলেশন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এ ছাড়া, রোহিঙ্গাদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দ্রুত যাচাই-বাছাই করে ফেরত নেওয়ার জন্য এবং এ বিষয়টিও এই রেজ্যুলেশনে উল্লেখ আছে।

রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর মধ্যে অস্থিতিশীল ও নিরাপত্তাহীনতা পরিস্থিতি যাতে করে সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবারও আহ্বান জানানো হয়েছে।

এর আগে ২০১৫ সালে অং সান সুচি সরকার গঠনের আগে একই শিরোনামে ‘মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক একটি রেজ্যুলেশন গৃহীত হয়। সেখানে মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও গণতান্ত্রিক পরিবেশের ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল। সেই রেজ্যুলেশনে ১৯টি প্যারার মধ্যে রোহিঙ্গা বিষয়ে শুধুমাত্র একটি প্যারা ছিল।

২০১৭ এর রেজ্যুলেশন

গত বছরের রেজ্যুলেশনে ৯৭টি দেশ কোস্পনসর ছিল। এ ছাড়া, অনেক দেশ আছে, যারা কো-স্পনসর হয়নি, তারা এর পক্ষে ভোট দিয়েছে।

এই রেজ্যুলেশনের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল চীন, রাশিয়াসহ ১০টি দেশ এবং কোনও ভোট দেয়নি ভারত, ইন্দোনেশিয়াসহ ২৬টি দেশ। এর পক্ষে ভোট দিয়েছিল ১৩৫টি দেশ।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আনা রেজ্যুলেশনটির পক্ষে ১০৪টি দেশ ভোট দেয়, ১৩টি দেশ বিপক্ষে এবং বাংলাদেশসহ ৩৭ জন কোনও ভোট দেয়নি।

২০১৫ সালের রেজ্যুলেশনের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল চীন, রাশিয়া, ইরান, উজবেকিস্থানসহ ১৩টি দেশ এবং কোনও ভোট দেয়নি ভারত, ইন্দোনেশিয়াসহ ৩৭টি দেশ। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইনে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর জাতিগত নিধন অভিযান শুরু হলে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

এমআরএম