সাইক্লোন সিডরে নিখোঁজ হওয়ার ১১ বছর পর বাড়ি ফিরে এসেছেন বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার জেলে শহিদুল মোল্লা (৪৮)।
Advertisement
গত ১১ বছরে পরিবারের সদস্যরা তার বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। হঠাৎ দুইদিন আগে বাগেরহাটের শরণখোলার আমড়াগাছিয়া বাজারে পাগল বেশে ঘুরতে দেখে তাকে শনাক্ত করেন পরিবারের লোকজন। সরকারিভাবে সিডরে নিখোঁজ তালিকায় থাকা শহিদুলকে ১১ বছর পর ফিরে পেয়ে পরিবারে বইছে আনন্দের বন্যা।
শহিদুলের বড় বোন মঞ্জু বেগম বলেন, দুইদিন আগে পরিচিত একজনের মাধ্যমে খবর পাই আমড়াগাছিয়া বাজারে শহিদুলের মতো দেখতে এক পাগল ঘোরাফেরা করছে। তখন ছুটে যাই সেখানে। গিয়ে দেখি বাসস্ট্যান্ডের যাত্রী ছাউনিতে ঘুমিয়ে আছে শহিদুল।
তার কপালের বাম পাশে কাটা দাগ, হাতের আঙুলে বড়শি ঢুকে ক্ষত হয়েছিল। এসবের মিল দেখে শনাক্ত করি ভাইকে। সেখান থেকে উদ্ধার করে বাড়িতে এনে তার পাগল বেশে থাকা লম্বা চুল, দাড়ি কেটে সিডরে হারিয়ে যাওয়া শহিদুলকে আবিষ্কার করি। বর্তমানে শহিদুল মানসিক ভারসাম্যহীন। তাকে সেবা দেয়া হচ্ছে। তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। কিন্তু টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা করানো পরিবারের পক্ষে অসম্ভব। তাই ভাইয়ের চিকিৎসায় সবার সহযোগিতা চাই।
Advertisement
জানা যায়, শরণখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া গ্রামের ফুলমিয়া মোল্লার ছেলে শহিদুল তার ভগ্নিপতি পান্না ফরাজীর নৌকা নিয়ে সিডরের তিনদিন আগে শরণখোলা রেঞ্জের ছাপড়াখালী এলাকায় মাছ ধরতে যান। তার নৌকায় ছিলেন- মাসুম, ছিদ্দিক, সেলিমসহ আরও তিন জেলে।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সুপার সাইক্লোন সিডরের আঘাতে তারা সবাই বঙ্গোপসাগরে ভেসে যান। তার বাবা ফুলমিয়া ছিলেন অন্য মৎস্য ব্যবসায়ী ইউনুস শিকদারের নৌকায়। আজও তার খোঁজ মেলেনি।
রোববার দুপুরে কথা হয় রায়েন্দা বাজারে ভগ্নিপতি পান্না ফরাজীর বাড়িতে থাকা মানসিক ভারসাম্যহীন শহিদুলের সঙ্গে। সিডরের কথা আজ তার স্মরণ নেই। বলছেন, থেমে থেমে কথা। সিডরে কোথায় ছিলেন, কী ঘটেছিল তাও বলতে পারছেন না শহিদুল।
অনেকক্ষণ কথার বলার চেষ্টা করে জানা গেল, ভারতের পাটগ্রাম নামক এলাকায় রশিদ খানের বাড়িতে থাকতেন শহিদুল। সেখানে গরু রাখা আর বাড়ির কাজ করতেন। এরপর সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। পাগল হওয়ায় সীমান্তে তাকে কেউ আটকায়নি।
Advertisement
পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামীকে হারিয়ে চার সন্তান নিয়ে দুর্বিসহ অবস্থায় পড়েন স্ত্রী মাসুমা বেগম। তিনি চার সন্তানের কথা ভেবে চার বছর আগে কাজের সন্ধানে চলে যান ভারতে। অভাবের সংসারে অল্প বয়সেই বিয়ে হয়ে গেছে মেয়ে পুতুল (২০) ও মুকুলের (১৮)। ছেলে মাসুম (১৭) পড়ালেখা করছে। স্কুলে পড়া ছোট ছেলে ১১ বছর বয়সী মাসুদ সিডরের সময় ছিল মায়ের গর্ভে।
স্বামী ফিরে আসার খবর মোবাইলে শুনে খুশিতে আত্মহারা স্ত্রী মাসুমা বেগম বলেন, দু-একদিনের মধ্যেই ভারত থেকে বাড়ি ফিরে আসব।
শওকত আলী বাবু/এএম/জেআইএম