কুড়িগ্রামের চিলমারী হাসপাতালে প্রায় দু’বছর ধরে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ময়না বেগম। জটিল কুশিন সিনড্রোম রোগে ভুগছেন তিনি। বর্তমানে তার শরীরে পঁচন ধরে মাংস খসে খসে পড়ছে। দুর্গন্ধে তার পাশে যেতে পারছেন না কেউ। এ কারণে তার স্বজনরাও হাল ছেড়ে দিয়েছে। হাসপাতালে এখন দেখতেও আসছে না কেউ। অসহায় এই নারী এখন হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।
Advertisement
ভালো কোনো হাসপাতালে তার উন্নত চিকিৎসা করা গেলে বাঁচতেও পারে উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের গয়নার পটল চরের এই গৃহবধূ।
চিলমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মোস্তারী বেগম জানান, এ হাসপাতালে ময়না বেগমের রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। তাকে রংপুর অথবা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে পারলে তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। কিন্তু রোগীর স্বজনরা এতই গরিব যে তাকে নিয়ে যেতেও পারছে না। দুই বছর ধরে তিনি এখানে রয়েছেন। আমরা কিছু টাকা তুলে তার চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি। তার স্বজনরা এখন হাল ছেড়ে দিয়ে খোঁজ-খবরও নিচ্ছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় ময়না বেগমের পরিবারের করুণ কাহিনী। প্রায় দুই বছর পূর্বে তার স্বামী তারেক রহমান ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। দুই সন্তানের মধ্যে ছোট ছেলে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। মেয়েটির বিয়ে দেয়া হয়েছে। স্বামী সন্তান নিয়ে ভালোই চলছিল তার সংসার। কিন্তু স্বামী অসুস্থ হওয়ায় তার চিকিৎসার পেছনে সহায়-সম্বল বিক্রি করে দিতে হয়। তাকে বাঁচানো না গেলেও ব্রহ্মপূত্রের করাল গ্রাস থেকে শেষ সম্বল বাড়িটিও রক্ষা করতে পারেনি তারা।
Advertisement
এক দিকে স্বামীর মৃত্যু, অপরদিকে ভাঙনে নিঃস্ব ময়না বেগম যখন অথৈ সাগরে ভাসছিল তখন তার দিনমজুর ভাই আব্দুল গফুর ময়নাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। এসময় অসুস্থ ময়না বেগমের চিকিৎসার ভার নেন তার মেয়ে জামাই। শাশুড়ির পেছনে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে জামাইও নিঃস্ব হয়ে পড়েন। কারণ প্রতিদিন প্রায় এক হাজার টাকার ওষুধ লাগে ময়না বেগমের জন্য। অর্থ সংকটের কারণে এখন ময়না বেগমের কাছে ভিড়ছে না কেউই।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা ময়না বেগম এই প্রতিবেদকের দিকে তাকিয়ে থেকে বলেন, এই কষ্ট আর সহ্য হয় না। আল্লাহ আমাকে নিয়ে গেলেই বাঁচি। দুর্গন্ধে আমার কাছে কেউ এখন আসতে চায় না। দু’বছর ধরে এই হাসপাতালই আমার ঘর-সংসার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নাজমুল/এমএএস/পিআর
Advertisement