ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকার মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪৭ কোটি টাকা। অথচ অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর হঠাৎ করেই রাজধানীতে বেড়েছে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ। ফলে মশক নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্পোরেশনের কার্যকরী ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজধানীবাসী।
Advertisement
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগস্ট মাসে আক্রান্ত ১৬৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৬ জন। বাজেটে এত বরাদ্দ তবুও মশক নিধনে এবং রাজধানীতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে দুই সিটি কর্পোরেশনের তাহলে কী করছে এমন প্রশ্ন ঢাকাবাসীর।
২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বাজেটের রাজস্ব ব্যয়সহ অন্যান্য উন্নয়ন ব্যয় অংশের হিসাবে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন অন্যান্য খাতের পাশাপাশি মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে (মনিটরিং-সার্ভাইলেন্স) ব্যয় হবে ২১ কোটি টাকা। চলতি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ কোটি টাকা। এর মধ্যে মশকনিধন ওষুধ কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ কোটি টাকা। ফগার, হুইল, স্প্রে মেশিন পরিবহনে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি টাকা। এ ছাড়া কচুরিপানা, আগাছা পরিষ্কার ও পরিচর্যা ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি টাকা।
অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশরেন চলতি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬ কোটি টাকা। এরমধ্যে মশকনিধন ওষুধ কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ফগার, হুইল, স্প্রে মেশিন পরিবহনে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি টাকা। এ ছাড়া কচুরিপানা, আগাছা পরিষ্কার ও পরিচর্যা ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা।
Advertisement
রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা মিজানুর রহমান মিজু। পেশায় একজন ব্যাবসায়ী। কিন্তু কয়েক দিন ধরে ছোট ভাই তুহিনের ডেঙ্গু ধরা পড়ায় সমস্ত কাজকর্ম বাদ দিয়ে তাকেই সময় দিচ্ছেন। মিজানুর রহমান বলেন,অন্য বছরের তুলনায় এ বছর রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেশি দেখা যাচ্ছে। প্রায় বাড়িতেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী আছে। মশকনিধনের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের তাহলে তারা কী করছে যে, রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
দুই সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, এডিস মশার লার্ভা ও প্রজননস্থল ধ্বংস করতে গত ২৫ জুন ডিএসসিসির ৫৭টি ওয়ার্ডে একযোগে ‘বিশেষ কর্মসূচি’ শুরু করে। দুই দফায় ওই কর্মসূচির আওতায় ৩৩ হাজার ৫০৮টি বাড়িতে গিয়ে এডিস মশার লার্ভা ও প্রজননস্থল ধ্বংস করার পাশাপাশি সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। এ ছাড়া এডিস মশা ধ্বংস করতে তৃতীয় ধাপে গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ‘বিশেষ ক্র্যাশ কর্মসূচি’ চালু করে ডিএসসিসি।
সেই ক্র্যাশ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেয়র সাঈদ খোকন ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার কথা স্বীকার করে বলেন, বিগত ২-৩ বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গুর প্রবণতা বেড়েছে। গতবছর চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব বেশি ছিল। আমরা তা নিয়ন্ত্রণ করেছি। এ বছর চিকুনগুনিয়া নেই। হাসপাতাল, গণমাধ্যম ও আমাদের কর্মীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এবার কিছুটা ডেঙ্গুর প্রবণতা বেড়েছে।
অন্যদিকে ডিএনসিসি গত ৪ আগস্ট মশা নিয়ন্ত্রণের ‘বিশেষ কর্মসূচি’ হাতে নেয়। সেই কর্মসূচি চলে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত। ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ দেখে গত ৯ সেপ্টেম্বর আবার সেটি চালু করে ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ।
Advertisement
রাজধানীর মুগদার বাসিন্দা মাইদুল ইসলাম বলেন, চারদিকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর খবর শুনতে শুনতে আমরা নিজেরাই ভীত। এ বিষয়ে নিজেরাই যথেষ্ট সচেতনতা অবলম্বন করছি। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে মশক নিধন কর্মীদের দেখা মিলে না। মশকনিধনে সিটি কর্পোরেশন ব্যাপক কার্যক্রম চালাচ্ছে এমন খবর পত্রিকায় দেখা যায়; বাস্তবে কিন্তু মশকনিধন কর্মীদের দেখাই মেলে না। রাজধানীতে যেভাবে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে তাতে সিটি কর্পোরেশনের উচিত মশকনিধন কার্যক্রম আরো জোরদার করা। পাশাপাশি ব্যাপকভাবে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা।
মশকনিধন কার্যক্রম নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শেখ সালাহ উদ্দিন বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ মোকাবেলায় আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। সেই সঙ্গে এটা মোকাবেলায় জনসচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।
ডেঙ্গুর বিষয়ে বলতে গিয়ে সেন্ট্রাল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ড. আতিয়া বেগম জানান, এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা আগের চেয়ে প্রায় চারগুণ বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। রোগীদের অনেকে ডেঙ্গুর সঙ্গে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত থাকায় তাদের সুস্থ হতে সময় লাগছে।
এএস/এনডিএস/পিআর