খেলাধুলা

দুই যুগ আগের ‘আন্ডারডগ’ বাংলাদেশ এবার ফেবারিট

দেখতে দেখতে বয়ে গেল সময়, এসে গেল এশিয়া কাপ। এশিয়ান ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণের লড়াই শুরু আর মাত্র ৭২ ঘণ্টা পরে। ১৫ সেপ্টেম্বর দুবাইতে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের শ্রীলংকার বিপক্ষে মাঠে নামবে মাশরাফির বাংলাদেশ। সময়ে কত কিছুই না বদলে যায়!

Advertisement

একসময় এই এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ছিল আন্ডারডগ। ১৯৯৫ সালে আরব আমিরাতের মাটিতে শেষবারের মতো যে এশিয়া কাপের আসর বসেছিল সেখানে বাংলাদেশ ছিল শুধুই অংশ নেয়া একটি দল। তিন ম্যাচের সবক’টিতেই হেরেছিল বাংলাদেশ।

২৩ বছর পর সেই আরব আমিরাতে আবার ক্রিকেট মেলা। প্রায় দুই যুগ আগে হওয়া আসরের সাথে এবারের আসরে মৌলিক পার্থক্য আসলে দুটি। প্রথম পার্থক্য ভেন্যুর রদবদল, আগে খেলা হতো তখনকার আলোচিত-আলোড়িত ভেন্যু শারজায়। আর এবার হবে কসমোপলিটন শহর দুবাই ও আবুধাবিতে।

আসল পার্থক্য অন্য জায়গায়। তখনকার ‘চুনোপুঁটি’ বাংলাদেশ এখন আর আন্ডারডগ নেই। টাইগারদের গায়ে এখন ফেবারিটের তকমা লেগে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে এশিয়ার ক্রিকেটে অন্যতম সেরা শক্তি মাশরাফিরা। গত তিন আসরের দুইবারের ফাইনালিস্ট বাংলাদেশ। যদিও দুটি আসরই ছিলো ঘরের মাটিতে।

Advertisement

তাতে কি? প্রতিপক্ষ তো ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানই। পূর্ণশক্তির সাবেক তিন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে লড়েই ২০১২ সালে পঞ্চাশ ওভারের ফরম্যাটে ও ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ফাইনাল খেলেছিল টাইগাররা। এবার তাই ফাইনালের সম্ভাব্য ভাগীদার মাশরাফির দল। শুধু যে এর, ওর মুখেই বাংলাদেশ ফেবারিট শোনা যাচ্ছে, এমন নয়। টাইগাররাও ভেতরে ভেতরে নিজেদের সম্ভাব্য ফাইনালিষ্ট ভাবছেন। প্র্যাকটিস শুরুর পর বিভিন্ন সময় মিডিয়ার সাথে আলাপে বাংলাদেশের বেশির ভাগ ক্রিকেটারের কথা বার্তা ও শরীরী অভিব্যক্তিতে ফুটে উঠেছে, তারা নিজেদের সম্ভাব্য ফাইনালিষ্ট মনে করছেন এবং ফাইনাল খেলাকে লক্ষ্য ও পরিকল্পনা মানছেন।

সেটা আকাশ কুসুম কল্পনাও নয়। অতীতে প্রমান হয়েছে এশিয়া মহাদেশের যে কোন ক্রিকেট আসরে ফাইনাল খেলার পর্যাপ্ত সামর্থ্য আছে বাংলাদেশের। সোনা যেমন পুড়ে পুড়ে খাটি হয়, তেমনি আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে দীর্ঘ দিন খেলে খেলে নিজেদের হাত পাকিয়ে ফেলেছেন মাশরাফি, তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহরা। সে তুলনায় তারুণ্যের ঝলকানি ততটা না হলেও মোস্তাফিজ ও রুবেলের মত কার্যকর ফাস্ট বোলার উঠে এসে দলকে আরও সমৃদ্ধ করেছেন। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি এখন বোলিং শক্তিও আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশী।

সব মিলিয়ে এখন দল হিসেবে বাংলাদেশ অনেক সুবিন্যস্ত, ব্যালেন্সড। যে দলের অন্তত চার পাঁচ জন ক্রিকেটার আছেন, যারা নিজেদের দিনে একাই ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন। বলার অপেক্ষা রাখেনা মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহই হলেন ঐ পাঁচ ম্যাচ উইনার। যাদের সামর্থ্য প্রমানিত। তামিম, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর বিশ্বস্ত ব্যাট, অধিনায়ক ও পেসার মাশরাফি আর অলরাউন্ডার সাকিব এশিয়ার অপর দলগুলোর বিপক্ষে যে কোন কন্ডিশনে ম্যাচ জেতাতে পারেন। অতীতে জিতিয়ে দেখিয়েছেন।

বড় দলকে হারাতে কি কি দরকার তা ঐ ‘পঞ্চ পান্ডবের’ খুব ভালই জানা। তাদের পাশাপাশি লিটন দাস প্রতিশ্রুতির ছাপ রেখেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজে। এর বাইরে বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজও ইনজুরি এবং অপারেশনের ধকল কাটিয়ে আবার নিজেকে ফিরে পেয়েছেন। এখন দরকার তরুণদের জ্বলে ওঠা। লিটন দাস, মোহাম্মদ মিঠুন, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মুমিনুল হক এবং আবু হায়দার রনিরা সময় মত নিজেদের মেলে ধরতে পারলে অবশ্যই বাংলাদেশের পক্ষে ফাইনাল খেলা সম্ভব।

Advertisement

যদিও কেউ কেউ হয়ত বলবেন, নিদাহাস ট্রফিতে তো অর্ধেক শক্তির ভারতের সাথেই পারেনি বাংলাদেশ, এবার বিরাট কোহলি না থাকলেও নিদাহসি ট্রফির চেয়ে অনেক বেশী শক্তিশালী লাইন আপ ভারতের। সময়ের সেরা ও কার্যকর ওয়ানডে স্পেশালিষ্টদের প্রায় সবাই আছেন। কাজেই ভারত সন্দেহাতীতভাবে টপ ফেবারিট। সীমিত ওভারের ফরম্যাটে নিজেদের গুছিয়ে নেয়া পাকিস্তান এখন অন্যরকম দল। আগের মত বিশ্ব তারকা নেই একজনও। কিন্তু ক্রিকেটীয় পরিভাষায় ‘ইউটিলিটি’ পারফরমার আছেন বেশ কজন। সবচেয়ে বড় কথা, তাদের বড় অংশ ফর্মের চুরোয়।

সেই দলের সাথে কি বাংলাদেশ কুলিয়ে উঠতে পারবে? ফাখর জামান, বাবর আজম, শোয়েব মালিক, অধিনায়ক সরফারাজ, পেসার মোহাম্মদ আমির, হাসান আলি আর লেগস্পিনার শাদাব খানরা বয়সে তরুণ হলেও সামর্থ্যে কমতি নেই।

শ্রীলঙ্কাও এবার একটু অন্যরকম দল। দলটির অন্যতম চালিকাশক্তি দারুণ কার্যকর অলরাউন্ডার অ্যাঞ্জোলো ম্যাথিউস ফিরে এসেছেন। যার বাংলাদেশের বিপক্ষে ট্র্যাক রেকর্ড বেশ ভাল। এছাড়া সময়ের আলোচিত লেগস্পিনার রশিদ খানের আফগানিস্তানও প্রতিপক্ষ হিসেবে দূর্বল নয়।

এইতো গত জুনে ভারতের দেরাদুনে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশ পাত্তাই পায়নি। কাজেই প্রতিপক্ষ একটিও কম জোর নয়। বরং কাগজে কলমে শক্তির তুলনা করতে গেলে ভারত ও পাকিস্তানকে এগিয়েই রাখতে হবে। শ্রীলঙ্কা আর আফগানিস্তানকেও দূর্বল ভাবার কোনই অবকাশ নেই। ঐ দল দুটির শক্তি ও সামর্থ্যও প্রায় কাছাকাছি। তাই ফাইনাল খেলতে ও লক্ষ্য পূরনে টাইগারদের পাড়ি দিতে হবে কঠিন পথ।

দেশ ছাড়ার আগে অধিনায়ক মাশরাফি কিন্তু একবারও নিজেদের ফেবারিট দাবি করেননি। বরং পরিষ্কার বলে গেছেন, ‘ভারত আসরের সেরা দল। শক্তিতে আমাদের চেয়ে ঢের এগিয়ে। পাকিস্তানও ভাল দল। তারাই ফেবারিট। তবে আমাদের সামর্থ আছে ঐ দুই দলকে হারাবার। আমাদের শক্তি ও সামর্থ্য আছে। তবে দরকার জায়গামত পারফর্ম করা। সামর্থ্যের সেরাটা উপহার দেয়া।’

এখন সেই কাজটি করার ওপরই নির্ভর করবে লক্ষ্য পুরণ হবে কি, হবেনা।

এআরবি/এসএএস/আরআইপি