সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের (সাফ) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর নিজ দলের হাতে ট্রফি তুলে দিতে পারেননি কাজী মো. সালাউদ্দিন। এ আক্ষেপটা ঘোচাতে দ্বাদশ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের আগে জাতীয় দলের প্রস্তুতিতে যথাসম্ভব সব কিছুই করেছেন তিনি। দুই দুইবার কাতার, দক্ষিণ কোরিয়া এবং এশিয়ান গেমসে পুরো দলকে পাঠানো- সব কিছুই ছিল সাফে ভালো করার লক্ষ্য নিয়ে; কিন্তু বাফুফে সভাপতির সে স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে। ঘরের মাঠে দর্শক হয়ে গেছে তার দল।
Advertisement
সব কিছুই ঠিক ছিল। জাতীয় দলের পেছনে বাফুফের যে পরিশ্রম ও বিনিয়োগ- তার ফল ঠিকই এসেছে এশিয়ান গেমেস। প্রথমবারের মতো এশিয়ার সবচেয়ে বড় এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতার শেষ ষোলোতে উঠে রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। এশিয়াডের পারফরম্যান্স ফুটবল নিয়ে নতুন আশার ঢেউ উঠে দেশে। ফুটবলামোদীদের প্রত্যাশা ছিল ফুটবল দল এবার সাফের ফাইনাল খেলবে।
কিন্তু দল নির্বাচনে কিছু ভুল সিদ্ধান্ত ভেঙ্গে দিয়েছে সব স্বপ্ন। আবাহনীর গোলরক্ষক শহিদুল আলম সোহেলের হাস্যকর গোল হজমে হতভম্ব পুরো জাতি। হতাশাটা বেশি ছুঁয়ে গেছে দেশের ফুটবলের শীর্ষ ব্যক্তি কাজী মো. সালাউদ্দিনকে। সোহেলের ওই গোল হজমের পর ক্ষোভে-দুঃখে স্টেডিয়াম ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন বাফুফে সভাপতি। হারের পর মঙ্গলবারই প্রথম পা রাখলেন মতিঝিলের বাফুফে ভবেন। তার প্রতিক্রিয়া নিতে মিডিয়াকর্মীদের দীর্ঘ অপেক্ষা।
ফিফার একটি প্রতিনিধি দল এখন ঢাকা সফর করছেন। তাদের সঙ্গে সভা শেষ করে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেন কাজী মো. সালাউদ্দিন। শুরুতেই বললেন, ‘এমন হারে সবার মতো আমিও দুঃখিত। আমি একটি বেশিই কষ্ট পেয়েছি। কারণ, এই দলটির পেছনে আমাদের অনেক পরিশ্রম ও বিনিয়োগ হয়েছে। তবে ফুটবলে এমনটি হতেই পারে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের ক্ষেত্রেই বারবার এটা ঘটে।’
Advertisement
ঘুরেফিরে মিডিয়ার প্রশ্ন ছিল গোলরক্ষক শহিদুল আলম সোহেল কেন্দ্রীক। কারণ, বাংলাদেশকে হারিয়ে দেয়া এই গোলরক্ষক ক্যাম্পেই ছিলেন না। হঠাৎ করে ঢুকে গেছেন জাতীয় দলে। তাও আবার কোচ খেলিয়েছেন একাদশে। আবাহনীর কর্মকর্তা সত্যজিৎ দাস রুপু জাতীয় দলের ম্যানেজার। বাফুফের জাতীয় দল পরিচালনাকারী ‘ন্যাশনাল টিমস কমিটি’র প্রধান আবাহনীর ভারপ্রাপ্ত ডাইরেক্টর ইনচার্জ কাজি নাবিল আহমেদ।
দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে দর্শকরা আঙ্গুল তুলছেন টিম ম্যানেজমেন্টর দিকে। আবাহনীর খেলোয়াড় হওয়ায় সোহেলকে একাদশে খেলানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে। দাবি উঠেছে জাতীয় দলে ক্লাববলয়ের বাইরে থেকে ম্যানেজার নিয়োগের।
বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ শুরু হবে ১ অক্টোবর। জাতির জনকের নামের এই টুর্নামেন্টের আগে বেতনভূক্ত ম্যানেজার দেখা যাবে কি না- এমন এক প্রশ্নের জবাবে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বলেছেন, ‘এখনই কোনো সিদ্ধান্ত দিচ্ছি না। আমি সবার সব কথা শুনলাম। কেন এবং কাদের গাফেলতিতে এমন হলো সেটা আমি খতিয়ে দেখা শুরু করেছি ইতিমধ্যে। কোচ ছুটি কাটিয়ে ফিরলে তার সঙ্গে কথা বলবো। আশা করি, ৪/৫ দিনের মধ্যে সব কিছু বলতে পারবো।’
সভাপতি টিম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে সরাসরি কিছু না বললেও বাফুফের নির্বাহী কমিটির মধ্যে ন্যাশনাল টিম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে ক্ষোভ দানা বেধে উঠছে। কারণ, এই কমিটির অধীনে একের পর এক সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপ থেকে বিদায় নিচ্ছে বাংলাদেশ। অথচ অন্য কমিটিগুলোর অধীনে ভালো পারফরম্যান্স করছে ছেলে ও মেয়েদের বয়সভিত্তিক দলগুলো।
Advertisement
বাফুফেতে এ উপলব্ধি তৈরি হয়েছে যে, ক্লাবের সঙ্গে সরাসরি জড়িতদের জাতীয় দলের দায়িত্ব দিলে সঠিক দল তৈরির সম্ভবনা নেই। যে কারণে, জাতীয় দলের ম্যানেজার হিসেবে নিরপেক্ষ বেতনভূক্ত কাউকে নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি জোরালোভাবে আলোচনায় আসছে। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে জাতীয় দলের ডাগআউটে নতুন ম্যানেজার দেখা যেতে পারে।
আরআই/আইএইচএস/এমএস