সূর্যের প্রচণ্ড তাপ। টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন মা মরিয়ম জাহান। পাশেই দাঁড়িয়ে ছেলে সাফায়াত। মা’কে বারবার সে বলছিল, ‘মা আর কতক্ষণ? সন্ধ্যার মধ্যে নানু বাড়িয়ে যেতে হবে। নানা-নানু অপেক্ষা করছে। কাজিনরাও অপেক্ষায় করছে।’
Advertisement
শনিবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে এনা পরিবহনের কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে মাকে এসব কথা বলছিল সাফায়াত। কোন শ্রেণিতে পড়াশোনা করো? জিজ্ঞাসা করতেই উত্তর, ক্লাস ফোরে। সাফায়াত জানায়, গত দু‘দিন আগে নানু বাড়ি যাওয়ার কথা। কেনাকাটার ব্যস্ততা শেষই হচ্ছিল না। যে কারণে দেরি। আজ (শনিবার) মহাখালী এসে টিকিট করা হলো। এখন যাওয়ার পালা।
সাফাতের দাদা ও নানার বাড়ি একই শহরে। সাফায়াত বলে, ‘নানু বাড়ি ময়মনসিংহ শহরে। শহরের অপর প্রান্তে দাদার বাড়ি। ঈদের তাই মজাই আলাদা। বেশি সময় লাগে না, আধা ঘণ্টার মধ্যেই নানু বাড়ি থেকে দাদা বাড়িতে যেতে পারব। এক সাথে দুই জায়গাতে ঈদ করব। দেরি সইছে না, কতক্ষণে যেতে পারব।
টিকিট কাটা শেষে মা মরিয়ম জাহান জাগো নিউজকে বলেন, সাফায়াতের বাবা আজহারুল আমিন সরকারি কর্মকর্তা। থাকেন সাভারে। ছেলের পড়াশোনার জন্যই আমাদের ঢাকায় থাকতে হয়। ঈদ আসলে সাফায়াত অস্থির হয়ে যায়। নানা বাড়ি, দাদার বাড়িতে যাওয়ার মজাটাই যেন ওর সব। বাপের দেশে যাচ্ছি, আমারও ভালো লাগছে।
Advertisement
শনিবার দুপুরে রাজধানীর মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল সরেজমিনে দেখা যায়, ২২ আগস্ট ঈদুল আজহা উপলক্ষে নাড়ির টানে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। সঠিক সময়েই ছেড়ে যাচ্ছে দূরপাল্লার বাস। টার্মিনালে ঢুকতেই এনা পরিবহনের কাউন্টার। সেখানে দীর্ঘ লাইন। পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কিনছেন যাত্রীরা।
মহাখালী বাস টার্মিনালের পরিবহনের টিকিট কাউন্টারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৫টা থেকে বিভিন্ন কোম্পানির বাস নির্ধারিত সময়েই ছেড়ে যাচ্ছে। বেশির ভাগ বাস কোম্পানি ঈদের প্রস্তুতি হিসেবে টার্মিনালে আগে থেকেই বাস জমা রাখায় সময়ের হেরফের হচ্ছে না। সড়কে যানজট না থাকায় নির্ধারিত সময়েই ঈদযাত্রার সব বাস কাউন্টার ছেড়ে যেতে পারছে।
ঈগল পরিবহনে যাত্রী শামসুর রহমান বলেন, এবার তুলনামূলক শৃঙ্খল মনে হচ্ছে মহাখালী বাস টার্মিনাল। পুলিশ ও টার্মিনালের কর্মীরা তৎপর। বাস সিরিয়াল মেনে বেড়িয়ে যাচ্ছে। বাসে উঠতে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে না।
সিয়াম এন্টারপ্রাইজের টিকিট বিক্রেতা আলী হোসেন বলেন, এবার আগেভাগেই বাস মালিক সমিতির নির্দেশনা ছিল, যত্রতত্র বাস পার্কিং করা যাবে না। রাস্তায় দাঁড়ানো যাবে না। টার্মিনাল থেকেই ঈদ যাত্রীদের তুলে নিয়ে গন্তব্যে রওয়ানা হতে হবে। যে কারণে টিকিট বিক্রির সময়ই যাত্রীদের অনুরোধ করা হয়েছে যথা সময়েই কাউন্টারে উপস্থিত হতে। এখন পর্যন্ত বাস যথাসময়েই ছাড়ছে।
Advertisement
এনা পরিবহন কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা মাহবুব আলম বলেন, যাত্রীদের সেবায় আমাদের পরিবহনের অতিরিক্ত বাস নামানো হয়েছে। যারা টিকিট পাননি তারাও টিকিট পাচ্ছেন। কাউন্টারে এসে টিকিটি নিয়েও অনেকে বাসে উঠছেন। যাত্রীদের বিষয়টি বিবেচনায় মহাখালী টার্মিনালের বসার সুব্যস্থা করা হয়েছে।
ইকোনো এক্সক্লুসিভ পরিবহন কাউন্টারের সামনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যাত্রী মিন্টু বলেন, টিকিট পেতে প্রতিবার ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কিন্তু এবার কাউন্টারে ভিড় কম। আসার ১৫ মিনিটেই টিকিট পেলাম। দুইটার বাসে বাড়ি যাচ্ছি।
ডিএমপির ট্রাফিক উত্তরের মহাখালী জোনের সহকারী কমিশনার আশরাফ উল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, এবার যাতে কোনোভাবে বিশৃঙ্খলা তৈরি না হয় সেজন্য যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে অতিরিক্ত পুলিশ ও আনসার সদস্যরা কাজ করছেন। আমরা আগেভাগেই বাস মালিক শ্রমিকদের অনুরোধ করেছি যাত্রীদের সুবিধায় যেন যথাসময়ের বাস রেড়ি রাখা হয়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে যেন যাত্রী তোলা না হয়। এখন পর্যন্ত সব সুষ্ঠুভাবে চলছে।
জেইউ/আরএস/আরআইপি