দেশজুড়ে

মাঝ শ্রাবণেও বৃষ্টি নেই, শঙ্কায় উত্তরের চাষিরা

‘শ্রাবণের ১২ ও ভাদ্র মাসের ১৩, এর মধ্যে যত পার আমন চারা গাড়ো।’ গ্রাম বাংলায় এই প্রবাদ বহু পুরনো। অধিক বৃষ্টির কারণে আমন ধানের চারা রোপণের এটাই সব থেকে মোক্ষম সময়। কিন্তু এবার শ্রাবণের ১২ তারিখ পার হলেও বৃষ্টির দেখা নেই। আকাশে মেঘের ভেলা ভেসে বেড়ালেও বৃষ্টি হচ্ছে না। আর মাঝে মাঝে যে বৃষ্টি হচ্ছে সেটাকে দিনাজপুরের কৃষকেরা ‘ছাগল তাড়ানো বৃষ্টি’ বলেই আখ্যায়িত করছেন। ফলে বৃষ্টির অভাবে শ্রাবন মাসে আবাদি জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে।

Advertisement

সদর উপজেলার খোদমাধবপুর গ্রামের কৃষক আমিনুল হক বলেন, ‘শ্রাবন মাস আসিলে পানিতে জমি থৈথৈ করে। কিন্তু এইবার জমি ফাটি গেইছে। এখনও পানির দেখা নাই। এভাবে যদি চলে তাহলে তো জমি পড়ি থাকিবে, আবাদ-সাবাদ করা যাবে নাই। বিচন যে গাড়িমো সেই পানিটাও দিবা হচে মেশিন দিয়া।’

বৃষ্টি না হওয়ায় আমন আবাদ নিয়ে এমন শঙ্কা শুধু আমিনুল হকের নয়, দিনাজপুর সদর উপজেলা, বিরল, কাহারোল ও বীরগঞ্জের চাষিদেরও।

আমিনুল হক জানান, তার ৪ বিঘা জমিতে আমন আবাদ হয়। এ জন্য প্রায় ২৫ শতক জমিতে বীজতলা তৈরি করেছেন। চারাও বড় হয়েছে। পানির অভাবে রোপণ করতে পারছেন না। এ বছরই শুধু নয়, কয়েক বছর ধরেই আবহাওয়া এমন বিড়ম্বনায় ফেলছে। মেশিনে সেচ দিয়ে চারা রোপণ করলে খরচ অনেক বেশি হয়ে যায়, বোরোর মতো আমনের ফলন হয় না। আর সে তুলনায় ধানের দামও পাওয়া যায় না।

Advertisement

দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শ্রাবনের মাঝামাঝি সময়ে এসেও জমিতে কোনো পানি নেই। প্রচণ্ড রোদে মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। আর যারা আগাম চাষ দিয়ে রেখেছেন, সেসব জমিতে কাদার পরিবর্তে ধুলা উড়ছে। ভরা বর্ষায়ও প্রচণ্ড রোদে পুড়ছে আবাদি জমি।

বিরল উপজেলার রবিপুর গ্রামের কৃষক মতিয়ার রহমান বলেন, আমন আবাদের জন্য জমিতে চাষ দিয়েছি। কিন্তু এক ফোটা পানিও নেই। এ অবস্থায় কীভাবে আমন রোপণ করব দুশ্চিন্তায় আছি।

মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা খরার কথা স্বীকার করে জানান, আমন রোপণের সময় চলছে। এ সময় বৃষ্টি দরকার। বৃষ্টির অভাবে জমিতে পানি নেই। এবার আমনের আবাদ ১৫ দিন পিছিয়ে যেতে পারে।

বিরল উপজেলার ১নং আজিমপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আফজাল হোসেন জানান, জমিতে পানি না থাকায় একদিকে যেমন আমন আবাদে বিলম্ব হচ্ছে অন্যদিকে উপকারও হচ্ছে। জমিতে পানি না থাকায় কৃষকদের আগাম চাষের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এতে জমির আগাছা দমন হবে এবং বৃষ্টি হলে চাষকৃত জমি উর্বর হবে। এতে কৃষকরা লাভবান হবেন বলে জানান তিনি।

Advertisement

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ তৌহিদ ইকবাল জানান, দিনাজপুরে চলতি আমন মৌসুমে ২ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমন রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য ইতোমধ্যেই ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে।

তীব্র খরার কারণে জমিতে পানি না থাকার কথা স্বীকার করে তিনি জানান, জুলাই থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত আমন রোপণের সময়। এখন আমন রোপণের উপযুক্ত সময় চলছে। তবে এ অঞ্চলের কৃষকরা আগস্ট মাসেই আমন চারা রোপণ করে থাকেন।

তিনি জানান, আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী এই মাসের শেষের দিকে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে বৃষ্টিপাত না হলে কৃষকদের বিকল্প উপায়ে সেচ দিয়ে জমিতে আমন রোপণের পরামর্শ দেয়া হবে। এ জন্য তারা প্রস্তুত।

অপরদিকে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বিএডিসিসহ (সেচ) কৃষকদের সেচযন্ত্র ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপরে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দিনাজপুরের সহকারী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম জানান, আমরা বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছি। যদি অল্প সময়ের মধ্যে বৃষ্টির দেখা না মেলে তাহলে বরেন্দ্র অঞ্চলে সম্পূরক সেচ শুরু করা হবে। ডিপ টিউবয়েলগুলো চালু করা হবে। এ জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

এমদাদুল হক মিলন/এফএ/এমএস