জাতীয়

‘খুন করে মানসিক ভারসাম্যহীন সাজার চেষ্টা করে উইংসন’

চট্টগ্রামের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগংয়ের (ইউএসটিসি) ভারতীয় শিক্ষার্থী মো. আতেফ শেখ (২৪) তার সহপাঠী ও একই দেশের নাগরিক মাইসনাম উইনসন শিংয়ের (২৪) হাতে খুন হয়েছেন। আতেফকে গলা কেটে খুন করে উইনসন নিজে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

Advertisement

ঘটনার এক বছর পর রোববার (২২ জুলাই) চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন শাখায় এ মামলার অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক (চট্টগ্রাম মেট্রো) সন্তোষ কুমার চাকমা।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী জাগো নিউজকে জানান, ভারতীয় শিক্ষার্থী মো. আতেফ শেখ হত্যা মামলায় একজনকে আসামি এবং ২৮ জনকে সাক্ষী করে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পিবিআই। অভিযোগপত্রটি চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আল ইমরানের আদালতে দাখিল করা হয়েছে।

নিহত আতেফ শেখ ভারতের মণিপুর রাজ্যের আবদুল হামিদ শেখের ছেলে। তিনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগংয়ের (ইউএসটিসি) এমবিবিএসের ছাত্র ছিলেন।

Advertisement

তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আতেফ শেখকে খুনের সময় ব্যবহৃত ছুরি, রক্ত ও চাদরের ডিএনএ পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা যায়, আতেফ শেখের বাইরে ভিন্ন একজনের ডিএনএ পাওয়া গেছে। তখন দুই প্রধান সন্দেহভাজন মাইসনাম উইনসন শিং ও গানঞ্জমাই নীরাজের ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় দেখা যায়, নিহতের ডিএনএর সঙ্গে মাইসনাম উইনসন শিংয়ের ডিএনএ মিলে যায়।’

তিনি বলেন, ‘যে রুমে আতেফ শেখ খুন হন, সেই রুমে আর কেউ ছিল না। সেই হিসেবে উইনসন হয় নিজে খুনি অথবা প্রত্যক্ষদর্শী। কিন্তু খুনের ঘটনার পর নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা করে সে। পরে সুস্থ্ হয়ে সে মানসিক ভারসাম্যহীনের মতো আচরণ শুরু করে। পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা তদন্তে মেডিকেল বোর্ড বসানো হলে তারা জানান, উইনসন সম্পূর্ণ সুস্থ। এরপরই উইনসনের ডিএনএ ও ছোরার বাঁটের ডিএনএ প্রোফাইল পরীক্ষার ব্যবস্থা করি। পরীক্ষায় উভয় ডিএনএ মিল পাওয়া গেছে। সেটার ভিত্তিতে আমরা তাকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি।’

‘খুনের কারণ সম্পর্কে এখনও স্পষ্ট কিছু মেলেনি। তবে উইলসনই যে খুনি, সেটি নিশ্চিত হয়েই অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। সম্ভবত নিজেদের মধ্যকার কোনো মতবিরোধের সূত্র ধরে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে।’- যোগ করেন পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ।

গত বছরের ১৪ জুলাই ইউএসটিসির পার্শ্ববর্তী লেকভিউ সোসাইটির ইউসুফ ম্যাশনের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন আতেফ শেখ (২৪)। একই ফ্ল্যাটে মাইসনাম উইনসন শিং (২৪), গানঞ্জমাই নীরাজ (২৫) এবং তোঙ্গবরম জয়েস্তানা দেবী (২৩) বসবাস করতেন। ঘটনার দিন সেখানে মদের পার্টির আয়োজন করা হয়। এতে তাদের বন্ধু প্রভাকর লাইসরাম, মালেমনগনবা মায়েংবাম, অথোকপাম রোনাল্ড, প্রমোশ চাকমা ওরফে টুকু এবং সজল চাকমা ওরফে মুন হাজির হন। তারা সবাই ভারতীয় নাগরিক এবং ইউএসটিসির এমবিবিএস ও বিবিএ শ্রেণির ছাত্রছাত্রী।

Advertisement

ওইদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে মাইসনাম উইনসন শিংয়ের কক্ষে আতেফ শেখকে গলা কাটা ও মাইসনাম উইনসনকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে আতেফ শেখকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় ১৮ জুলাই শেখ আতেফের বাবা আবদুল খালেক আকবর শাহ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

আকবর শাহ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাকির হোসেন ভূঁইয়া মামলার প্রাথমিক তদন্তভার নিয়ে গানঞ্জমাই নীরাজকে গ্রেফতার করেন। ওই বছরের ২০ জুলাই মামলাটি পিবিআইতে যায়। পিবিআই চট্টগ্রাম নগর পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা তদন্তভার নিয়ে প্রধান সন্দেহভাজন আসামি মাইসনাম উইনসন শিংকে গ্রেফতার করেন।

বিভিন্ন সময় রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে মাইসনাম উইনসন শিং জানান, ঘটনার আগে পরে সব কিছু তার মনে থাকলেও ঘটনার সময়টুকু তিনি স্মৃতিচারণ করতে পারছেন না। চমেকের ছয়জন চিকিৎসক দিয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে মাইসনাম উইনসন শিংয়ের মানসিক অবস্থা সম্পর্কে মতামত নেয়া হয়।

এতে বলা হয়, মাইসনাম উইনসন শিং ইচ্ছাকৃতভাবে স্মৃতিচারণ করতে না পারার কথা বলে ঘটনা এড়িয়ে যাচ্ছেন। এরপরও মাইসনাম উইনসন শিং ঘটনার বিষয়ে তার আগের অবস্থানে অনড় থাকেন। তখন ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা রক্ত, ছুরি, ছুরির বাঁট ও চাদরের ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়।

এসআর/জেআইএম