এফসি কাজানের ইতিহাস ৬০ বছরের। রাশিয়ার তাতারস্থান প্রজাতন্ত্রের রাজধানী কাজানে প্রতিষ্ঠিত এ ক্লাবটিকে কেন্দ্র করেই তৈরি হয়েছে শহরের ক্রীড়া কর্মকান্ড। রাশিয়ার ষষ্ঠ সর্বাধিক জনবহুল এ শহরটি ভোলগা নদী ও কাজানকা নদীর সংযোগস্থলে ইউরোপীয় অংশে অবস্থিত। খেলাধুলার ঐতিহ্যের কারণে এ শহরটি রাশিয়ার ‘ক্রীড়া রাজধানী’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
Advertisement
এখানকার দর্শণীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম নগরদূর্গ। ঐতিহ্যবাহী এ স্থানটিসহ নানা দর্শনীয় স্থান দেখতে পুরো বছরই শহরে ভিড় লেগে থাকে পর্যটকে। প্রতি বছর ১৫ থেকে ২০ লাখ পর্যটক তাতারস্থানের রাজধানীতে বেড়াতে আসেন। পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণীয় স্থানের মধ্যে শহরের বিভিন্ন স্থাপনা, পার্ক, বিনোদন কেন্দ্র।
এ শহরের মানুষ গর্ব করে খেলাধুলায় তাদের নানা অর্জন নিয়ে। রাশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ, প্রথম গ্যগরিন কাপসহ রাশিয়ার বিভিন্ন আভ্যন্তরীণ ক্রীড়ায় সাফল্য রয়েছে এই শহরের। মহাদেশীয় হকি লিগ কাপ, একে বারস হকি দল, বিখ্যাত ভলিবল ক্লাব জেনিতের সাফল্য গাঁথা তাতারস্থানের রাজধানী। সাঁতার, ওয়াটারপোলো, ফিল্ড হকিসহ বিভিন্ন খেলায় তাদের রয়েছে গর্ব করার মতো ঐতিহ্য।
কাজানের খেলাধুলা আলোচনায় বারবারই চলে আসে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে অর্ধযুগ আগে এফসি কাজানের স্মরণীয় এক সাফল্যগাঁথা গল্প। না, কাজানের এ ক্লাবটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রাউন্ড সিক্সটিন পার হতে পারেনি। কিন্তু গ্রুপ পর্বে তারা বার্সেলোনাকে হারিয়ে তাক লাগিয়েছিল ফুটবল বিশ্বে।
Advertisement
২০০৯ সালে গ্রুপ পর্বে ঘরের মাঠে বার্সেলোনার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে অ্যাওয়ে ম্যাচে জিতেছিল ২-১ গোলে। মেসি, ইনিয়েস্তা, জেরার্ড পিকে, ভিক্টর ভালদেস, দানি আলভেজ, ইব্রাহিমোভিচ ও এরিক আবিদালদের বার্সেলোনাকে হারানো চাট্টিখানি কথা ছিল না।
পরের আসরেও হোম ম্যাচে বার্সেলোনাকে ১-১ গোলে রুখে দিয়েছিল এফসি কাজান। অ্যাওয়ে ম্যাচে অবশ্য হেরেছিল ২-০ গোলে। ঐতিহ্যবাহী এ ক্লাবেরই দুই খেলোয়াড় এই বিশ্বকাপে রাশিয়া জাতীয় দলের সদস্য। দুই ডিফেন্ডার ফেদর কুরদিয়াসভ ও ভ্লামিদির গ্রানাতকে নিয়ে গর্ব করেন কাজানবাসী।
আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্সের মধ্যকার বিশ্বকাপের দ্বিতীয় পর্বের ম্যাচ কাভার করতে শনিবার সকালে কাজানে পা রেখেই বোঝা গিয়েছিল কতটা সুন্দর শহরটি। প্রধান রেলওয়ে স্টেশন থেকে বাসে প্রায় ঘন্টাখানেকের পথ কাজান এরেনা। সুন্দর পরিপাটি রাস্তা। বিভিন্ন স্থাপনাগুলো যে কারো মনেই এঁকে দেবে ভালো লাগার ছবি। নদী, নয়নাভিরাম সবুজ দৃশ্য চারিদিকে।
পরিছন্ন রাস্তার দুই ধারে সবুজ গাছ। ভোরের আলো ফুটেছে বেশ আগেই। বোঝাই গেলো পার্কগুলো থেকে ক্রীড়া উদ্যোমী মানুষরা প্রাতঃভ্রমণ করে ঘরে ফিরছেন। এখানে ওখানে বইছে কৃত্রিম ঝর্ণাধারা। আকাশের পানে তাকিয়ে যে কেউ পৌঁছে যেতে পারবেন সৌন্দয্যের স্বপ্নরাজ্যে।
Advertisement
শহরের ভোলগা জেলায় যে স্টেডিয়াম এবারের বিশ্বকাপের ১২ ভেন্যুর একটি, সেটি আসলে স্থানীয় ক্লাব এফসি কাজানের হোম ভেন্যু। ৪৫ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এ স্টেডিয়ামটি নির্মাণ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। ৩ বছরে অত্যাধুনিক এ স্টেডিয়াম নির্মানকাজ শেষ হয়। প্রায় ৪’শ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়ে এ স্টেডিয়াম নির্মান করতে।
আরআই/আইএইচএস/আরআইপি