খেলাধুলা

দ্বিতীয় দিনই স্পেন-পর্তুগাল মহারণ

মাঠের বাইরের অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। ভূমিকম্প হয়ে গেছে এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট স্পেনে। যে ভূমিকম্পে টালমাটাল পুরো স্পেন। কোচ হুলেন লোপেতেগুইকে বিশ্বকাপের একদিন আগেই বরখাস্ত করে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক কোচ ফার্নান্দো হিয়েরোকে।

Advertisement

দলের মধ্যে তুমুল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। লোপেতেগুইকে বরখাস্ত না করার জন্য প্রতিটি খেলোয়াড় অনুরোধ নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন স্পেন ফুটবল ফেডারেশরেশনের সভাপতি হুলেন লোপেতেগুইয়ের সামনে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বহিস্কারই হলেন লোপেতেগুই।

এমন যখন টালটামাল অবস্থা, তখন কোনো সময়ই পাচ্ছে না স্পেন, নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে মাঠে নামার জন্য। বিশ্বকাপের দ্বিতীয়দিনই মাঠে নামতে হচ্ছে তাদেরকে। প্রতিপক্ষ ইউরোজয়ী, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল। বিশ্বকাপের অন্যতম দুই ফেবারিটের লড়াই। নিশ্চিত অর্থেই রাশিয়া বিশ্বকাপটা জমে উঠছে একেবারে প্রথম থেকেই।

সোচির ফিশ্চ অলিম্পিক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায় মুখোমুখি হচ্ছে ইউরোপিয়ান, তথা বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা এই দুই দেশ। স্পেন কী পারবে নিজেদের মধ্যে বেধে যাওয়া গৃহযুদ্ধ ভুলে গিয়ে পর্তুগিজদের মোকাবেলায় নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিতে? নাকি, ইউরোজয়ী ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল চমক দেখিয়ে বিশ্বকাপের প্রথম থেকেই এগিয়ে যাবে দুর্বার গতিতে!

Advertisement

মাঠের বাইরের হিসাব-নিকাশ বাদ দিলে, স্পেন-পর্তুগাল সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের একেবারে সমান সমান। সর্বশেষ ২০ ম্যাচে অপরাজিত স্প্যানিশরা। এমনকি দলটি মাস দুয়েক আগে প্রীতি ম্যাচে আর্জেন্টিনার মত প্রতিপক্ষের জালে ৬ বার বল জড়িয়েছিল। অন্যদিকে ২০১৪ সালের পর মাত্র একটি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে হেরেছে। এমন দুটি দলের পরস্পর মুখোমুখি হওয়া নিশ্চিত অর্থেই, বিশ্বকাপের শুরুটাকে উত্তেজনায় ভরিয়ে দেবে, সন্দেহ নেই।

স্পেন যখন কোচ নিয়ে এতটা টালমাটাল অবস্থায়, তখন পতুগাল দলে ভিন্ন চিত্র। ২০১৬ ইউরোর পর কোচের চাকরিতে আরও স্থায়িত্ব বেড়ে যায় ফার্নান্দো সান্তোসের। তার অধীনেই ইউরো জয়ের পর এখন পর্তুগিজরা রাশিয়ায় এসেছে বিশ্বজয়ের জন্য।

তবে নিজেদের প্রথম ম্যাচের আগে প্রতিপক্ষ দলের কোচের বিষয় নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাতে রাজি হননি পর্তুগিজ কোচ ফার্নান্দো সান্তোস। তিনি আসলে হুলেন লোপেতেগুইয়ের বিষয়ে কোনো কিছুই বলতে রাজি হননি। আইবেরিয়ান দুই দেশের মধ্যে এই লড়াইয়ে নিজের দলকে মানসিকভাবে উজ্জীবিত রাখার দিকেই সবচেয়ে বেশি মনযোগ দিচ্ছেন সান্তোস। এটা যে বিশ্ব লড়াইয়! এখানে কোনো দলকেই ছাড়া দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

প্রতিপক্ষ সম্পর্কে সান্তোসের মূল্যায়ন, ‘স্পেন গত ১০ বছর ধরেই একই ধাঁচের ফুটবল খেলে। আমার কাছে তাদের কোচের বিষয়টা তাই খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়।’

Advertisement

বরং, পর্তুগিজ মিডফিল্ডার হোয়াও মোতিনহো তো বিষয়টাকে স্পেনের জন্যই ভালো হিসেবে দেখছেন। তিনি মন্তব্য করেন, ‘কোচের পদে পরিবর্তনটা স্পেনের জন্য আরও ভালো হতে পারে। এতে করে আরও বেশি উজ্জীবিত হয়ে উঠতে পারে স্প্যানিশরা। কোনো নেতিবাচক প্রভাব? আমি মনে করি না, তেমন কিছু হবে। বরং ইতিবাচক প্রভাবই পড়ার সম্ভাবনা বেশি।’

২০০৪ সালের পর বড় কোনো টুর্নামেন্টে স্পেনকে হারাতে পারেনি পর্তুগাল। এই প্রথম রাশিয়ায় এসে ২০০৪ সালের আরও একটি জয় পাওয়ার অপেক্ষায় ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর দল। যদিও বিষয়টা খুব সহজ নয়। কারণ, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে লড়াই করতে হবে তার একদল সতীর্থের বিপক্ষে। সার্জিও রামোস, ইসকো, আসেনসিও, কার্ভাহালদের বিপক্ষে। দেখার বিষয়, কে জেতেন, রোনালদো না রামোসরা?

তবে, ভেতর এতবড় ঘটনা ঘটে গেলেও স্পেন চাইছে নিজেদের ভেতর ঐক্য অটুট রাখতে। অধিনায়ক রামোস ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। ডিফেন্ডার পিকে বলেছেন, ‘আমরা ম্যাজিক দেখানোর অপেক্ষায়।’ কোচ ফার্নান্দো হিয়েরো বলেছেন, ‘স্পেন গত দুই বছর একই রকম খেলে আসছে। সুতরাং, মাত্র দু’দিনে নিজেদের বদলে ফেলার কোনো সুযোগ নেই।’

আইএইচএস/জেআইএম