শিক্ষা

উচ্চশিক্ষিত বেকারদের ৬২ শতাংশই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের

দেশে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সিংহভাগ আসছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, যা প্রায় ৬২ শতাংশ। এর অন্যতম কারণ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৩ শতাংশ শিক্ষার্থী সমাজবিজ্ঞান বা কলার মতো বিভিন্ন বিষয়ে পড়েন, যেগুলোর বাজার চাহিদা কম।

Advertisement

এমন তথ্য জানিয়েছেন বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী এ কে এম ফাহিম মাশরুর। তিনি জানান, জাতীয় বেকারত্বের হারের তুলনায় ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার প্রায় দ্বিগুণ। এই তরুণদের যারা আবার টারশিয়ারি তথা উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন তাদের মধ্যে বেকারের হার সর্বোচ্চ।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মহাখালী ব্র্যাক সেন্টার ইনে ‘রিকমেন্ডেশনস বাই দ্য টাস্কফোর্স অন রিস্ট্র্যাটেজিং দ্য ইকোনমি’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সম্মেলন হয়েছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে শিক্ষা, যুব বেকারত্ব ও যুব উন্নয়ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য রাশেদা কে চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. রুমানা হক এবং বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম ফাহিম মাসরুর। তারা দুজনই টাস্কফোর্সের সদস্য।

Advertisement

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গত এক দশকে এমন বেকারের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। এত বেশি উচ্চশিক্ষিত বেকার বিশ্বের অন্য দেশে খুব একটা দেখা যায় না। তরুণ বেকারত্ব (ইয়ুথ আনএপ্লয়মেন্ট) বৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা রাখছেন এই শিক্ষিত বেকারেরা।

আরও পড়ুনশিক্ষায় স্তর বেশি থাকায় বৈষম্য বাড়ছে: সিপিডির সম্মেলনে বক্তারা তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষক দিয়ে প্রথম শ্রেণির নাগরিক গড়া যায় না 

ফাহিম মাশরুর বলেন, উচ্চশিক্ষিত বেকারের সিংহভাগ আসছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, এ হার প্রায় ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ উচ্চশিক্ষিত বেকার সমস্যার মূল এখানে রয়ছে। এর অন্যতম কারণ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৩ শতাংশ শিক্ষার্থী সমাজবিজ্ঞান বা কলার মতো বিভিন্ন বিষয়ে পড়েন, যেগুলোর বাজার চাহিদা কম।

তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটা অংশ আবার স্বেচ্ছায় বেকার থাকেন। অন্য কথায় বললে সরকারি চাকরির জন্য ৩-৪ বছর ধরে অপেক্ষা করেন। এর পেছনে শুধু বেতন নয়, ক্ষমতার কেন্দ্রে যাওয়ার একটা লক্ষ্যও থাকে এসব শিক্ষার্থীর। উচ্চশিক্ষিত বেকার বৃদ্ধির এটিও একটি কারণ।

মূল প্রবন্ধে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার কিছু চ্যালেঞ্জ যেমন- শিক্ষার মান, অবকাঠামোগত গ্যাপ, জেন্ডার বৈষম্য, নীতিগত সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়। এক্ষেত্রে কিছু স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ করা হয়েছে। যেমন- মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত, শিক্ষাক্ষেত্রে কাঠামো হালনাগাদ করা, তদারকি, মূল্যায়ন ইত্যাদি।

Advertisement

অনুষ্ঠানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এস এম আমানুল্লাহ বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় প্রায় ২ হাজার ৫০০ কলেজ রয়েছে। তবে এসব কলেজের গভর্নিং বডি অনেক বেশি পলিটিসাইজড, শিক্ষকদের মধ্যে ১০-১২টি গ্রুপ, প্রিন্সিপাল মেকিয়াভেলি ক্যারেক্টর। শিক্ষার মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। যত্রতত্র মাস্টার্স পড়ানো হচ্ছে, যেখানে শিক্ষকদের বেতন ৮-১০ হাজার টাকা। টেকনিক্যাল শিক্ষা নিয়ে অরাজকতা চলছে। বিভিন্ন সংস্থা ৬৪ জেলায় বিভিন্ন ইনস্টিটিউট বানাচ্ছে, তবে কারও মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, গত ৫ আগস্টের পর আমাদের প্রত্যাশা ছিল অন্তর্বর্তী সরকার শিক্ষা সংস্কার নিয়ে বিশেষ উদ্যোগ নেবে। কিন্তু সেটি হয়নি। শিক্ষা সংস্কারে এখনো সঠিক পরিকল্পনা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এসআরএস/কেএসআর