দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য নীতি স্থিতিশীলতা জরুরি বলে জানিয়েছেন আমেরিকান চেম্বার অফ কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচ্যাম) সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ।
Advertisement
এছাড়া আইনশৃঙ্খলা স্থিতিশীল করা, ব্যবসায়িক খাত পরামর্শ বাড়ানো এবং এনবিআরের জন্য নীতি ও বাস্তবায়নে পৃথক শাখা করা এখন সময়ের দাবি বলেও জানান তিনি।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে অ্যামচ্যাম আয়োজিত ‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি: ব্যবসায়িক পরামর্শ, আইনশৃঙ্খলা এবং জ্বালানি সংকট ব্যবস্থাপনা মূল চাবিকাঠি’ শীর্ষক একটি সংলাপের সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর জন ফেও, বিডা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এনবিআর এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। জ্ঞান অংশীদার হিসেবে অনুষ্ঠানটিকে সমর্থন করে লাইটক্যাসল পার্টনারস।
Advertisement
সৈয়দ এরশাদ আহমেদ কাস্টমস অটোমেশন, ম্যানুয়াল স্বাক্ষর বিলোপ এবং দ্বৈত কর অব্যাহতি প্রবর্তনের আহ্বান জানান। তিনি নতুন রপ্তানি বাজারের ওপর ইপিবির মনোযোগ, আরঅ্যান্ডডি এবং প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। কারণ বাণিজ্য প্রদর্শনীগুলো অকার্যকর প্রমাণিত হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি ঢাকা আইসিডি এবং চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্যে কার্গো পরিবহনের অপর্যাপ্ত সুবিধা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন, যা কাঁচামাল চালানে বিলম্ব ঘটায়। বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন এবং মেধাস্বত্ব অধিকার শক্তিশালী করার কথা বলেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা ব্যবসায়িক প্রবিধান সহজীকরণ এবং অবকাঠামো উন্নতির মাধ্যমে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও অনুকূল পরিবেশ তৈরির জন্য সরকারের প্রচেষ্টার ওপর জোর দেন।
তিনি ব্যবসায়ীদের ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে বর্তমান কার্যক্রমের ওপর মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান, কারণ এ উদ্বেগ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে। তিনি আশ্বাস দেন যে, সরকার আইনশৃঙ্খলা চ্যালেঞ্জ এবং মুদ্রাস্ফীতির মতো মূল সমস্যাগুলো সমাধান করছে, যা অর্থনীতিকে প্রভাবিত করছে। প্রবৃদ্ধি বাড়াতে এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতার গুরুত্বের ওপর জোর দেন তিনি।
Advertisement
এফআইসিসিআই সভাপতি এবং ইউনিলিভার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর জাভেদ আখতার বেশ কয়েকটি সরকারি উদ্যোগের প্রশংসা করেন। বিশেষ করে ১০টি ব্যবসাকে অনুমোদিত অর্থনৈতিক অপারেটর (এইও) মর্যাদা প্রদান, যা একটি উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উৎসাহ। তবে, অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে এমন আইন প্রণয়নের সময় ব্যবসায়িক পরামর্শের অভাব নিয়ে উদ্বেগ জানান তিনি।
তিনি নিবন্ধন, সার্টিফিকেশন এবং অন্যান্য নিয়ন্ত্রক প্রক্রিয়াগুলোর জটিলতাও তুলে ধরেন। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য স্থানীয় এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সমস্যা জানাতে একটি সরকার পরিচালিত পোর্টাল প্রস্তাব করেন। যা সরকারি পর্যালোচনার সুযোগ করে দেবে এবং একটি স্পষ্ট সমাধানের সময়সীমা নির্ধারণ করবে এবং শেষ পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও বিনিয়োগ বাড়াবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অ্যামচ্যাম কোষাধ্যক্ষ আল-মামুন এম রাসেল, নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. মইনুল হক, রাশেদ মুজিব নোমান এবং মির্জা শজিব রায়হান, অন্য অ্যামচ্যাম সদস্যদের সঙ্গে অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
আলোচনায় ব্যবসায়িক কার্যক্রম সহায়তার জন্য উন্নত আইনশৃঙ্খলার প্রয়োজনীয়তার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়। বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করার জন্য স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আরও ভালো পরামর্শের গুরুত্বও আলোচনায় উঠে আসে।
পানীয় শিল্প প্রতিনিধি কোকা-কোলা এবং পেপসিকো উচ্চ সম্পূরক শুল্ক, চিনি কর এবং ন্যূনতম কর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে, বিনিয়োগ বাড়াতে, কর্মসংস্থান তৈরি করতে এবং ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে ৩০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ এসডি এবং ৩ শতাংশ থেকে ০.৬ শতাংশ টার্নওভার ট্যাক্স কমানোর আহ্বান জানায়।
আর্থিক পরিষেবা শিল্পের উত্থাপিত একটি মূল বিষয় ছিল বৃহত্তর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি প্রচারের জন্য আয়কর অধ্যাদেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্রেডিট কার্ড ইস্যুর জন্য বাধ্যতামূলক আয়কর রিটার্ন স্লিপ মওকুফের অনুরোধ।
জ্বালানি খাত জোর দিয়ে বলেছে যে, সক্রিয় পদক্ষেপ না নিলে চলমান জ্বালানি সংকট উৎপাদনকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। বিশ্ববাজারে উৎপাদনকারীদের প্রতিযোগিতামূলক থাকার জন্য সরকারকে জ্বালানি সংকট সমাধানের অগ্রাধিকার দিতে হবে।
টেক্সটাইল এবং পুনর্ব্যবহার শিল্পে, স্টেকহোল্ডাররা পুনর্ব্যবহৃত তুলার উপর ভ্যাট অপসারণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে, এটিকে ভার্জিন তুলার মতো একই রকম বিবেচনা করার কথা বলে। এই সমন্বয় স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করবে, পরিবেশ বান্ধব টেক্সটাইল খাতকে সমর্থন করবে এবং শিল্পের মধ্যে বৃত্তাকার অর্থনীতি অনুশীলনের উৎসাহ জোগাবে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে পরামর্শ করা মূল বিষয়।
ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ, তামাক শিল্প, সাম্প্রতিক সময়ে আকস্মিক এবং তীব্র এসডি বৃদ্ধি, ভ্যাট এবং স্বাস্থ্য সারচার্জের কথা তুলে ধরে, যা ডব্লিউএইচও-এর সুপারিশ ছাড়িয়ে গেছে, যা ৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন জীবিকা সমর্থনকারী এবং সরকারি কোষাগারের রাজস্বে ১১ শতাংশের বেশি অবদান রাখা একটি আইনি শিল্পের স্থায়িত্বকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
এসআরএস/এমকেআর