দেশজুড়ে

চাকরিজীবনের শেষ দিনে প্রধান শিক্ষকের ব্যতিক্রমী বিদায়

চাকরিজীবনের শেষ দিনে ফুলে সাজানো গাড়িতে ঘোরানো হলো তিন গ্রাম। দেওয়া হলো বিদায় সংবর্ধনা। কর্মময় জীবন থেকে এভাবেই বিদায় নিলেন শিক্ষক আলতাফ হোসেন।

Advertisement

আলতাফ হোসেন যশোর সদর উপজেলার বীরনারায়নপুর তের আউলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) কর্মময় জীবন থেকে বিদায় নেন তিনি। এ উপলক্ষে দুপুরে প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাহাবুবুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার এসএম শামিম হোসেন।

বীরনারায়নপুর তের আউলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমি আলতাফ হোসেন স্যারের ছাত্র ছিলাম। স্যারকে ছুটি নিতে দেখেনি। অসুস্থ থাকলেও স্কুলে এসেছেন। স্যারের দেওয়া শিক্ষা নিয়ে আজ আমরা নানাভাবে প্রতিষ্ঠিত। স্যার আমাদের আদর্শ। একজন আদর্শ শিক্ষক আজ চাকরি থেকে বিদায় নিলেন। স্যার ভালো থাকুন সবসময়।’

Advertisement

প্রাক্তন শিক্ষার্থী ফারিয়া মিম বলেন, ‘স্যার ক্লাসে পড়াশোনা সুন্দর করে বোঝাতেন। স্কুল পরিষ্কার রাখতেন। শুধু পড়াশোনা নয়; বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করতেন তিনি। স্যারের বাকিটা জীবন সুস্থতায় কাটুক, এই কামনা করি।’

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আলভি হাসান। তার ভাষ্য, ‘স্যার আমাদের সন্তানের মতো দেখেন। কোনো কারণে স্কুলে আসতে না পারলে বাড়িতে যেয়ে খোঁজখবর নিতেন।’

বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি শওকত হোসেন বলেন, ‘বিদ্যালয়ের জন্য বিভিন্ন সময় কেনাকাটা করা হয়েছে। তবে এক টাকাও তিনি অতিরিক্ত খরচ করতেন না। তিনি সৎ মানুষ ছিলেন।’

বিদায় বেলায় কান্নায় ভেঙে পড়েন বিদায়ী শিক্ষক আলতাফ হোসেন। তিনি বলেন, ১৯৮৯ সালের আগস্টে স্থানীয় কয়েকজন মিলে উদ্যোগ নিয়ে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করি। আমি চেষ্টা করেছি বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ছুটি না নিতে। শিক্ষার্থীদের সবসময় পড়াশোনার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছি। পরিশেষে কর্মময় জীবনে কোনো ধরনের ভুলত্রুটি করে থাকলে সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। বাকি জীবন যেন পরিবার-পরিজন নিয়ে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অতিবাহিত করতে পারি, সবার কাছে সেই দোয়া কামনা করছি।’

Advertisement

স্মরণীয় বিদায় প্রসঙ্গে আলতাফ হোসেন বলেন, ‘আমার চাকরিজীবনের শেষ দিনে এমন পরিবেশের মধ্য দিয়ে বিদায় নিতে হবে যা ছিল কল্পনাতীত। এটা আমার জীবনের অনেক বড় প্রাপ্তি। যা বাকি জীবনটুকুতে মনে রাখার মতো।’

শিক্ষক আলতাফ হোসেন উপজেলার বীরনারায়নপুর গ্রামের আজিম উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৮৯ সালের আগস্ট মাসে চাকরিতে যোগদান করেছিলেন। দাম্পত্য জীবনে স্ত্রী, এক ছেলে ও পাঁচ মেয়ে আছে। তিনি ছিলেন ক্রীড়া সংগঠক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব।

মিলন রহমান/এসআর/জেআইএম