দেশজুড়ে

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে থাকবে ৫ শতাধিক পুলিশ

দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। সড়কে বাড়ছে যাত্রীবাহী যানবাহনের ভিড়। অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও দেশের ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়কে যানজট নিয়ে শঙ্কায় ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা।

Advertisement

যদিও এরই মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবারের ঈদ যাত্রায় যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তাই মন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে কুমিল্লা জেলা ও হাইওয়ে পুলিশের এখন অনেকটা গলদঘর্ম অবস্থা। তাদের প্রস্তুতিও কম নয়। ঈদের তিন দিন আগে এই ফোরলেন সড়কে যাত্রীবাহী যানবাহনের চাপ সামাল দিতে পণ্যবাহী যানবাহন বন্ধ রাখার সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে কাল থেকে মাঠে কঠোর অবস্থানে থাকবে পুলিশ।

মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের ৯৭ কি.মি. এলাকায় জেলা ও হাইওয়ে পুলিশের প্রায় ৫ শতাধিক পুলিশ রাস্তায় থাকবে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন। এ ছাড়াও মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে কুমিল্লা জেলা পুলিশের ঈদের দিন পর্যন্ত সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে গত দুইদিন ধরে ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোরলেনের কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে চৌদ্দগ্রাম সীমান্ত এলাকা পর্যন্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। দিনের বেলায় পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল আগের তুলনায় খুবই কম। সোমবার দিনভর দাউদকান্দির টোল প্লাজা এলাকায় ছিল না যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। যা গত মে মাসে ছিল উল্টো চিত্র। তাই চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এখনো যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি যাত্রীদের। তবে বুধবার থেকে ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের চাপে যাত্রীবাহী যানবাহনের সংখ্যা ৪/৫ গুন বেড়ে গিয়ে যানজট সৃষ্টি আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা।

Advertisement

কুমিল্লা বাস মালিক সমিতির সভাপতি তাজুল ইসলাম জানান, অন্যান্য বছরের ঈদ যাত্রা অনেকের মাঝে এখনো স্মৃতি হয়ে আছে। কেউ কেউ সময় মতো বাড়ি ফিরে ঈদের নামাজও আদায় করতে পারেননি। গত মে মাসে ঢাকা থেকে কুমিল্লায় পৌঁছাতে সময় লেগেছে ৮/১০ ঘণ্টা। এবারের ঈদে এমন ভোগান্তিতে যেন বাড়ি ফেরা মানুষদের না পড়তে হয় এ বিষয়ে এরই মধ্যে জেলা, হাইওয়ে ও কমিউনিটি পুলিশ যে সকল উদ্যোগ নিয়েছে এসব উদ্যোগের সঙ্গে পরিবহন মালিক সমিতি থেকেও নিজস্ব কর্মী বাহিনী দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, পুলিশ আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে আশা করি এবারের ঈদ যাত্রায় যাত্রীদের আগের মতো ভোগান্তিতে পড়তে হবে না।

কুমিল্লা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হায়দার জানান, কুমিল্লা অংশে ফোরলেনের সকল অবৈধ স্থাপনা এরই মধ্যেই উচ্ছেদ করা হয়েছে, সড়কের পাশে বাজার না বসার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দাউদকান্দি,মেঘনা ও কাঁচপুর সেতুর কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী নিজেই নিয়মিত ওই সেতু তিনটির বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। ইনশাল্লাহ চলতি বছরের মধ্যে ওই সেতু তিনটি চালু হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোরলেনে আর কোনো যানজট থাকবে না।

Advertisement

কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন জানান, ঈদের ২/৩ দিন আগে থেকে সড়কে যাত্রীবাহী যানবাহনের চাপ অনেক বৃদ্ধি পাবে এটাই স্বাভাবিক। ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক ফোরলেনের কিন্তু তিনটি সেতু দুই লেনের। তাই তিনটি সেতুর দিকে পুলিশের নজরদারি বেশি থাকবে।

তিনি বলেন, এবারের ঈদে যাত্রীদের ভোগান্তি নিরসন ও নিরাপত্তায় জেলা ও হাইওয়ে পুলিশের ৬ শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য রাস্তায় থাকছে। ব্যস্ততম এই ফোরলেনের পাশের দাউদকান্দি, চান্দিনা,কোতয়ালী, সদর দক্ষিণ ও চৌদ্দগ্রাম থানা রয়েছে। এই ৫টি থানার সকল কর্মকর্তা ও সদস্য সার্বক্ষণিকভাবে সড়কে অবস্থান করে জেলা ও হাইওয়ে পুলিশ এবং কমিউনিটি পুলিশকে সহায়তা করে যাচ্ছে।

এদিকে ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তায় হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা রিজিয়নের কুমিল্লা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সড়কে ৭০৭ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য ২৪ ঘণ্টা মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করবে বলে জানা গেছে।

হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম জানান, যানজট ও যাত্রীদের নিরাপত্তায় হাইওয়ে পুলিশের ৪১টি মোবাইল টিম এবং ৩৬ জন অফিসার মোটর বাইক নিয়ে ‘কুইক টিম’ হিসেবে মহাসড়কে অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে যানবাহন চলাচল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে হাইওয়ে পুলিশের মোবাইল নম্বর সম্বলিত ভিজিটিং কার্ড যাত্রী ও চালকদের কাছে বিতরণ করা হবে। এতে মহাসড়কের কোথাও দুর্ঘটনা কিংবা কেউ চাঁদা দাবি করলে সঙ্গে সঙ্গে ম্যাসেজটি হাইওয়ে পুলিশের নম্বরে জানানো হলে সেখানে হাইওয়ে পুলিশের ‘কুইক টিম’ দ্রুত পৌঁছে ব্যবস্থা নেবে।

আরএআর/জেআইএম