শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার খাসগাজীপুর গ্রামের কৃষকের ১৫ বছর বয়সি কিশোরী কন্যা স্থানীয় চরকুমারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। পরিবারের সদস্যরা পাশের ডামুড্যা উপজেলার পূর্বডামুড্যা গ্রামের চুন্নু মালের ছেলে রুবেল মালের সঙ্গে ওই ছাত্রীর বিয়ের আয়োজন করেন। গতকাল শুক্রবার তাদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। ওই এলাকার এক ব্যক্তি ইউএনও ভেদরগঞ্জ নামের ফেসবুক পেজের ম্যাসেঞ্জারে বাল্যবিয়ের তথ্যটি দেন। ইউএনও সাব্বির আহমেদ ওই তথ্যের সত্যতা পেয়ে বিয়ে বন্ধ করার উদ্যোগ নেন।
Advertisement
এভাবে ফেসবুকে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে ফেসবুকে পাওয়া তথ্যে গত ছয় মাসে ৮০টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছেন ভেদরগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, গত বছর ২২ অক্টোবর উপজেলা কর্মকর্তা হিসেবে ভেদরগঞ্জে যোগদান করেন সাব্বির আহমেদ। যোগদানের পর তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের জন্য একটি ফেসবুক পেজ খোলেন। ওই পেজে তার সঙ্গে ভেদরগঞ্জ উপজেলের প্রতিটি এলাকার জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, এনজিও কর্মী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক দলের নেতা, চিকিৎসকসহ সাধারণ মানুষ যুক্ত হন। ইউএনর দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য স্থানীয় মানুষ ওই ফেসবুক পেজে নানা ধরনের তথ্য দিতে থাকেন। তথ্য অনুযায়ী ব্যবস্থা নেন ইউএনও।
সখিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মানিক সরদার বলেন, গ্রামের মানুষ আমাদের কথা না মেনে সন্তানদের অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে দেন । তখন আমরা অসহায় হয়ে পড়ি। কিন্তু ফেসবুকের মাধ্যমে এলাকার মানুষ বিয়ের তথ্য ইউএনওকে জানিয়ে দেই। তখন ইউএনও স্যার সে বিয়ে বন্ধ করে দেন। এভাবে ছয় মাসে আমার ইউনিয়নে ৮টি বিয়ে বন্ধ করা হয়েছে।
Advertisement
চরকুমারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের না জানিয়ে অভিভাবকরা মেয়েদের বাল্যবিয়ে দেয়। আমরা খবর পাওয়ার আগে বিয়ে সম্পন্ন হয়ে যায়। ফেসবুকে যোগাযোগ বারানোর কারণে দ্রুত বাল্যবিয়ের তথ্য প্রশাসন পাচ্ছে। এ কারণে তা বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্কুল ছাত্রীর মা জাগো নিউজকে বলেন, আমরা গরিব মানুষ, সংসারে অভাব, তাছাড়া সমাজে নিরাপত্তার অভাব। নানা বিষয় চিন্তা করে মেয়ের বিয়ে দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। প্রশাসনের কর্মকর্তারা বাল্য বিয়ের কুফল সম্পর্কে আমাদের বুঝিয়েছেন। মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক হলে বিয়ে দেব এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।
ভেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, উপজেলার সমস্যা ও সম্ভবনার সকল তথ্য পাওয়ার জন্য স্থানীয় মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখতে হয়। দ্রুত তথ্য পাওয়ার জন্য ফেসবুক পেজ খুলেছি। সেখানে নানা শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে যোগাযোগ বেড়েছে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ছয় মাসে ৮০টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। ওই স্কুল ছাত্রীরা সংসার করার পরিবর্তে এখন স্কুলে যাচ্ছে,পড়ালেখা করছে।
মো. ছগির হোসেন/আরএ/আরআইপি
Advertisement