জাতীয়

সাফল্য ধরে রাখতে চায় র‌্যাব

দেশের অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস দমনের উদ্দেশে ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ গঠিত হয় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। ওই বছরের ১৪ এপ্রিল কার্যক্রম শুরু মধ্য দিয়ে আজ পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। দীর্ঘ এ ১৪ বছরে চাঞ্চল্যকর বিভিন্ন মামলা ও খুনের ঘটনার রহস্য উদঘাটনের পাশাপাশি জঙ্গি দমনে বেশ সুনাম অর্জন করেছে। সামনে দিনগুলোতে আরও বেশি সফলতা ও এলিট ফোর্স হিসেবে অর্জিত স্বকীয়তা ধরে রাখা এবং সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ও আস্থার প্রতিদান দেয়ার অঙ্গিকার ব্যক্ত করেছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা।

Advertisement

র‌্যাবের ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে পালিত হয়েছে গত মার্চে। তবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ (৩ মে, বৃহস্পতিবার) র‌্যাব সদর দফতরে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন।

র‌্যাব সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত ১৪ বছরে র‌্যাবের সক্ষমতা বেড়েছে অনেক। জঙ্গি দমন ছাড়াও নাশকতা প্রতিরোধসহ দেশের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে অপরিহার্য হয়ে পড়েছে পুলিশের এ সংস্থাটি। মানব পাচাররোধ, সন্ত্রাস ও মাদকবিরোধী ভূমিকা পালনে র‌্যাব ইতোমধ্যে সাধারণ মানুষের মনেও আস্থার প্রতীক হিসেবে পরিণত হয়েছে।

র‌্যাবের অতিরিক্ত পরিচালক (এডিজি-অপারেশন) কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান জাগো নিউজকে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার জন্যই বিশেষভাবে র‌্যাবকে এলিট ফোর্স হিসেবেই গঠন করা হয়েছে। র‌্যাব গঠনের পর থেকেই জঙ্গি ও শীর্ষ সন্ত্রাসী দমন, মাদকবিরোধী অভিযানসহ বড় বড় অপারেশন পরিচালনা করছে র‌্যাব। ধারাবাহিকভাবে এগুলো নিয়েই কাজ করতে হচ্ছে র‌্যাবকে।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ও আস্থার মূল্যায়ন করে র‌্যাব সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ বাহিনী সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদ দমন করছে। সন্ত্রাসী ও জঙ্গিরা যেন মাথাচাড়া দিয়ে না ওঠতে পারে তার জন্য কঠোর অবস্থানে রয়েছে র‌্যাব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ (৩ মে) আমাদের মাঝে আসছেন। আমরা অনুপ্রাণিত। আমরা আমাদের কাজের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।

র‌্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জাগো নিউজকে বলেন, সৃষ্টিলগ্ন থেকে জঙ্গি-সন্ত্রাস দমন র‌্যাবের অন্যতম এজেন্ডা ও দায়িত্ব ছিল। জঙ্গি দমনের মাধ্যমেই র‌্যাবের যাত্রা ও সাফল্য এসেছে। তাই সবকিছুর আগে জঙ্গি দমনের বিষয়টিকে র‌্যাব সবসময় প্রাধান্য দিয়ে থাকে।

বিগত বছরগুলোতে র‌্যাব চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্ত, অপরাধীদের গ্রেফতার, প্রশ্নফাঁসরোধে জড়িতদরে গ্রেফতারে সাফল্য দেখিয়েছে বলেও জানান তিনি।

গত এক বছরে র‌্যাবের সাফল্য (২০১৭)

Advertisement

অপরাধী ও সন্ত্রাসী গ্রেফতার করেছে ৮ হাজার ৯৯৭ জন। এদের মধ্যে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য রয়েছে ৩০৮ জন। জঙ্গির মধ্যে জেএমবির সদস্য রয়েছে ২৫৯ জন। এছাড়া দেশি-বিদেশি ১৭টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫০ রাউন্ড গুলি, ১টি গ্রেনেড, ডেটোনেটর, ২টি সুইসাইডাল বেল্ট উদ্ধার করা হয়।

অন্যদিকে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেফতার করে ৭১৬ জনকে। ১ হাজার ৬৬টি অস্ত্র, ১২ হাজার ৮১১টি গুলি, বিস্ফোরক (ককটেল/বোমা/গ্রেনেড) ৭ হাজার ৩৩৪টি, ৬৩ কেজি বিভিন্ন প্রকার বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়।

গত এক বছরে মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ও জড়িত ৪০৬০ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এ সময় ৩১ কেজি হেরোইন, ৭৮ লাখ ১৬ হাজার ৮২৯ পিস ইয়াবা, ৯১ হাজার ৯৩৮ বোতল ফেনসিডিল, ৪ হাজার ২১০ কেজি গাঁজা, ৯ হাজার ৪৭৪ বোতল বিদেশি মদ, ৬ লাখ ৯১ হাজার ৪১২ লিটার দেশি মদ, ২২ হাজার ৪৭৮ ক্যান বিয়ার, এক হাজার ২০ পিস নেশা জাতীয় ইনজেকশনে এবং সোয়া দুই কেজি কোকেন উদ্ধার করা হয়।

জালনোট ও জাল টাকার ব্যবসায়ী এবং হুণ্ডি চক্র ধরতে সাফল্যজনক ২৫টি অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযানে ৫৮ জনকে গ্রেফতারসহ দেশি ৬৩ লাখ ৩৩ হাজার ৮শ’ জাল টাকা, ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৫৫০ ভারতীয় জাল রুপি ও ৬ লাখ ডলার ইউএস ডলার উদ্ধার করা হয়।

গত বছর অপহরণকারীদের ধরতে ১৪৪টি অভিযান চালায় র‌্যাব। এর মধ্যে ২০৯ জন অপহরণকারীকে গ্রেফতার, নারী ও শিশুসহ মোট ১৪৭ অপহৃতকে উদ্ধার করা হয়। এছাড়া নারী ও শিশু পাচারকারী ধরতে ৩০টি অভিযানে ৫ শিশুকে উদ্ধার করা হয়।

জলদস্যু গ্রেফতারে ৩০টি অভিযানে ১৪৪ জনকে গ্রেফতার ও বনদস্যু দমনে ৪টি অভিযানে ৩ জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতারে ৩৫টি অভিযানে ৫৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন প্রতারণার দায়ে ২০৬ জন, ভুয়া ডাক্তার ১০ জন এবং প্রশ্নফাঁস ও প্রশ্নফাঁসের নামে টাকা আদায়কারী ১০৬ জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

র‌্যাব সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠাকালে র‌্যাব সদর দফতরসহ ব্যাটালিয়ন ছিল সাতটি। লোকবল ছিল পাঁচ হাজার ৫২১ জন। প্রয়োজনের তাগিদে বেড়েছে র‌্যাবের জনবল ও ব্যাটালিয়নের সংখ্যা। পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌ-বাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার ও সরকারের বেসামরিক প্রশাসনের চৌকস কর্মকর্তা ও অন্য সদস্যদের নিয়ে বর্তমানে ১৪টি ব্যাটালিয়নে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার র‌্যাব সদস্য কর্মরত রয়েছেন।

জেইউ/আরএস/আরআইপি