খেলাধুলা

মাশরাফিকে টেস্টে চায় সাকিবও : সুজন

বিসিএল শেষ হলো সবেমাত্র। সাকিব আর মোস্তাফিজ আইপিএল নিয়ে ব্যস্ত। আর হাঁটুর ইনজুরি মুক্তির জন্য রিহ্যাবে ব্যস্ত তামিম ইকবাল। সাব্বির রহমান রুম্মন ঘরোয়া ক্রিকেটে নিষিদ্ধ। পঞ্চম রাউন্ডে সেঞ্চুরি করে শেষ পর্ব খেলা হয়নি মুশফিকুর রহীমেরও। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও ছিলেন না শেষ রাউন্ডে। গোড়ালির ইনজুরিতে মাঠের বাইরে রয়েছেন নাসির হোসেনও।

Advertisement

মোট কথা বাংলাদেশের ক্রিকেটের ‘পঞ্চ পান্ডবের’ চারজন সাকিব, তামিম, মুশফিক এবং মাহমুদউল্লাহ ছিলেন না সদ্য শেষ হওয়া বিসিএলের শেষ পর্বে; কিন্তু ওই এক রাউন্ড খেলে হঠাৎ আলোচনায় মাশরাফি বিন মর্তুজা।

যদিও নিজের ফিটনেস ধরে রাখার জন্যই প্রাইম ব্যাংক দক্ষিণাঞ্চলের হয়ে আবার সাদা পোশাকে লাল বল হাতে বোলিং করতে মাঠে নেমেছিলেন নড়াইল এক্সপ্রেস। মাঠে নামার আগে মাশরাফি নিজেও মিডিয়ার কাছে বলে নিয়েছেন, শুধু মাত্র ফিটনেস লেভেল ঠিক রাখতে আমি এই চারদিনের ম্যাচ খেলছি।

কিন্তু তারপরও নানা কৌতূহলী প্রশ্ন চারদিকে। তবে কি আবার টেস্টে ফেরার চিন্তা ভাবনা নড়াইল এক্সপ্রেসের? ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর আগে কি ওয়ানডের পাশাপাশি টেস্ট দলেও ফেরার ইচ্ছে আছে তার? এমন গুঞ্জনে মুখর এখন ক্রিকেটাঙ্গন।

Advertisement

মিডিয়ায়ও সাড়া পড়েছে ঘটনাটি,`আপনি আবার সত্যিই টেস্টে ফিরতে চান?' গত এক সপ্তাহের বেশি সময় অনেকবার এই প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন মাশরাফি। অবশ্য নিজে থেকে তেমন পরিষ্কার করে কিছু বলা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করেছেন তিনি। অবশেষে মাশরাফির টেস্টে ফেরা নিয়ে মুখ খুলেছেন বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন।

মাশরাফির টেস্টে ফেরা সম্পর্কে মিডিয়ার সঙ্গে আলাপে বিসিবি বিগ বস অনেক কথার ভিড়ে দুটি কথা স্পষ্ট করে বলেছেন। যার প্রথমটি হলো তিনি মাশরাফিকে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেই চান। আর টেস্ট দলে ফেরা সম্পর্কে তার কথার সারমর্ম হলো, 'মাশরাফি যদি নিজেকে টেস্ট খেলার জন্য ফিট মনে করে এবং ফিজিও যদি তাকে টেস্টের জন্য ফিট বলে- তাহলে খেলবে।’

এই যেমন অবস্থা, ঠিক তখন আজ একটি চাঞ্চল্যকর খবর ছড়িয়ে পড়েছে ক্রিকেট পাড়ায়। জানা গেছে, টেস্ট অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও চান মাশরাফি টেস্ট খেলুক এবং নতুন বলে বল করুক।

রোববার পড়ন্ত বিকেলে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপে বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনও জানিয়েছেন, মাশরাফি টেস্ট দলে ফিরে আসুক এবং নতুন লাল বলে বোলিংয়ের সূচনা করুক- তা কায়মনো বাক্যে চায় সাকিবও।

Advertisement

সাকিব ব্যস্ত আইপিএল নিয়ে। আজ তার দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদের খেলা রাজস্থান রয়্যালসের বিপাক্ষে। এমন দিনে সাকিব কি করে কথা বললেন খালেদ মাহমুদ সুজনের সঙ্গে? নিশ্চয়ই এমন প্রশ্ন উঁকি-ঝুঁকি দিচ্ছে অনেকের মনেই। সেটাই স্বাভাবিক।

তবে তাদের জন্য তথ্য হলো, কথাটি আজ কিংবা কাল-পরশুর নয়। আগের। খালেদ মাহমুদ সুজন জানালেন, ‘কিছুদিন আগে ব্যক্তিগত আলাপচারিতার এক পর্যায়ে টেস্ট দল নিয়ে কথা বলতে গিয়ে, সাকিব আমাকে বলে বসে, আচ্ছা সুজন ভাই, মাশরাফি ভাই যদি টেস্ট দলে ফিরে আসেন তাহলে কেমন হয়?’

পরক্ষণে সাকিব আরও যোগ করেন, ‘মাশরাফি ভাই দলে আসলে পেস বোলিং ডিপার্টমেন্টটা আরও মজবুত হবে। আমরা নতুন বলে বল করার একজন যথার্থ পেস বোলার পাবো। যার আছে সুইং করানোর ক্ষমতা। যিনি নতুন লাল বল সুইং করাতে পারেন। এছাড়া ইনিংস পিছু ১৫ থেকে ২০ ওভার বোলিং করে দিতে পারেন। সেটাও আমাদের জন্য ভালোই হবে।’

জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপে একই প্রশ্নর মুখোমুখি হন জাতীয় দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনও। ‘আচ্ছা আপনি কি মনে করেন, মাশরাফিকে টেস্ট দলে প্রয়োজন? কিংবা মাশরাফি টেস্ট খেললে কি উপকার হবে?’ খালেদ মাহমুদ সুজনের ইতিবাচক জবাব, ‘হ্যাঁ, আমি মানে আমরাও চাই মাশরাফি আবার টেস্ট খেলুক।’

কেন চান ? মাশরাফির কি টেস্ট খেলার মতো ফিটনেস আছে? সুজনের ব্যাখ্যা, ‘অবশ্যই ফিটনেসের বিষয়টি খুঁটিয়ে দেখা হবে সবার আগে। মাশরাফির পাঁচদিন মাঠে থাকা, লম্বা স্পেলে না হোক একেক ইনিংসে অন্তত ২০ ওভার করে বোলিং করা এবং খেলার মতো শতভাগ ফিটনেস আছে কি-না? তাতো অবশ্যই খুঁটিয়ে দেখা হবে। সেটা দেখবেন ফিজিও। মাশরাফি নিজেই আসলে সবচেয়ে ভালো বলতে পারবে সে টেস্ট খেলতে পারবে কি পারবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘হ্যাঁ, আমার মনে হয় মাশরাফি টেস্ট খেলতে পারলে আমাদের দলের উপকার হবে। পেস বোলিং ডিপাটমেন্টের শক্তি অবশ্যই বাড়বে।’

সুজনের শেষ কথা, ‘আমি বিশ্বাস করি, মাশরাফি যদি টেস্টে আবার দলে ফেরে তাহলে অবশ্যই ভালো খেলবে। তার সাহস এবং ভালো খেলার আকাঙ্ক্ষা দুর্নিবার। যে ফরম্যাটেই হোক, মাশরাফি মাঠে নামলে ঠিক পারফরম করে। টেস্ট খেলতে নামলেও ঠিক ভালো করবে। সে, মেধা-প্রজ্ঞা ও সামর্থ্য পুরোপুরিই আছে তার।’

তা আছে পুরোপুরিই। এখনো মাশরাফিই বাংলাদেশের এক নম্বর পেস বোলার। কোনো রকম আবেগতাড়িৎ সংলাপ নয়। এইতো এবারের প্রিমিয়ার লিগেই মিলেছে তার প্রমাণ। প্রচণ্ড গরমে গড়-পড়তা প্রায় ম্যাচে ১০ ওভার বোলিং কোটা পূর্ণ করা নড়াইল এক্সপ্রেস ৩৯ উইকেট দখল করে সর্বাধিক উইকেট শিকারি।

শুধু উইকেট শিকারে সবার ওপরে নয়, প্রতি ম্যাচে গড়-পড়তা প্রাথমিক ব্রেক থ্রু এনে দেয়া এবং মাঝখানে ও শেষ দিকে যখনই বল করেছেন, তখনই বোলিং ক্যারিশমা দেখিয়েছেন মাশরাফি। তাতেই প্রমাণ মিলেছে, মধ্য তিরিশের মাশরাফি এখনো দেশসেরা পেসার।

টেস্টে তার অন্তর্ভুক্তি অবশ্যই বাংলাদেশের বোলিংকে শক্তিশালী করবে, সন্দেহ নেই।

এআরবি/আইএইচএস/পিআর