বাইসাইকেল কিক। ফুটবলে খুবই পরিচিত একটি শব্দ। তবে, এই কিকটির দেখা পাওয়া যায় কালে-ভদ্রে। বিখ্যাত কোনো ফুটবলারই হয়তো এই কিকে শট করে প্রতিপক্ষের জালে বল জড়িয়ে দিতে পারেন। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো বাইসাইকেল কিকের অপূর্ব প্রদর্শনী করলেন। তুরিনের আলিয়াঞ্জা স্টেডিয়ামে রোনালদোর এমন অসাধারণ গোল দেখে হতবাক উপস্থিত দর্শকরাও।
Advertisement
প্রতিপক্ষ জুভেন্টাসের সমর্থকরা উঠে দাঁড়িয়ে স্যলুট জানালেন রোনালদোকে। রোনালদোর কোচ জিদান তার এমন গোল দেখে তো যারপরনাই বিস্মিত। মাথায় হাত দিয়ে অবিশ্বাসের ভঙ্গি প্রকাশ করতেও দেখা গেছে তাকে। আর জুভেন্টাসের কিংবদন্তি গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি বুফন তো এমন গোলের জন্য রোনালদোকে অভিনন্দনেই জানালেন। ম্যাচ শেষে বলেও দিলেন, এ ধরনের গোল হজম করাও সম্মানের।
বাইসাইকেল কিকটা আসলে কি? ইন্টারনেট ঘাঁটলেই পরিস্কার হয়ে যাবে বিষয়টা। ইন্টারনেট ভিত্তিক তথ্যসম্ভার উইকিপিডিয়ায় বলা হয়েছে, বাইসাইকেল কিক এমন একটি শারীরিক অবস্থান, যখন একজন ক্রীড়াবিদ তার খেলার সরঞ্জামটিকে (সাধারণত: বল) কোনো কিছুতে ভর না দিয়ে তার শরীর শূন্যে ভাসিয়ে মাথার উপর দিয়ে পেছনে ছুড়ে মারেন। এটিকে কখনো কখনো ‘কাচিঁ কিক’ বা ‘ওভারহেড কিক’-ও বলা হয়।
কিকটা তখনই সফল হয়, যখন সেটা নিখুঁতভাবে প্রতিপক্ষের জালে জাড়িয়ে যায়। শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখাও এখানে বড় একটি বিষয়। গোল পোস্টের পরিমাপ ঠিক রেখে মাথার ওপর দিয়ে পেছন থেকে কিক করে সেখানে বল জড়ানো কোনো পূর্ব পরিকল্পনা করে করা যায় না। এটা হয়ে যায় আচমকা। তবে, এর জন্য যে কঠোর সাধনা প্রয়োজন, তা যুগে যুগে দেখিয়েছেন ফুটবলাররা।
Advertisement
তবে রোনালদোর গোলটা সম্ভবত তার নিজেরই পরিকল্পনার ফসল। কাউকে হয়তো মুখ ফুটে কিছু বলেননি; কিন্তু কাজ দিয়ে প্রমাণ করেছেন। কারণ, ম্যাচের আগেরদিন সোমবার রিয়ালের অনুশীলনে রোনালদোকে দেখা গিয়েছিল এমন বাইসাইকেল কিকের অনুশীলন করতে। কথায় বলে, ‘প্র্যাকটিস মেকস অ্যা ম্যান পারফেক্ট।’ রোনালদো তারই বাস্তবায়ন ঘটালেন যেন।
জুভেন্টাসের বিপক্ষে বাইসাইকেল কিক নেয়ার আগেরদিনই এই কিক নিয়ে কঠোর অনুশীলন করেন রোনালদো
মঙ্গলবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়ন জুভেন্টাসের বিপক্ষে তাদেরই মাঠে ম্যাচের ৬৪তম মিনিটে বাইসাইকেল কিকের এই অসাধারণ গোলটি করলেন রোনালদো। দানি কার্ভাহলের পাস থেকে ভেসে আসা বলটিতে বাইসাইকেল কিক নেন রোনালদো। ২.৩০ মিটার (৭ ফুট ৭ ইঞ্চি) শূন্যে লাফিয়ে উঠে কিকটি নেন সিআর সেভেন।
ঘটনাটা এত দ্রুত ঘটে যায় যে, কেউ কিছুই বুঝে উঠতে পারেননি। জুভেন্টাসের কিংবদন্তি গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি বুফন তো অবিশ্বাসের দৃষ্টি নিয়ে বলের দিকে তাকিয়ে ছিলেন তখন। এর আগেই অবশ্য তার গোলে এগিয়ে গিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। জোড়া গোল উপহার দিলেন তিনি জুভদের বিপক্ষে।
Advertisement
ম্যাচ শেষে রোনালদো নিজেই জানিয়ে দিলেন, এমন গোল যে করবো সেটা চিন্তাতেই ছিল না। জুভেন্টাস কিংবদন্তি বুফন জানিয়ে দিলেন, রোনালদোর তুলনা শুধু পেলে-ম্যারাডোনার সঙ্গেই সম্ভব।
দেখুন রোনালদোর সেই অবিশ্বাস্য গোলের ভিডিও
আইএইচএস/আরআইপি