নেপালের কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্তে নিহত যেসব বাংলাদেশির মরদেহ শনাক্ত করা গেছে তাদের মরদেহ আগামীকাল দেশে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন ইউএস-বাংলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইমরান আসিফ।
Advertisement
রোববার নেপালে টিচিং হাসপাতালের মর্গের বাইরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
ইমরান আসিফ বলেন, আজ বিকেল ৪টায় মরদেহের গোসল হবে, কফিনে ঢুকানো হবে। সোমবার সকাল ৬টায় মরদেহ নেপালে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসে নেয়া হবে। সেখানে জানাজা শেষে সকালে নিহতদের স্বজন ও ডাক্তাররা ঢাকায় রওনা হবেন। পরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বিমানে মরদেহগুলো দেশে পাঠানো হবে।
এদিকে সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বিমান দুর্ঘটনায় আহত বেশ কয়েক জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়েছি এবং চিকিৎসা দিচ্ছি। আমরা এই মুহূর্তে জানতে পেরেছি শাহীন ব্যাপারি নামের আহত একজন ইতোমধ্যে ফ্লাই করেছেন, তিনি বিকেল নাগাদ ঢাকায় চলে আসবেন। বার্ন ইউনিটে অন্যান্য রোগীর মতো তাকে ভর্তি করাব। আগামীকাল কবির হোসেন নামে আরেকজন আসবেন। তিনি আজ আসতে পারেননি কারণ তাকে পুরোপুরি শুইয়ে আনতে হবে। কিন্তু আমাদের বিমান তাকে শুইয়ে আনতে প্রস্তুত নয়।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে দুইজন রোগী সিঙ্গাপুরে ভর্তি আছেন। এরমধ্যে রয়েছেন ড. রেজওয়ান এবং ইমরানা কবির। তারা দুইজনই সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন।’
‘আজকে জেনেছি ইয়াকুব আলী নামে একজন রোগী আজকে বিকেল ৪টায় একটি স্পেশাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে। অভিভাবকদের ইচ্ছাতে সেখানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’
আবুল কালাম আজদ আরও বলেন, ‘আমাদের ফরেনসিক চিকিৎসক অধ্যাপক সোহেল নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাসে কাজ করছেন তিনি আমাদের জানিয়েছেন, গতকাল ৩২টি মৃতদেহ চিহ্নিত করতে পেরেছেন। এরমধ্যে ১৭ জন বাংলাদেশি ১৪ জন নেপালের অধিবাসী ও একজন চীনের অধিবাসী। বাংলাদেশি ২৬টি মৃতদেহের মধ্যে আমরা ১৭ জনকে চিহ্নিত করতে পেরেছি। বাকি ৯ জনকে এখনও চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। তারা ধারণা করছেন এই ৯ জনের মধ্যে ৩ থেকে ৪ জনকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে ডিএনও টেস্ট করা ছাড়াই। যে কয়জনের ডিএনএ টেস্ট লাগবে, ডিএনএ টেস্ট করা হবে। আমাদের দূতাবাস থেকে নেপাল সরকারের জন্য একটি চিঠি তৈরি করা হচ্ছে এই চিঠি দেয়ার পর অনুমতি পেলে তাদের ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহ করা হবে।’
‘আমরা জেনেছি যাদের ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে, আগামীকালের মধ্যে চিহ্নিত করা সম্ভব হবে তাদের আগামীকালকেই বাংলাদেশে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হবে। ইউএস বাংলা এই লাশগুলো বহনের চেষ্টা করছে, কিন্তু তাদের একবারে ১৫টির বেশি লাশ বহনের ক্ষমতা নেই। এজন্য তারা সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করছে, বিশেষ কোনো বিমানে তাদের আনা যায় কি না,’ বলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক।
Advertisement
তিনি বলেন, ‘নেপাল কর্তৃপক্ষ, আমাদের দূতাবাস সবাই মিলে আলাপ করছে। এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত এটা আমরা বলতে পারছি না। সর্বশেষ যে তথ্য আমরা পেয়েছি সেটা অবহিত করলাম।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের একটি মেডিকেল টিম নেপালে কাজ করছে। এ ছাড়া আমরা এখানে সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। অন্যান্য সংকটের মতো এটা আমরা সফলভাবে মোকাবেলা করছি এবং করব।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘মেডিকেল টিমের সবাই একে একে সব রোগীকে দেখেছি। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ চলছে। রোগীদের মধ্যে একমাত্র শেহরিনেরই অপারেশন করতে হবে। তার মেন্টাল কন্ডিশন আরেকটু স্ট্যাবল হলে আমরা সার্জারিতে যাব।’
১২ মার্চ ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিএস-২১১ নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। ৬৭ যাত্রী ও চার ক্রুসহ দুপুর ২টা ২০ মিনিটে বিমানটি বিমানবন্দরের পাশের একটি ফুটবল মাঠে বিধ্বস্ত হয়। এতে ৫১ যাত্রীর প্রাণহানি ঘটে। বাকিদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতলে ভর্তি করা হয়।
বিমানটিতে ৬৭ যাত্রীর মধ্যে বাংলাদেশি ৩২ জন, নেপালি ৩৩ জন, একজন মালদ্বীপের ও একজন চীনের নাগরিক ছিলেন। তাদের মধ্যে পুরুষ যাত্রীর সংখ্যা ছিল ৩৭, নারী ২৮ ও দু’জন শিশু ছিল।
এআর/আরএমএম/এনএফ/এমএস/জেআইএম