সিরিয়ার দামেস্কের কাছে বিদ্রোহী অধ্যুষিত পূর্বাঞ্চলীয় ঘৌটা শহরে সিরীয় বাহিনীর বিমান হামলায় শতাধিক বেসামরিক নিহত হয়েছে। দেশটিতে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউমেন রাইটস জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ২০ জনই শিশু। সোমবার কয়েক দফা বিমান ও রকেট হামলা চালানো হয়। খবর বিবিসি।
Advertisement
মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, ২০১৩ সালের পর সবচেয়ে ভয়াবহ দিন ছিল সোমবার। একদিনেই সেখানে কয়েক দফা বিমান হামলায় শিশুসহ শতাধিক বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, বিমান ও রকেট হামলায় ৪৭০ জন আহত হয়েছে। এদের কয়েকজনের অবস্থা বেশ আশঙ্কাজনক।
সেনাবাহিনী স্থলপথেও অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় বোমা হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। পূর্বাঞ্চলীয় ঘৌটা শহরে প্রায় ৪ লাখ মানুষ বাস করে। ২০১৩ সালে ওই অঞ্চল দখল করে নেয় বিদ্রোহীরা। রাজধানী দামেস্কের কাছে এটাই বিদ্রোহীদের শেষ ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।
ওই এলাকার দখল নিতে চলতি মাসের শুরু থেকেই সেখানে অভিযান শুরু করেছে সিরীয় বাহিনী। সরকারি বাহিনীর এসব হামলায় কয়েকশ মানুষ নিহত এবং আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
Advertisement
এদিকে, উত্তরাঞ্চলীয় সিরিয়ায় কুর্দি যোদ্ধাদের সহায়তা না দেয়ার জন্য সরকারি বাহিনীকে সতর্ক করেছে তুরস্ক। রোববার থেকে শুরু করে ঘৌটা শহরে কয়েক দফা বিমান হামলায় শুধুমাত্র বেসামরিক হতাহতের ঘটনাই ঘটেনি বরং বেসামরিকদের বেঁচে থাকার বিভিন্ন অবলম্বনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানকার বেশ কিছু বেকারি, গুমাদঘর হামলার শিকার হয়েছে। ফলে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বড় বড় রাস্তাও হামলার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে অ্যাম্বুলেন্স বা ত্রাণবাহী যানবহন চলাচলও বন্ধ হয়ে হয়ে গেছে।
হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বেশ কিছু চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রও হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সোমবার চারটি অস্থায়ী হাসপাতাল বন্ধ ছিল। এর মধ্যে একটি প্রসূতি মায়েদের চিকিৎসা প্রদানে কাজ করছিল।
হামৌরিয়া শহরে সোমবার কয়েক দফা বিমান হামলায় কমপক্ষে ২০ জন নিহত হয়েছে। ওই এলাকার একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, বোমা হামলায় ভেঙে পড়া ও ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি-ঘর থেকে লোকজন পালিয়ে যাচ্ছে।
সামনের মাসেই সিরীয় সংঘাতের সাত বছর পূর্ণ হবে। এই কয়েক বছরে সিরিয়ায় বিমান হামলায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। সংঘাতের কারণে দেশটি থেকে পালিয়েছে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। সেখানে কয়েক লাখ মানুষ মানবিক সঙ্কটে দিন কাটাচ্ছে।
Advertisement
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলছে ২০১৫ সালের পর একদিনে বেসামরিক লোক নিহত হবার এটাই সর্বোচ্চ সংখ্যা। রাজধানী দামেস্কের নিকটবর্তী এই এলাকাটিতে এখন সরকারি বাহিনী যে অভিযান চালাচ্ছে, এমন তীব্র আক্রমণ গত কয়েক বছরে দেখা যায় নি।
ওই এলাকাটি জয়েশ আল-ইসলাম,আল-রহমান কোর এবং হায়াত তাহরির আল-শাম বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রাজধানী দামেস্কের কাছে এটাই একমাত্র বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকা। বিদ্রোহীরা মর্টার আক্রমণ চালিয়ে জবাব দেবার চেষ্টা করছে কিন্তু সরকারি বাহিনীর অস্ত্রের ক্ষমতা অনেক বেশি। অনেকে আশংকা প্রকাশ করেছেন যে, এখানে হয়তো আলেপ্পোর মতই অবস্থা তৈরি হতে পারে।
টিটিএন/আরআইপি