বাগেরহাটের শরণখোলায় বাবার অপরাধের শাস্তি হিসেবে তারই শিশু সন্তানকে টিসি (বিদ্যালয় পরিত্যাগপত্র) ধরিয়ে দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
Advertisement
ঘটনাটি ঘটেছে শরনখোলা উপজেলার রায়েন্দা বাজারের ‘শরণখোলা আইডিয়াল ইনস্টিটিউট’ নামের একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
রায়েন্দা বাজারের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো. মাসুদ আলী শেখ জানান, ২০১৭ সালে মাসুদ শেখের শিশু সন্তান আব্দুল্লাহ আল জিহাদকে (৬) শরণখোলা আইডিয়াল ইনস্টিটিউটের প্লে গ্রুপে ভর্তি করেন।
কিন্তু ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মাসুদ গংদের বাড়ির সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ থাকায় জেলা জজ কোর্টে তার পরিবারের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়। যা বর্তমানে বিচারাধীন।
Advertisement
গত ২৪ নভেম্বর জেলা আইনজীবী কমিশনের পক্ষ থেকে বিবাধমান ওই সম্পত্তি পরিমাপসহ সরেজমিনে পরিদর্শনে বাগেরহাট আদালতের এক আইনজীবী ওই প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকায় আসেন।
ওই সময় মাসুদ শেখ উকিল কমিশনকে সহায়তা করেন এবং কমিশনের নির্দেশে শরণখোলা আইডিয়াল ইনস্টিটিউট সংলগ্ন এলাকায় একটি লাঠি পুঁতে দেন।
বিষয়টি ওই সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নজরে এলে তারা তাৎক্ষণিক ম্যানেজিং কমিটির কয়েকজন সদস্যকে অবহিত করেন। পরে ম্যানেজিং কমিটির দুই সদস্য মাসুদের কাছে লাঠি পোঁতার কারণ জানতে চান।
এ নিয়ে উভয় পক্ষের কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে খবর পেয়ে শরণখোলা থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মাসুদ ও তার ভাগিনা স্কুলছাত্র শাকিলকে আটক করে এবং পরবর্তীতে মাসুদসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। ওই মামলায় প্রায় ২০ দিন জেল খেটে জামিনে মুক্তি পান মাসুদ।
Advertisement
এদিকে মাসুদ শেখের ছেলে শিশু জিহাদ প্লে গ্রুপের বার্ষিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও হঠাৎ ২০১৮ সালের নার্সারি ক্লাসে তাকে ভর্তি করাতে অপরগতা প্রকাশ করেন অধ্যক্ষ মো. উসমান গনি। এরপর একাধিকবার শিশু জিহাদ ভর্তির জন্য নানা অনুনয় বিনয় করেও স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি।
পরবর্তীতে মাসুদ তার ছেলের ভর্তির জন্য ম্যানেজিং কমিটির বিভিন্ন সদস্যের কাছে একাধিকবার ধরনা দিয়েও শিশু জিহাদের ভর্তি আবেদন পূরণ করতে পারেননি। সর্বশেষ গত ৩১ ডিসেম্বর তার ছেলেকে টিসি ধরিয়ে দেয় শরণখোলা আইডিয়াল ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ।
এ বিষয় রায়েন্দা ইউপি চেয়ারম্যান ও যুবলীগের আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান মিলন জানান, শিক্ষা প্রত্যেক শিশুর মৌলিক অধিকার। জিহাদের বাবা কোনো অপরাধ করলে দেশে আইনের শাসন রয়েছে। বিষয়টি আইনিভাবে সমাধান করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে জিহাদের প্রতি যে আচরণ করা হয়েছে তা ন্যাক্কারজনক।
শরণখোলা আইডিয়াল ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মো. উসমান গনি জানান, অভিভাবক হিসেবে মাসুদ আমার কাছে তার ছেলের টিসি দাবি করেন। তাই টিসি দেয়া হয়েছে। তবে তাকে যে শর্ত দেয়া হয়েছিল তা তিনি মানতে রাজি হননি।
শওকত আলী বাবু/এএম/পিআর