‘মাফলার বীর’ থেকে এবার ‘ট্রেন রক্ষার বীর সৈনিক’ উপাধি পেয়েছে রাজশাহীতে ট্রেন রক্ষা করে আলোচনায় আসা দুই শিশু সিহাবুর রহমান (৬) ও লিটন আলী (৭)। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে এ উপাধি দিয়েছে রেলপথ বিভাগ।
Advertisement
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে ওই দুই শিশুর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক খায়রুল আলম। রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হকের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দিতে এ আয়োজন করে পশ্চিমাঞ্চল রেল। ওই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির আসন অলঙ্কৃত করে ওই দুই শিশু।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক সাবাহ উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সিহাব ও লিটনের হাতে তুলে দেয়া হয় সম্মাননা স্মারক। তাদের বাবা-মায়ের হাতে রেলপথ মন্ত্রীর পক্ষ থেকে পুরস্কার হিসেবে তুলে দেয়া হয় ৫০ হাজার করে এক লাখ টাকা। এছাড়া পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে শ্রমিক লীগের পক্ষ থেকেও দেয়া হয় আর্থিক পুরস্কার। এর আগে দুই মাফলার বীরকে ফুলের শুভেচ্ছায় সিক্ত করে রেল বিভাগ।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক খায়রুল আলম ট্রেন রক্ষাকারী দুই শিশুর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠেন।
Advertisement
অনুষ্ঠানে সিহাব ও লিটন জানায় তাদের অনুভূতি। তারা বলে, রেললাইনের পাশে খেলতে গিয়ে তারা ক্ষতিগ্রস্ত লাইন দেখতে পায়। এরপরই তারা বাড়ি থেকে লাল মাফলার নিয়ে গিয়ে তা রেললাইনের ওপর টেনে ধরে। এরপর ট্রেনটি থামিয়ে দেয় চালক। পরে ট্রেন চালক নেমে গিয়ে তাদের সালাম দেয়।
বক্তব্য দেন দুই শিশুর বাবা-মায়েরাও। তারা বলেন, তাদের ছোট এই সন্তানেরা ট্রেন থামিয়ে এমন বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেবে তা তারা ভাবতেও পারেননি। এখন তারা তাদের সন্তানদের নিয়ে গর্বিত। তারা চান প্রতিটি ঘরেই এমন সচেতন শিশুর জন্ম হোক। কাজ করুক দেশের জন্য।
এর আগে সকালে বাঘা উপজেলা পরিষদ হল রুমে রাজশাহী বিভাগীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিহাব ও লিটনকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। বিভাগীয় কমিশনার নূর-উর-রহমান তাদের হাতে তুলে দেন ক্রেস্ট। এছাড়া নগদ পাঁচ হাজার করে টাকা ও গরম কাপড়ও দেয়া হয় তাদের। জানানো হয় ফুলেল শুভেচ্ছা।
বাঘা উপজেলার ঝিনা গ্রামের সুমন আলীর ছেলে সিহাব এবং শহীদুল ইসলামের ছেলে লিটন। সিহাব ঝিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে এবং লিটন একই স্কুলে পড়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। একেবারেই হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান তারা। গত সোমবার বাড়ির পাশের রেললাইন ভাঙা দেখে মাফলার দেখিয়ে তেলবাহী একটি ট্রেন থামিয়ে দেয় তারা। এতে দুর্ঘটনার কবল থেকে রক্ষা পায় ৩২ বগির বিশাল ট্রেনটি।
Advertisement
এ ঘটনার পরই স্থানীয় এমপি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম দুই শিশুকে ‘আড়ানীর নায়ক’ উপাধি দিয়ে তাদের পড়াশোনার দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দেন। পরে তাদের সংবর্ধনা জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার। এছাড়া বুধবার পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগের পক্ষ থেকেও তাদের সংবর্ধনা দেয়া হয়।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরএআর/জেআইএম