মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার দুই মাস অতিবাহিত হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ওপর আক্রমণ ও বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়ার মতো ঘটনা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এরপরও রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসা বন্ধ হচ্ছে না। সহিংস আক্রমণের পথ পরিহার করে খাদ্য অবরোধে এবার রাখাইন ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। গত এক সপ্তাহে নতুন করে প্রায় ১৫ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন।
Advertisement
সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পয়েন্টে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের কড়াকড়ির কারণে রোহিঙ্গারা নৌকাযোগে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারলেও উখিয়ার আন্জুমান পাড়া সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করছেন। কিছু রোহিঙ্গা সাঁতরে নাফ নদী পার হয়েও বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় ১৯ জনসহ এ পর্যন্ত ৩৯ জন রোহিঙ্গা জারিকেনের সহায়তায় সাঁতরে নাফনদী পার হয়ে শাহপরীর দ্বীপে পৌঁছেছেন।
রোহিঙ্গাদের মতে, গোলাগুলি ও জ্বালাও পোড়াও বন্ধ করলেও রাখাইন অঞ্চল থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ পালিয়ে আসতে বাধ্য করতে নানা কৌশল নিচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এর মাঝে খাদ্য সংকট সৃষ্টি অন্যতম বলে উল্লেখ করছেন পালংখালীর আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে আসা নতুন রোহিঙ্গারা।
তারা বলেন, যারা এখনো প্রাণে বেঁচে আছেন তাদের এক প্রকার ‘অবরুদ্ধ’ করে রেখেছে মিয়ানমার সেনারা। তারা বাজারে কোনো দোকানপাট খুলে বসা কিংবা অন্য কোথাও থেকে খাবার যোগাড় করতে দিচ্ছে না। ফলে শারীরিক নির্যাতন সহ্য করেও ক্ষুধার তাড়নায় বাপ-দাদার ভিটেমাটিকে আর আঁকড়ে ধরা সম্ভব হচ্ছে না ওপারে অবস্থানরতদের। এখন বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করেছেন মিয়ানমারের বুচিদং ও রাচিদং এলাকার নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়া এলাকার বাসিন্দারা।
Advertisement
রাচিদং উপজেলার কেপ্রুদং এলাকা থেকে পালিয়ে আসা আবদুস শুকুরের স্ত্রী রাবেয়া বসরী (৩০) জানান, এখন শারীরিক নির্যাতন অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে তারা (সেনাবহিনী। তবে অবরুদ্ধ করে রেখে খাবার ও অন্যান্য অসুবিধার সৃষ্টি করছে। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি না পেয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করছেন সেখানে অবস্থানকারীরা। দিনের পর দিন ক্ষুধার যন্ত্রণা সইতে না পেরে অবশেষে তারা এপারে চলে আসতে বাধ্য হচ্ছেন।
সীমান্তে দায়িত্বপালনকারী কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর মো. ইকবাল আহমেদ জানান, শুক্রবার কুতুপালং ক্যাম্পে যাদের নেয়া হয়েছে তাদের কাছ থেকে পালিয়ে আসার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়। তারা খাদ্যসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য প্রাপ্তিতে সেনাবাহিনীর অবরোধ করে রাখার কথা উল্লেখ করেছেন। তাদের শারীরিক অবস্থা ও বাস্তবতা দেখে তাদের কথা সত্য বলে মনে হয়েছে। তাই মানবিক কারণে শূণ্য রেখা অতিক্রম করা রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে পাঠানো হয়।
নতুন করে গত এক সপ্তাহে কী পরিমাণ রোহিঙ্গা এসেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সঠিক পরিসংখ্যান বলা যাবে না। তবে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুই দিনে প্রায় ৫ হাজার রোহিঙ্গা উখিয়ার সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। তাদের উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের বিভিন্ন ব্লকে স্থান দেয়া হয়েছে।
কুতুপালং ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. রেজাউল করিম বলেন, গত এক সপ্তাহে আঞ্জুমান পাড়া সীমান্ত থেকে প্রথম পর্যায়ে ১০ হাজার এবং গত দুই দিনে ২৫০ রোহিঙ্গা পরিবারকে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা ও ত্রাণ সহায়তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
Advertisement
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, গত এক সপ্তাহে নাফ নদী পার হয়ে আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আবারও বেড়েছে। ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত এবং ক্যাম্পে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গাদের হাতে এনজিওগুলো মোবাইল তুলে দেয়ায় নতুন করে রোহিঙ্গা আসা বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রোহিঙ্গা প্রতিরোধ ও প্রত্যাবসন সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, সড়ক পথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট ও নজরদারি ফাঁকি দিয়ে দালালদের সহায়তায় অনেক রোহিঙ্গা দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে বলে খবর পাচ্ছি। নতুন করে আরও রোহিঙ্গা আসা আমাদের জন্য বাড়তি চাপের। সবাই সবার অবস্থান থেকে এগিয়ে না আসলে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হবে।
সায়ীদ আলমগীর/আরএআর/আরআইপি