বিশেষ প্রতিবেদন

কানায় হাঁটে কানার হাটে

‘বেদ বিধির পর শাস্ত্র কানাআরেক কানা মন আমার।এসব দেখি কানার হাটবাজার।

Advertisement

………

এক কানা কয় আরেক কানারেচল এবার ভব পারেনিজে কানা পথ চেনা পরকে ডাকে বারে বারে।’

লালন সাঁইজি আত্মপোলব্ধি থেকেই এমন বাণী রচনা করেছেন। সমাজে যা দেখেছেন, তা থেকেই অমর সৃষ্টি রচনা করেছেন। লালন সাঁইজি জীবনের শেষবেলা পর্যন্ত অনুরাগ দিয়েই সাধন-ভোজন করেছেন। অনুরাগের মধ্য দিয়েই মনের মানুষ খুঁজেছেন সাঁইজি।

Advertisement

খুঁজে ফিরেছেন ‘মানুষ রতন’, যাকে কখনও ‘মনের মানুষ’, ‘পড়শী’, ‘অচিন পাখি’ আবার কখনও ‘সহজ মানুষ’ বলে ডেকেছেন লালন ফকির।

লালন ভক্তরাও ‘মনের মানুষ’ খুঁজে ফিরতে দিশেহারা। তারা সবাই যেন জগত কানা। কেউ পেয়ে হারিয়েছেন, কেউ আবার পাবার আশায় অন্ধাকার পথে হাতড়িয়ে ফিরছেন।

পরনে সফেদ লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া আর মাথায় গেরুয়াই সংসারত্যাগী মানুষগুলোর মনের খবরও বলে দিচ্ছে, তারা আসলে কি খুঁজতে বেরিয়েছে। তারা সবাই যেন জগত কানা। কেউ পেয়ে হারিয়েছেন, কেউ আবার পাবার আশায় অন্ধাকার পথে হাতড়িয়ে ফিরছেন।

সংসারত্যাগী মানুষেরা কেউ এসেছেন এক কাপড়েই। নারী বসনেও সাদার ছড়াছড়ি। এরা জাতে বিশ্বাসী নয়। সাদায় জাত চেনা যায় না। সাদায় রং থাকে না, হিংসা থাকে না। সাদাতেই কালো দূর হয়।

Advertisement

এমনটিই মনে করেন সাধক কোরবান শাহ। তিনিও প্রায় তিন দশক ধরে লালনের ধামে আসেন। বলছিলেন, এমন সাধুসঙ্গ দুনিয়ার আর কোথাও মেলানো ভার। লালন আমাদের পথ দেখিয়েছে। ও পথেই মুক্তি। সমাজে এত হিংসা। কেউ কাউকে চিনি না। সবাই কানা। অথচ এই মানুষেই খোদার ভর। মানুষ না চিনলে খোদা মিলবে কী করে? তাইতো সাঁইজির কালাম ‘এসব দেখি কানার হাটবাজার’। দুনিয়া অস্থির সময় পার করছে। এমন সময় লালনের বাণী অমৃত। ‘মানুষ ভোজলে সোনার মানুষ হবি।’ সাঁইজি মানুষেই ঈশ্বর, মানুষেই ধর্ম খুঁজেছেন। মানবের ঊর্ধ্বে আর কী আছে? লালন জাত- বেজাতের ধার ধারেনি। রক্তের রং আলাদা না হলে মানুষের জাত আলাদা হবে কেন?

কুষ্টিয়ার কালীগঙ্গার তীরে আখড়াবাড়ির আনাচে কানাচে কোরবান শাহর মতো হাজারও সাধু-ভক্ত মনের মানুষ খুঁজে ফিরছেন। খুঁজছেন নিজেকে, নিজের আত্মাকে। যে আত্মায় ভর করে আছে পরমাত্মা। পরমাত্মার দর্শন মানেই তো মনের মানুষের সঙ্গে মহামিলন। এমন মিলনের সাধনায় সাধকেরা সর্বহারা। সংসার, সমাজ সব হারিয়ে অন্ধের মতো হাতড়াচ্ছেন মনের মানুষের সন্ধানে।

এসএসএস/এএইচ/আইআই