জাতীয়

এখন আমরা কোথায় যাবো

সর্বহারা মানুষের চোখের জলে ভাসছে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ সড়ক। রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গাদের বেঁচে থাকার আকুতিতে থমকে গেছে বিশ্ব মানবতা। ঘর নেই। খাবার নেই। পায়ের তলায় মাটিও নেই। জীবন বাঁচাতে পরদেশে এসে অথৈ সাগরে হাতড়িয়ে ফিরছেন। জীবনের মানে এখানে শুধুই বেঁচে থাকার লড়াই।

Advertisement

টেকনাফ সড়কের দু’ধারে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। স্রোতের মতো ভেসে আসছে রোহিঙ্গারা। সামান্য পলিথিনেও ঘর বানানোর জায়গা মিলছে না। রোবাবার বিকেলেও কয়েক হাজার রোহিঙ্গা এসেছে কক্সবাজারের বালুখালি, কুতুপালং এলাকায়। সব হারিয়ে শূন্য হাতে এসে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় খুঁজছেন তারা। অনেকের তাও মিলছে না। দিনের পর দিন পায়ে হেঁটে এসে রাস্তার ধারেই বসে পড়ছেন। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আর কাদায় ভর করেই জীবনযুদ্ধে সামিল হয়েছেন রোহিঙ্গারা।

রোববার বিকেলে রাস্তার ধারে চার সন্তানকে নিয়ে বসে চাতকের মতো চেয়ে আছেন রোহিঙ্গা নারী জহুরা বেগম। রাস্তার ধারে কাদার উপরে পুটলি রাখা। তাতে ভর করে বসে আছে ৬ বছরের সন্তান মাজেদ। কোলে ইয়াছির আট বছরের সন্তান। অন্য দুই ছেলে ওয়াহেদ ও ওবায়েদও মাকে ঘিরে বসে আছে। স্বামী শাহিদ কাছেই দাঁড়িয়ে ত্রাণের খাবারের জন্য পথ চেয়ে।

টানা চারদিন পাহাড়ের পথ মাড়িয়ে মিয়ানমারের মন্ডু উপজেলা থেকে বাংলাদেশের বালুখালি এসে পৌঁছেছেন শাহিদের পরিবার। রাত কেটেছে জঙ্গলে জঙ্গলে। বাংলাদেশে এসে প্রাণ রক্ষা পেয়েছে কিন্তু মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতে দিশেহারা। কোথায় যাবে অবুঝ চার সন্তানকে নিয়ে? কে দেবে খাবার? ক্লান্ত শরীর আর বিষণ্ন মনে স্বামী শাহিদের পানে চেয়ে জহুরা জানতে চায় ‘এখন আমরা কোথায় যাবো’।

Advertisement

জহুরার প্রশ্ন শেষ হয়, কিন্তু উত্তর মেলে না। স্বামীর নিরবতায় বিষণ্ন নয়নে মুখ ফেরায় জহুরা। মায়ের মুখে চোখ রেখে নিরাশ হয় সন্তানেরাও।

পৈতৃক সম্পত্তি পেয়ে সুখে-শান্তিতে দিন কাটছিল শাহিদের। চারদিন আগে সব জ্বালিয়ে দিয়েছে মিয়ানমারের সেনারা। গ্রামের অনেক যুবককেই হত্যা করেছে বলে জানালেন তিনি। আগুন দেয়ার সময় গর্তে লুকিয়েছিলেন শাহিদ। পরে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে রওনা দেন বাংলাদেশের দিকে।

আরাকান প্রদেশের রাসিডং থেকে পালিয়ে এসেছেন মনতাজ আলী। দুই ছেলের খবর জানেন না মনতাজ। ছেলেদের ঈদের আগে ধরে নিয়ে গেছে মগরা। স্ত্রী, ছেলের বউ আর তিন নাতি-নাতনি নিয়ে রোববার দুপুরে এসে রাস্তার পাশে বসেছেন মনতাজ। কোথায় ঠাঁই নেবেন কোনো ঠিকানা মিলছে না। গ্রামের অন্যরা কোথায় আছেন, তারও খবর জানেন না।

জীবনের ঘানি টেনে শেষ বেলায় দেশ ছাড়তে হবে, তা কখনোই কল্পনা করেননি তিনি। বলেন, অনেক গণ্ডগোল হয়েছে আগে। কিন্তু এভাবে হত্যা, আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেনি। দেশ ছাড়ার কথা কল্পনাও করিনি। সব হারিয়ে এখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছি।

Advertisement

এএসএস/এআরএস