আর ৫ দিন বাদেই ঈদুল আজহা। বন্যার কারণে নওগাঁর পশু খামারি, ব্যবসায়ী ও গৃহস্থরা পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। বন্যায় বিশেষ করে গো-খাদ্যের তীব্র সংকট চলছে জেলা জুড়ে। যার কারণে হাটগুলোতে এতদিন তেমন করে পশু আমদানি হয়নি। তবে শুক্রবার থেকে হাটগুলো জমতে শুরু করেছে দেশি পশুতে। দাম যাই হোক না কেন পশু বিক্রি করতে হাটে তুলছেন ব্যবসায়ী ও গৃহস্থরা।
Advertisement
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নওগাঁয় ছোট-বড় ১০৮টি হাট-বাজার রয়েছে। স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে ৩৮টি। এর মধ্যে নওগাঁ সদরের ত্রি-মোহনী, মান্দা উপজেলার চৌবাড়িয়া, সুতিহাট, নিয়ামতপুরের ছাতড়া হাট, মহাদেবপুরের মাতাজী, বদলগাছীর কোলা ও গোবরচাপাহাট, আত্রাইয়ের আহসানগঞ্জ, পত্মীতলার মধইল, ধামইরহাটের ইসবপুর, আগ্রাদ্বিগুন, রাণীনগরের আবাদপুকুর, সাপাহারের উমইল ও দিঘীর হাট, পোরশার গাংগুরিয়া ও মর্শিদপুর পশু কেনাবেচার বড় হাট।
জেলার ঐতিহ্যবাহী হাট বদলগাছী উপজেলার কোলা হাট। ঈদ মৌসুমে এ হাটে প্রায় ৭-১০ কোটি টাকার বেচাবিক্রি হয়ে থাকে। ঈদের সময় ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে জেলার বড় হাটগুলোতে ব্যবসায়ীদের আগমন ঘটে। তবে এবছর বন্যার কারণে পশুর বাজারে ধস নেমেছে। যার কারণে এবার বাইরে থেকে তেমন বড় ব্যবসায়ীদের আগমন হয়নি হাটে।
এবারও হাটে প্রচুর গরু-ছাগলের আমদানি হয়েছে। পশুর দাম তুলনামূলক কম। ব্যবসায়ী, গরু খামারি এবং গৃহস্থদের লোকসানের যেন শেষ নেই। এছাড়া অনেক বেকার যুবক যারা কর্মসংস্থানের জন্য পশু লালন পালন করেছে তাদের অবস্থাও এবার করুন। তবে দাম না হওয়ায় অনেককে গরু ফেরত নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
Advertisement
বদলগাছীর কোলা হাটে গরু বিক্রির জন্য এসেছেন ব্যবসায়ী দুলাল হোসেন। তিনি বলেন, এবার ঈদ উপলক্ষে ১০টি লাল রঙের গরু কিনেছি। প্রতিটি গরু ৫০-৬০ হাজার টাকা থেকে সর্বচ্চো মূল্য ১ লাখ ১০ হাজার টাকা করে। বন্যার কারণে গরুর বাজার এখন অনেক কম। যারা বাড়ির গরু বিক্রি করবে তাদের তো আর লাভ বা লোকসানের কোনো যুক্তি আসে না। তবে আমার প্রতিটি গরুতে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকার মতো লোকাসান গুনতে হবে।
উপজেলার ফতেপুর গ্রামের সোহরাব হোসেন বলেন, তার ষাঁড়টির দাম হাঁকছেন ৬০ হাজার টাকা। বাড়িতে বেপারিরা ৫০ হাজার টাকা দাম বলেছেন। তাদের দাম পছন্দ না হওয়ায় হাটে নিয়ে এসেছেন।
উপজেলার পারসোমবাড়ীর মামুন হোসেন বলেন, বন্যায় চারিদিক প্লাবিত। বাড়িতে লালন পালন করা খাসি হাটে নিয়ে এসেছি। যে খাসিটির দাম ১৮-২০ হাজার টাকা হওয়ার কথা ক্রেতারা সেটির দাম হাকছেন ১২-১৫ হাজার টাকা। গবাদিপশুর খাবারের সমস্যার কারণে দাম অনেকটাই কমে গেছে।
বদলগাছীর কোলা হাট ইজারাদার শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, গত ১৪-১৫ দিনে বন্যার কারণে হাটে তেমন পশুর আমদানি না থাকায় বেচাবিক্রি ছিল না। তবে বন্যার পানি নেমে যাওয়া এবং ঈদ ঘনিয়ে আসায় শুক্রবার থেকে বিগত বছরগুলোর তুলনায় বিভিন্ন হাটগুলোতে প্রচুর দেশি গরুর আমদানি হয়েছে। গরুর তুলনায় দামও অনেকটা কম। বিক্রেতারা পশু বিক্রি করতে তেমন স্বাচ্ছন্দ বোধ করছেন না।
Advertisement
নওগাঁ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা উত্তোম কুমার দাস বলেন, জেলায় ছোট বড় প্রায় ৪৫৬টি খামার আছে। এবার ঈদে জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার। হৃষ্টপুষ্ট করে প্রায় ২ লাখ ৭৪ হাজার ৪৫১টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। অতিরিক্ত পশু দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হবে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের বন্যায় মারাত্মক ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন খামারিসহ গৃহস্থরা।
আব্বাস আলী/এফএ/এমএস