কুড়িগ্রামের প্রধান-প্রধান নদ-নদীগুলোতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ায় প্রায় দেড় হাজার পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্র এবং উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। সেই সঙ্গে ৫৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
Advertisement
গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী পয়েন্টে ৩৩ ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৩২ সেন্টিমিটার, তিস্তায় ৩৭ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীতে ১০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
একই গতিতে পানি বাড়লে যেকোনো সময় ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। ভারত সীমান্তবর্তী সাহেবের আলগায় ব্রহ্মপুত্রের বাম তীর রক্ষা প্রকল্পের ৯০ মিটার অংশ ধসে গেছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় ভাঙা বাঁধের ২২ কিলোমিটার উন্মুক্ত অংশ দিয়ে লোকালয়ের দিকে পানি ঢুকছে।
সরেজমিনে সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ বাড়িঘর এখনো বন্যা পানির ওপরে রয়েছে। শুধুমাত্র নিম্নাঞ্চলের বাড়িগুলোতে পানি উঠেছে। এসব পরিবারগুলো রয়েছে চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে।
Advertisement
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ারচরের বাসিন্দা আদুরী বলেন, আমাগো বাড়িতে পানি ওঠায় পোলাপানগো লইয়া আবাসনে গিয়া থাহি।
ছোট্ট নৌকায় প্রতিবেশী সাহের আলী তাদেরকে নিয়ে যাচ্ছিল। আদুরীর ছেলে আকাশ (৮) ও মেয়ে খুশি (৭) নৌকায় তখন খাচ্ছিল। আকাশ বলল, ক্ষেত খামার ভাইসা গ্যাছে। তরিকারি নাই। খুদের চালের ভাত খাইতাছি।
এই গ্রামে নতুন করে শাহজাহান, আফান আলী, শফিকুল, লালচান, মাহাবুর, তহুরুদ্দি, শাহাজামাল, তারাচান ও ছামসুলের বাড়িতে পানি উঠেছে।
পাশের খেয়ারচরের আফরোজা জানান, গত দিনদিন থেকে ঘরের ভেতর পানি উঠেছে। নিজেরা চৌকি উঁচু করে সেখানে রাত যাপন করছেন তারা। উঁচু স্থানে গবাদিগশু রাখলেও বেশ চিন্তিত এই পরিবার।
Advertisement
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় চিলমারীতে ব্রহ্মপূত্রের পানি বিপদসীমার দশমিক ৩২ সেন্টিমিটার এবং নুনখাওয়া পয়েন্টে ১ দশমিক ৯২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়া ধরলার পানি ব্রিজ পয়েন্টে দশমিক ৮১ সেন্টিমিটার এবং কাউনিয়ায় তিস্তার পানি ১ দশমিক ৫৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানান, ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ার ফলে ইউনিয়নের ১০টি চরের প্রায় এক হাজার ৬০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন জানান, গত তিনদিন অব্যাহতভাবে পানি বাড়ার ফলে ৮টি চরে প্রায় সাড়ে ৮০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। একই অবস্থা, সদরের ঘোগাদহ, উলিপুরের সাহেবের আলগা, চিলমারীর অষ্টমীরচর, নয়ারহাট, রৌমারীর শৌলমারী, বন্দবেড় ও রাজীবপুরের কোদালকাটিসহ কয়েকটি ইউনিয়নের আড়াই শতাধিক চরের মানুষের।
জেলা প্রশাসন আবু ছালেহ মো. ফেরদৌস খান জানান, কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানিগুলো বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু হয়নি। বন্যা মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আমাদের কাছে ২ লাখ টাকা ও ১০০ মেট্রিক টন চাল মজুদ রয়েছে। এছাড়া ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৫০০ মেট্রিক টন চাল ও ১৫ লাখ টাকার চাহিদা দেয়া হয়েছে।
নাজমুল হোসেন/এএম/জেআইএম