জাতীয়

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে ইউনেস্কোর আপত্তি প্রত্যাহার

রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন নিয়ে জাতিসংঘের শিক্ষাবিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো’র ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি তাদের আগের উত্থাপিত অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

Advertisement

একই সঙ্গে তারা সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে বিপন্ন তালিকায় অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত থেকেও সরে এসেছে।

বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এমন দাবি করা হয়েছে।

ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির পোল্যান্ডের ক্রাকোতে অনুষ্ঠিত ৪১তম অধিবেশনে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তাদের যুক্তি উপস্থাপন করেন। তারা যুক্তি দেখান, রামপাল প্রকল্পে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে কয়লাদূষণ থেকে সুন্দরবনের পরিবেশ রক্ষা করা যাবে।

Advertisement

ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে সর্বোত্তম ভারসাম্য রক্ষায় সহযোগিতার জন্য ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটিকে সাধুবাদ জানান। একই সঙ্গে তিনি সুন্দরবনের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় সর্বোচ্চ উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটিকে সর্বাত্মক সহযোগিতারও আশ্বাস দেন।

প্রতিনিধি দলের অপর সদস্যরা হলেন- বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ কৈকাস, ফ্রান্সে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ও ইউনেস্কোর স্থায়ী প্রতিনিধি মো. শিহাবুল ইসলাম, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জিয়াউর রহমান, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ডিজি রাইসুল আলম মণ্ডল, পিডিবির চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার খালিদ মাহমুদ, পাওয়ার সেল’র ডিজি মোহাম্মদ হোসেন, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পরিচালক ড. সুলতান আহমেদ, বন সংরক্ষণ বিভাগের জহিরুদ্দিন আহমেদ।

প্রসঙ্গত, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন নিয়ে সুন্দরবনকে বিশ্বের ঐতিহ্যের মর্যাদা থেকে বাদ দেয়ার জন্য গত ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বের ৪০টি পরিবেশবাদী সংগঠন খোলা চিঠি দেয় ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টারের কাছে। সে চিঠি আমলেও নিয়ে সংস্থাটি শুনানির আয়োজন করে।

৪ জুলাই থেকে শুরু হওয়া অধিবেশনে সুন্দরবন প্রসঙ্গ নিয়ে গত সোমবার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ এ ম্যানগ্রোভ বন রক্ষায় যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সেগুলোও তুলে ধরা হয়। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সুন্দরবনের ক্ষতি হবে না, এ বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তি উপস্থাপন করা হয়।

Advertisement

পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর অভিযোগ, রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ফলে সুন্দরবনের ব্যাপক ক্ষতি হবে। এছাড়া বনের ভেতর দিয়ে কয়লা, সার ও জ্বালানি তেলবাহী জাহাজ চলাচল করে, এগুলোর কারণেও বনের ক্ষতি হচ্ছে। এমনকি বনের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা বিভিন্ন নদীতে প্রায়ই তেল, কয়লা ও সারবাহী ট্যাংকার ডুবে জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি করছে। এগুলো বন্ধের জন্য ইউনেস্কো ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বারবার প্রয়োজনীয় সুপারিশ করা হলেও আমলে নেয়নি সরকার। এর মাঝে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবনের ওপর অত্যাচারটা আরও বেড়ে যাবে। ফলে বিপন্ন হতে পারে এর অস্তিত্ব। তাই সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে উল্টো বিপন্ন তালিকায় অন্তর্ভুক্তের সুপারিশ পরিবেশবাদীদের।

এর আগে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনের ক্ষতি করবে- এমন তথ্য দিয়ে এর আগে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কাউন্সিলের ৩৯ ও ৪০তম বার্ষিক সভায়ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এ প্রকল্প সুন্দরবনের জন্য ‘মারাত্মক হুমকি’ উল্লেখ করে তা বাতিল বা অন্যত্র সরিয়ে নিতে গেল বছরও সরকারের প্রতি লিখিত আহ্বান জানায় ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টার। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে জবাব দিলে ইউনেস্কোর একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে যায়। ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার পাঁচ মাস পর সরকারের কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠায় সংস্থাটি।

১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো থেকে সুন্দরবনকে বিশ্বের ৫২২তম বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান দেয়। কিন্তু তার কয়েক বছর পর অর্থাৎ ২০১৪ সালের ১১ জুলাই সরকারকে চিঠি দিয়ে উল্টো সতর্ক করা হয়। ইউনেস্কোর চিঠিতে বলা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় শ্বাসমূলীয় এ বনের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় সরকার ব্যর্থ হলে বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান হারাবে সুন্দরবন। নাম লেখাবে বিপন্ন বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায়। এছাড়া সুন্দরবন রক্ষায় কী উদ্যোগ নেয়া হবে তা উল্লেখ করে ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন চাইলেও এর কোনো উত্তর পায়নি ইউনেস্কো।

তবে ইউনেস্কোর মতে, শুধু রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রই সুন্দরবনের জন্য প্রধান সমস্যা নয়। এ বিদ্যুকেন্দ্রের ফলে সুন্দরবনের পাশে রামপালের উজানে আরও মারাত্মক দূষণকারী শিল্পকারখানা গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করবে।

জেপি/এমএআর/আরআইপি