আইন-আদালত

ষোড়শ সংশোধনী জাতির জনক ও জনগণের মতের পরিপন্থী

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে দিয়ে সংবিধানের আনা ষোড়শ সংশোধনী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মত ও নীতির পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।

Advertisement

তিনি বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক ও জনগণের মতের পরিপন্থী।

বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে দিয়ে সংবিধানের আনিত ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল শুনানির ৬ষ্ঠ দিন যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে রিটকারী ও রাষ্ট্রপক্ষের শেষ যুক্তি খণ্ডন করা হয়।

বুধবার যুক্তি তর্ক উপস্থাপনের সময় রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, কতিপয় সংসদ সদস্য সংসদে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন, বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদে নিয়ে আসব। শুধুমাত্র এই গ্রাউন্ডের উপর ভিত্তি করেই এই ষোড়শ সংশোধনী করা হয়েছে।

Advertisement

তিনি বলেন, এজন্য আমরা আদালতে বলেছি, এ সংশোধনী জনগণের মতামতে করা হয়নি। এখানে আর্টিকেল ৭ অনুসারে জনগণের মতামত প্রতিফলিত হয়নি। এমন কি আপিল বিভাগের রায়ের পরিপন্থী করা হয়েছে।

‘শুধু তাই নয়, ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের মহান স্রষ্টা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পার্লামেন্ট থেকে যা নিয়ে এসেছিলেন তারও পরিপন্থী ।’

বুধবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে সাত সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৯ টা ১০ মিনিট থেকে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ১০টা ২০ মিনিট পর্যন্ত যুক্তি উপস্থাপন করেন। এরপর রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ তার যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন, যা শেষ হয় ১২ টার পর।

পরে মামলায় নিয়োগপ্রাপ্ত অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমির উল ইসলাম তার বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করলে আদালত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি করেন।

Advertisement

এর আগে কয়েকদিন ধরে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা।আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, আমরা যুক্তিতে প্রথমেই ষোড়শ সংশোধনীর প্রেক্ষাপটটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আদালতের কাছে। হঠাৎ করেই ষোড়শ সংশোধনী কেন আসল? আরেকটি গ্রাউন্ডে আমরা বলেছি, অ্যাটর্নি জেনারেল আপিল বিভাগে বক্তব্য রেখেছিলেন যে, ১৫ তম সংশোধনী কাট অ্যান্ড পেস্ট হয়েছে। কোনো আলোচনা হয়নি।

‘এটার কাউন্টার হিসেবে আমরা কতগুলা প্রসিডিং দেখিয়েছি। ১৫ তম সংশোধনী যখন পাস হয়, তখন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে পার্লামেন্টের আইন পাসের মাধ্যমে প্রটেক্ট করা হয়েছিল, সে সমস্ত বিষয় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিষয়ে স্বোচ্চার ছিলেন। সেই হিসেবে ওনার নির্দেশেই ওই দিন সংশোধনী হয়েছিল।’

মনজিল বলেন, আরেকটি জিনিস আমরা বলেছি, যেটা অ্যাটর্নি জেনারেল সবসময় বলার চেষ্টা করেন যে, ৭২ এর সংবিধানে ফিরে গেছেন। এ বিষয়ে আমরা বলেছি, ৭২ এর সংবিধানের মূল স্প্রিরিট এবং যার নেৃতত্বে আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধ হয়েছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার নেতৃত্বে সংবিধান প্রণয়ন হয়েছিল। সেই সংবিধানের প্রণেতা আমাদের জাতির পিতা আামদের জাতীয় নেতা। ওনার নেতৃত্বেই জাতীয় সংসদ থেকে এ ক্ষমতাটা নিয়ে আসার একটা আইন পাস হয়েছিল ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে।

‘এটি আমরা আদালতকে দেখিয়েছি যে, বঙ্গবন্ধু নিজেই বিচারকদের অপসারণের ব্যাপারে সংসদ থেকে ক্ষমতা ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। যেটা বঙ্গবন্ধু করেছিলেন। আমরা মনে করি, তারই অনুসারী হিসেবে সেটা সমর্থন করা দরকার। যদি কেউ এটার বিরোধিতা করে তাহলে সেটা সঠিক হবে না।’

মনজিল মোরসেদ বলেন, ১৫ তম সংশোধনীতে এটা সেটেল হয়ে গেল। সবার সঙ্গে আলোচনা করে এ আইনটা করা হলো। জনগণের পক্ষ থেকে কোনো সভা-সেমিনারে কেউ কখনও কোনো ধরনের দাবি তোলেনি যে আইনটা পরিবর্তন করা দরকার।

এফএইচ/এমএমএ/ওআর/পিআর