প্রায় শেষের পথে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার হাবাসপুরের জঙ্গি আস্তানায় শুরু হওয়া বিশেষ অভিযান ‘সান ডেভিল’। অভিযানে আস্তানার ভেতরে মেলেনি কোন জঙ্গি। তবে সেখান থেকে বেশ কিছু বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে।
Advertisement
আইন-শৃংখলা বাহিনীর নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে শিগগিরই এ নিয়ে ব্রিফিং করার কথা জানিয়েছেন সেখানে দায়িত্বরত জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমিত চৌধুরী।
এর আগে শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে দ্বিতীয় দিনের মত অপারেশন ‘সান ডেভিল’ শুরু হয়। এতে অংশ নেয় ঢাকা থেকে আসা বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল ও স্থানীয় পুলিশ। অভিযান শুরুর তিন মিনিটের মাথায় কয়েক রাউন্ড শটগানের গুলির শব্দ শোনা যায়। এরপর আর কোনো শব্দ পাওয়া যায়নি।
অভিযান শুরুর পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমিত চৌধুরী ক্ষুদেবার্তায় সাংবাদিকদের জানান, জঙ্গি আস্তানায় চারটি ঘর আছে। তবে সেখানে জীবিত অবস্থায় কেউ নেই। যদিও আস্তানার ভেতরে কোনো লাশ কিংবা বিস্ফোরকদ্রব্য আছে কি না সে ব্যাপারে কিছু জানাননি তিনি।
Advertisement
এদিকে, জঙ্গি আস্তানার পাশে কেটে নেয়া ধানখেতে এখনও পড়ে আছে পাঁচ জঙ্গির লাশ। বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সময় তারা নিহত হয়। অভিযানের দ্বিতীয় দিনে এখন নিহতদের লাশগুলো উদ্ধার করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জঙ্গি আস্তানার চারপাশে এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এখনও ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। এর আগে সকাল ৮টার দিকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে গাড়ি করে এসে আস্তানার দিকে যেতে দেখা যায়। রাতে আস্তানা ঘিরে রাখা পুলিশ সদস্যরা ডিউটি বদলে ফিরে যান।
আশপাশের বাড়ির বাসিন্দাদেরও মাইকিং করে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে দেয়া হয়। জঙ্গি আস্তানায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিশেষ শাখার বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল কাজ করছে। ১২ সদস্যের বোমা বিশেষজ্ঞ এই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডিএমপির একজন উপ-কমিশনার।
বৃহস্পতিবার অভিযানে পাঁচ জঙ্গি ও এক ফায়ার সার্ভিসের কর্মী নিহত হওয়ার পর বাড়ির ভেতরে অভিযান চালানোর জন্য এই বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের জন্যই অপেক্ষা করা হচ্ছিল। তবে তারা আসতে দেরি করায় ওই রাতে অভিযান স্থগিত করা হয়। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়- শুক্রবার সকালে বাড়ির ভেতরে অভিযান চালানো হবে। এই অভিযানের নাম হবে- ‘অপারেশন সান ডেভিল’।
Advertisement
গত বুধবার রাত একটা থেকে এই অভিযান শুরু হয়। বৃহস্পতিবার বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে আটটার দিকে ওই আস্তানা থেকে কয়েকজন নারী-পুরুষ হঠাৎ বেরিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা করে। এক পর্যায়ে তারা আত্মঘাতি বিস্ফোরণ ঘটায়।
এতে পাঁচ জঙ্গি সাজ্জাদ হোসেন (৫০), তার স্ত্রী বেলি আক্তার (৪৫), ছেলে আল-আমিন (২৫), মেয়ে কারিমা খাতুন (১৭) ও বহিরাগত যুবক আশরাফুল (২৫)। এসময় জঙ্গিরা মারাত্মক ভাবে কুপিয়ে যখম করে দমকল কর্মী আব্দুল মতিনকে। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মারা যান মতিন।
পুলিশ বলছে, সাজ্জাদ ও তার স্ত্রী বেলী আক্তার কুপিয়ে হত্যা করেছেন দমকল কর্মী আব্দুল মতিনকে। আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন অন্যরা। এ সময় সাজ্জাদের আরেক মেয়ে সুমাইয়া দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে বসে তা দেখছিলেন। এর তিন ঘণ্টা পর তিনি আত্মসমর্পণ করেন।
এদিকে, নিহত জঙ্গি আশরাফুলকে দিনভর জঙ্গি সাজ্জাদের ছেলে সোয়াইব হোসেন হিসেবেই ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু জঙ্গি আস্তানা থেকে আত্মসমর্পণ করা সাজ্জাদের সুমাইয়া বেগম জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছেন, নিহত ওই জঙ্গি আশরাফুল। অভিযানের সময় তার ভাই সোয়াইব হোসেন বাড়িতে ছিলেন না। বর্তমানে এই তিনজন গোদাগাড়ী মডেল থানায়।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এফএ/এমএস