গত ২৫ মার্চ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) বার্ন ইউনিটে ভর্তি হন ছোট্ট শিশু মাহদী হোসেন (৬)। ৩২ শতাংশ পোড়া শরীর নিয়ে জীবন বাঁচানোর যুদ্ধ করছিল শিশুটি। পুড়ে যাওয়ার কারণে স্কুল যেতে পারছিল না। নিয়মিত স্কুলের বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছিল। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মাকে বলছিল, ‘মা, সিটিতে (ক্লাস টেস্ট) কত পেয়েছি? ম্যাডামদের বলে দিও আমার পা ভালো হলে আমি স্কুলে যাবো।’
Advertisement
বেঁচে থাকার আশায় ডাক্তারের পরামর্শে খাবারের অতিরিক্ত লবণ আর নিয়মিত ৩টি কলা খাওয়া শুরু করেছিল সে। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ করে তাকে চলে যেতো হলো ওপারে। ছোট্ট মাহদী আর স্কুলে যেতে পারবে না। শুক্রবার সকালে সবাইকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যায় সে।
মাহদী খিলগাঁওয়ের সাউথ পয়েন্ট স্কুলের কেজি ওয়ানের ছাত্র ছিল। তার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে একটি ছিল পড়াশোনা। মায়ের সঙ্গে প্রায়ই স্কুল, বন্ধুবান্ধব আর ম্যাডামদের গল্প করতো সে। পরিবারের অভিযোগ বিদ্যুৎ বিভাগের গাফলতির কারণে অকালে ঝড়ে যেতে হলো মাহদীকে।
২৫ শে মার্চ রাজধানীতে বজ্রসহ বৃষ্টির সময় ঝড়ে মাহদীদের বাড়ির সামনের বিদ্যুতের তারগুলো ছিঁড়ে মাটিতে পড়ে যায়। এলাকাবাসীর অনুরোধে বিচ্ছিন্ন করা হয় এলাকার বিদ্যুৎ। তারগুলো ঠিক করতে আসেন আব্দুস সাত্তার নামের এক মিস্ত্রী। তবে এলাকায় কোন ধরনের যোগাযোগ ছাড়াই হঠাৎ বৈদ্যুতিক সংযোগ চালু করে দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। তারগুলো জমে থাকা পানিতে স্পার্ক করে ঘটনাস্থলেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন মাহ্দীসহ ৪ জন। পরদিন ২৬ মার্চ মারা যান আব্দুস সাত্তার। মাহদীর সঙ্গে বাকিরাও চিকিৎসাধীন ছিলেন ঢামেক বার্ন ইউনিটে।
Advertisement
দীর্ঘ ১৩ দিন সংগ্রাম করে মারা যায় মাহদী। তবে বেঁচে থাকার খুব ইচ্ছে ছিল তার। বেঁচে থাকতে বাবা-মা, চাচা আর ডাক্তারের কথামতো খাওয়া দাওয়া করতো সে। মৃত্যুর কয়েকদিন আগেও মা ঝর্না আক্তারকে মাহদী বলেছিল, ‘মা আমি বাঁচবো তো? আমি সুস্থ হবো তো?’
মাহদীর শেষ দিনগুলো সম্পর্কে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তার ছোট চাচী অ্যাডভোকেট সৈয়দা সাবরিনা আহমেদ মলি জাগো নিউজকে বলেন, দগ্ধ মাহদীকে ডাক্তার সব খাবারে সঙ্গে একটু বেশি লবণ দিয়ে খেতে বলেছিল। নিয়মিত ৩টি কলাও খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। এসব শুনে মাহদী তার মাকে বলেছিল, ‘মা লবণ খেলে কি আমি বাঁচবো? ৩ টা কলা খেলে কি বেঁচে যাবো? তাহলে আমাকে কলা দাও।’ হাসপাতালে দেখতে আসা চাচাকে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘চাচা আমি বাঁচবোতো? উত্তরে তার চাচা বলেছেন, অবশ্যই বাঁচবে। প্রয়োজনে তোমাকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাবো। চাচার কথা শুনে পাল্টা প্রশ্ন করে মাহ্দী। চাচাকে বলে, সিঙ্গাপুর যাওয়ার টাকা আছেতো? ছেলেটি বেঁচে থাকার জন্য সবার সব কথা শুনেছে, অথচ বিদ্যুৎ বিভাগের গাফলতিতে আর তার এই অবস্থা। যাদের গাফলতিতে মাহ্দী আমাদের ছেড়ে চলে গেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেব।
তিনি আরও বলেন, শুধু বিদ্যুৎ বিভাগ নয়, মাহদীর মৃত্যুতে ঢামেক বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকদেরও অবহেলা রয়েছে। মাহদীর সিবি লাইনটি বেশ কয়েকবার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু বারবার বলা সত্ত্বেও নার্সরা তা পরিষ্কার করে না। তাদের খুত ধরলে তারা অস্থির হয়ে যায়। তারাও ঠিকমতো মাহদীর খেয়াল রাখেনি। চিকিৎসকদের গাফলতি না থাকলে হয়তো তাকে চলে যেতে হতো না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢামেক বার্ন ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক ড. পার্থ সংকর পাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ ঘটনায় সবার অবস্থাই আশংকাজনক ছিল। পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে বসে আমরা এ বিষয়গুলো তাদের আগেই জানিয়েছি। তারা যেসব অবহেলা ও গাফলতির কথা বলছে, এ বিষয়ে আমি জানি না। আমি তাদের কাছ থেকে এ ধরনের কোন অভিযোগ পাইনি।’
Advertisement
এআর/এআরএস/এমএস