আইন-আদালত

পিলখানা হত্যা : ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি আজ

বহুল আলোচিত রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে সেনা কর্মকর্তা হত্যা মামলায় (বিডিআর হত্যা মামলা হিসেবে পরিচিত) ডেথ রেফারেন্স ও কারাবন্দি আসামিদের করা সব ফৌজদারি আপিলের ওপর হাইকোর্টের শুনানি চলছে।

Advertisement

আজ (রোববার) এই মামলায় হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের আইনি যুক্তি উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।

এর আগে, পিলখানা হত্যা মামলায় ১৫২ জন আসামির ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আসামিদের আপিলের ওপর শুনানি ২ এপ্রিল পর্যন্ত মূলতবি করেন হাইকোর্ট।

রাষ্ট্রপক্ষের সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিশেষ বেঞ্চ এই মূলতবির আদেশ দেন।

Advertisement

আজ হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার আইনি যুক্তি উপস্থাপন করবেন। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষের সময়ের আবেদনে এ দিন ধার্য করা হয়।

বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ (বৃহত্তর) বেঞ্চে ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি শুনানি শুরু হয়। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার।

দেশের ইতিহাসে আসামির সংখ্যার দিক দিয়ে সবচেয়ে বড় এই মামলায় ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে শুনানি শুরু হয়।

সর্বাধিক আসামির মৃত্যদণ্ড ঘোষণা করে দেয়া রায়ের মামলায় ইতোমধ্যে ৩৫৯ কার্যদিবসের আপিল শুনানিও শেষ হয়েছে। আজ ৩৬০ দিনের মতো শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

Advertisement

আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম বলেন, আসামিপক্ষের মৌলিক বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছে। এখন রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন শেষ হলে তা খণ্ডন করে আসামিপক্ষ যুক্তি উপস্থাপনের সুযোগ পাবে।

এরআগে, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে আদালত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেলের যুক্তি উপস্থাপনের দিন ধার্য করেন। এ অবস্থায় ২২ ফেব্রুয়ারি চার সপ্তাহ সময়ের আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর উভয়পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন চলে কিছুক্ষণ। এসময় আদালত কিছু আইনগত বিষয়ে আইনজীবীদের কাছে জানতে চান। শুনানি শেষে আদালত পরবর্তী দিন ধার্য করেন।

২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি এ মামলা শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি তিন সদস্যের বিশেষ বেঞ্চ গঠন করেন। এ বেঞ্চের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে শুনানি গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করায় তার পরিবর্তে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারকে দায়িত্ব দিয়ে বেঞ্চ পুনর্গঠন করা হয়।

শুনানিতে প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ১৫২ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির ক্ষেত্রে মামলার বিষয়বস্তুর ওপর যুক্তি উপস্থাপন করেন। তার সঙ্গে রয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সরওয়ার কাজল।

আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এসএম শাহজাহান, এএসএম আবদুল মুবিন, মো. আমিনুল ইসলাম, দাউদুর রহমান মিনা, শামীম সরদারসহ অপরাপর আইনজীবীরা যুক্তি উপস্থাপন করেন।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দফতরে (পিলখানা) সংঘটিত ট্র্যাজেডিতে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। এরপর ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়। পরে মামলা দুটি নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তর হয়।

এরমধ্যে হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র দাখিলের পর রাজধানীর লালবাগের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে বিচার করা হয়। বিচার শেষে গত বছরের ৫ নভেম্বর হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান। মামলার আসামি ছিলেন ৮৪৬ জন।

এ মামলায় বিডিআরের উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) তৌহিদুল আলমসহ ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দীন আহম্মেদ পিন্টু (কারাগারে মৃত্যু) ও স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা তোরাব আলীসহ ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয় আরও ২৫৬ জনকে। আর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পান ২৭৭ জন।

পরে নিম্ন আদালতের এ রায়ের বিরুদ্ধে কারাবন্দি ১৩৮ জন ফাঁসির আসামিসহ অন্যান্য আসামি হাইকোর্টে আপিল করেন। একইসঙ্গে নিম্ন আদালত থেকে ফাঁসির দণ্ড অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে ডেথ রেফারেন্স।

এছাড়া খালাসপ্রাপ্তদের মধ্যে ৬৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। এখন এসব আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি চলছে। ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে এ শুনানি শুরু হয়। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩৫৯ কার্যদিবস শুনানি হয়েছে।

এই মামলার শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্ট বিশেষ উদ্যোগ নেন। বিশেষ ব্যবস্থায় এ মামলার ৩৭টি পেপারবুক তৈরি করা হয়। প্রতিটি পেপারবুকে পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩৭ হাজারেরও বেশি।

এফএইচ/এসআর/বিএ/পিআর