চাঁদপুর জেলায় পুরোপুরি শুষ্ক মৌসুম না আসতেই ২০টি খালের পানি শুকিয়ে গেছে। এছাড়া বহু খালের পানি বর্তমানে ১ থেকে ৩ ফুট পর্যন্ত রয়েছে। এসব খালও শুকিয়ে যাবে। এতে বোরো ধানের মৌসুমে সেচ সঙ্কটের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।এছাড়া খালগুলোতে দেশীয় প্রজাতির মাছ উৎপাদন হবে না। তাই স্থানীয় কৃষক ও মৎস্যজীবীরা এসব শুকিয়ে যাওয়া খালগুলো পুনঃখননের দাবি জানিয়েছেন।চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সফিকুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, চাঁদপুর জেলার ২০টি খালের পানি ইতোমধ্যে শুকিয়ে গেছে। এসব শুকিয়ে যাওয়া খালে কিছু পরিমাণ দেশীয় প্রজাতির মাছ উৎপাদন হতো। কিন্তু এখন তা হচ্ছে না। খালগুলোতে পুনঃখনন প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
Advertisement
তিনি জানান, চাঁদপুরে ৮টি উপজেলা রয়েছে। এরমধ্যে চাঁদপুর সদর উপজেলাতেই ১৬টি খাল রয়েছে। এসব খালের মধ্যে তিনটি খালের পানি শুকিয়ে গেছে। এগুলো হচ্ছে, আশিকাটি ইউনিয়নের হোসেনপুর থেকে সেনেরগাঁও পর্যন্ত হোসেনপুর খাল, শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের কেতুয়া থেকে কৃষ্ণপুর দিয়ে কুমারডুগী পর্যন্ত কেতুয়া খাল ও চাঁদপুর পৌরসভার বিষ্ণুদী হতে মেঘনা নদী পর্যন্ত বিষ্ণুদী খাল। এছাড়া কল্যানদি খাল, রঙ্গেরগাঁও খাল, সফরমালি খাল ও ওয়াপদার খালে মাত্র দশমিক ৩৩ মিটার পানি রয়েছে। যা যেকোনো মুহূর্তে শুকিয়ে যেতে পারে।
কচুয়া উপজেলায় ৫টি খাল রয়েছে এর মধ্যে ২টি খালের পানি শুকিয়ে গেছে। খালগুলো হচ্ছে, কচুয়া থেকে রঘুনাথপুর পর্যন্ত উদুরা খাল, মাছিমপুর হতে নাহারা পর্যন্ত তেতৈয়া জোরার খাল।
হাজীগঞ্জ উপজেলার ২৬টি খালের মধ্যে ৪টি খাল শুকিয়ে গেছে। এসব খালগুলো হচ্ছে, ৩নং কালচো উত্তর ইউনিয়নের রাজাপুর থেকে বানিয়াচো পর্যন্ত রাজাপুর জুগির খাল, ৩নং কালচো উত্তর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগাঁও থেকে কাশিমপুর পর্যন্ত ব্রাহ্মণগাঁও খাল, ৭নং বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের টামটা থেকে বিলওয়ারী পর্যন্ত হরি নারায়ণখাল, ১০নং গর্বন্ধব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের সীতারাম থেকে কাশিমপুর পর্যন্ত গোবিন্দ ভাংতি খাল।
Advertisement
এছাড়াও এই উপজেলার ২নং বাকিলা ইউনিয়নের বাকিলা দেবপুর খাল ও শ্রীপুর খাল, ৪নং কালচো দক্ষিণ ইউনিয়নের বাজনা খাল, ৮নং হাটিলা পূর্ব ইউনিয়নের সইখাল ও মুড়াগাঁও খাল। ৯নং গর্ন্ধব্যপুর উত্তর ইউনিয়নের আতিকশাহ খাল, ১০নং গর্ন্ধব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের সীতারামপুর খাল, হাজীগঞ্জ পৌরসভার টোরাগড় খাল ও বলাখাল খালের পানির গভীরতা রয়েছে ২ থেকে ৩ ফুট। যা পুরো গ্রীষ্মে শুকিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
শাহরাস্তি উপজেলার ১৮টি খালের ৭টি খালের পানি শুকিয়ে গেছে। খালগুলো হচ্ছে, বড়তুলা খাল, পাথৈর খাল, উনকিলা খাল, মৈতাবাড়ি খাল, খুদ্দ খাল, আজগোরা খাল, মেহার খাল। এছাড়া বাকি ১১টি খালের পানিও ২ থেকে ৩ ফুটের মধ্যে বিদ্যমান। এসব পানিও পুরো গ্রীষ্মে শুকিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মতলব দক্ষিণ উপজেলার ১৮টি খালের মধ্যে ১৪টি খালের পানি শুকিয়ে গেছে। খালগুলো হচ্ছে, নারায়নপুর ইউনিয়নের পয়ালী, কাশিমপুর-পূরণ, লক্ষ্মীপুর, সাড়পাড়, নাগদা, পুটিয়া, লামছড়ি ও তেলী মাছুয়া খাল, মতলব পৌরসভার নলুয়া, ঢাকিরগাঁও, দিঘলদী ও দূরগাঁও খাল, নায়েরগাঁও দক্ষিণ ইউনিয়নের টেমাই ও ধনারপাড় খাল, উপাদি উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়নের করবন্ধ খাল।
চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আলী আহমেদ জাগো নিউজকে জানান, খালগুলোর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বোরো মৌসুমে সেচের সমস্যা হয়। বিশেষ করে মতলবের খালগুলোর পানিশূন্য হয়ে সেচের মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি হয়।
Advertisement
গত কয়েক বছর যাবৎ মতলবের জমজমিয়া খাল পুনঃখননের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু পুনঃখনন করার কোনো পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে না।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও মৎস্যজীবীরা খালগুলো পুনঃখনন করে তার অস্তিত্ব ফিরিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
এফএ/আরআইপি