চলতি বছরের দ্বিতীয় মাস ফেব্রুয়ারিতে দেশে ৯৩ কোটি ৬২ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স কমেছে ২০ কোটি ডলার। গত বছর এর পরিমাণ ছিল ১১৩ কোটি ৬২ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য ওঠে এসেছে।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়া সহ মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চলা রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার কারণ। এছাড়াও বেসরকারি পর্যায়ে জনশক্তি রফতানিতে ভাটা ও হুন্ডি বা অবৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানোর প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহ কম গেছে।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের (২০১৬-১৭) অষ্টম মাস ফেব্রুয়ারিতে দেশে ৯৩ কোটি ৬২ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এর আগের মাস জানুয়ারিতে পাঠিয়েছিল ১০০ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে রেমিট্যান্স কমেছে ৭ কোটি ৩২ লাখ ডলার।এদিকে ফেব্রুয়ারিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স আহরিত হয়েছে ২৪ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৯৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৬৭ কোটি ২০ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১ কোটি ৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।বরাবরের মতই বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আহরিত হয়েছে। ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিট্যান্স আহরিত হয়েছে ১৭ কোটি ৮২ লাখ মার্কিন ডলার। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ৯ কোটি ৫৪ লাখ ডলার, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার এবং জনতার মাধ্যমে ৫ কোটি ৯৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আহরিত হয়েছে।এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভংকর সাহা বলেন, তেলের দাম কমে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসীদের আয় কমে গেছে। এটা একটা বড় কারণ। এছাড়াও হুন্ডি বেড়ে যাওয়ায় রেমিট্যান্স ধারবাহিকভাবে কমছে।তিনি আরও বলেন, তবে নতুন করে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে প্রবাসীদের বৈদেশিক মুদ্রা গ্রহণ করছে। বিষয়টি উদঘাটনসহ বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর উপায় খুঁজে বের করতে কাজ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পুরো সময়ে রেমিট্যান্স আসে এক হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার। যা আগের অর্থবছরে যা ছিল এক হাজার ৫৩১ কোটি ডলার। সেই হিসেবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ২ দশমিক ৫১ শতাংশ কম প্রবাসী আয় এসছে।এদিকে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের ইতিহাসে বছরের হিসাবে ২০১৩ সালে প্রথমবারের মত রেমিটেন্স প্রবাহ কমে। এর পর থেকেই রেমিট্যান্স নিম্নমুখী রয়েছে। সদ্য সমাপ্ত ২০১৬ সালেও নিম্নগতি অব্যাহত ছিল।২০১৬ সালে দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৩৬১ কোটি মার্কিণ ডলার। যা ২০১৫ সালে ছিল ১ হাজার ৫৩১ কোটি মার্কিন ডলার। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স কমেছে ১৭০ কোটি ৬১ লাখ মার্কিন ডলার বা ১১ দশমিক ১৪ শতাংশ। টাকার অংকে যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা।এসআই/আরএস/আরআইপি
Advertisement