মতামত

ব্যাংক জালিয়াতি বন্ধ করুন

ব্যাংকের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকতার আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি, অনিয়ম হলে তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ে। এজন্য কোনো অবস্থায়ই যেন ব্যাংকিংখাতে দুর্নীতি না হয় সেটি দেখতে হবে। দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে দেশে ব্যাংকিংখাতের প্রসার যেমন ঘটেছে তেমনি বেড়েছে এ খাতের অনিয়ম। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি থেকে শুরু করে হলমার্ক কেলেঙ্কারি, এটিএম কার্ড জালিয়াতিসহ ছোট-বড় নানা অনিয়ম দুর্নীতি হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক যেমন আছে তেমনি আছে বেসরকারি ব্যাংকও। সার্বিক আর্থিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নিতে হবে কঠোর ব্যবস্থা। নইলে এ খাতের অনিয়ম কোনোদিনই দূর হবে না। অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির (সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ) ছয় মাসের অর্থনৈতিক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে ব্যাংকিং খাতের বেহাল দশার কথা। গত শনিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে মোটাদাগে যেসব কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- বিচার না হওয়ায় ব্যাংকে জালিয়াতি বাড়ছে, কুঋণে সরকারি ব্যাংকের অবদান ৪৫ শতাংশ, এছাড়া ঋণ অবলোপন করা হয় ৪২ হাজার কোটি টাকা, সুশাসনের অভাবে এসব অপরাধ ঘটছে, সংকট নিরসনে স্বাধীন ব্যাংক কমিশন গঠনের সুপারিশ।সিপিডির  প্রতিবেদনে অর্থনীতিতে সবচেয়ে দুর্বল দিক ছিল ব্যাংক ও আর্থিক খাত। এ খাতে মোট বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ১ শতাংশই খেলাপি। এর বড় অংশই আবার কুঋণ, যা আদায়ের সম্ভাবনা খুবই কম। বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকের অবস্থা ভয়াবহ খারাপ। মোট বিতরণ করা ঋণে সরকারি ব্যাংকের অবদান ১৮ শতাংশ। কিন্তু কুঋণে সরকারি ব্যাংকের অবদান ৪৫ শতাংশ। এছাড়া ঋণ অবলোপন করা হয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। এসব কারণে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি হয়। এ কারণে এ বছরও সরকারি ব্যাংকগুলোকে বাজেট থেকে ১ হাজার ৮শ’ কোটি টাকা মূলধনের জোগান দিতে হয়েছে। ব্যাংকের আরেকটি খারাপ দিক হল অতিরিক্ত তারল্য বাড়ার প্রবণতা। বর্তমানে তা বিশাল আকার ধারণ করেছে। এছাড়া একের পর ঋণ কেলেংকারি ও জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ছে। গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকেও চুরি হয়েছে ৮শ’ কোটি টাকা, যা দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচিত হয়।ব্যাংকিং খাতে এসব ঘটনার বড় কারণ হল সুশাসনের অভাব। এর আগে যেসব কেলেংকারির ঘটনা ঘটেছে, তার সুষ্ঠু বিচার হলে এ ধরনের অপরাধ এড়ানো যেত। ফলে আগামীতে এ খাত সুরক্ষায় একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করে ব্যাংকে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন কেলেংকারির বিচার করতে হবে; না হলে এসব অপরাধ বন্ধ করা যাবে না। দুঃখজনক হচ্ছে ব্যাংকিং খাতের বড় বড় দুর্নীতি ও অনিয়মেরও কোনো বিচার হয় না। ফলে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছেই। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ও লাভ করে অপরাধীরা। এটা বন্ধ করতে হবে। উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলছে দেশ। এই গতি ধরে রাখতে হলে ব্যাংকসহ আর্থিক খাতের অনিয়ম বন্ধ করতে হবে শক্ত হাতে। কোনো অবস্থায়ই যেন অপরাধীরা পার না পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে যে কোনো মূল্যে। আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা থাকলে উন্নয়ন-অগ্রগতিও থেমে যেতে বা বাধাগ্রস্ত হতে বাধ্য। এইচআর/এমএস

Advertisement