দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত আটটি ব্যাংকে ফের প্রায় আটশ কোটি টাকার অডিট আপত্তি পেয়েছে সংসদীয় কমিটি। ফোর্সড পিএডি সৃষ্টি, জামানতবিহীন প্রকল্প গ্রহণ, সীমার অতিরিক্ত ঋণপত্রের দায়সহ মালিকানা পরিবর্তনের নামে ব্যাংকের দায় বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ধরা পড়েছে। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় উপস্থাপিত এক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এসব অডিট আপত্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কমিটিতে উপস্থাপিত প্রতিবেদনের তথমতে, অনিয়ম হওয়া ব্যাংকগুলো হচ্ছে- জনতা ব্যাংক লিমিটেড, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, আইসিবি, বেসিক ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড। ২০০৯-১০ অর্থবছরের হিসাবের ওপর করা বার্ষিক এই নিরীক্ষা প্রতিবেদনে ৪৫টি আপত্তির সঙ্গে জড়িত টাকার পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৭৯৬ কোটি ৮ লাখ ৭২ হাজার ২১৫ টাকা। প্রতিবেদনে ব্যাংকগুলোর যেসব অনিয়ম তুলে ধরা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- কনসোর্টিয়ামভুক্ত ব্যাংকের কাছ থেকে টাকা আদায় না করা, ফোর্সড পিএডি সৃষ্টির মাধ্যমে অতিরিক্ত বিনিয়োগ, অসমাপ্ত প্রকল্প গ্রহণ, সীমাতিরিক্ত ঋণপত্রের দায়সহ মালিকানা পরিবর্তনের নামে ব্যাংকের দায় বৃদ্ধি, মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ ও অন্য ব্যাংকের দায় গ্রহণের শর্তাদি বাস্তবায়নের আগেই প্রকল্প ঋণ বিতরণ এবং পর্যাপ্ত জামানতবিহীন প্রকল্প গ্রহণ। এছাড়া ফোর্সড পিএডি খাতের শ্রেণিকৃত দায় আদায় না করা, প্রকল্পে বিনিয়োগকৃত ঋণ একাধিকবার পুনঃতফসিল করেও আদায় না করা, বিতর্কিত সম্পত্তির বিপরীতে প্রকল্প ও সিসি ঋণ মঞ্জুরি, পরবর্তীতে পুনঃতফসিল করেও গ্রাহকের কোন ট্রানজেকশন না করা, প্রকল্প ঋণ মঞ্জুরের শর্ত ভঙ্গ, নিয়মিত তদারকির অভাব ও আদায়জনিত ব্যর্থতা, অনাদায়ী টাকা আদায়ে ব্যাংক কর্তৃক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করা, প্রকল্প বন্ধ, লিম ও প্লেজ গোডাউনের মালামাল অবৈধভাবে গ্রাহক কর্তৃক অপসারণ এবং অর্পিত সম্পত্তি বন্ধক রেখে অনুমোদিত ব্যাক টু ব্যাক এলসির মূল্য পরিশোধে পিএডি খাতের দায় সৃষ্টির বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। বৈঠকে অনিয়মের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা শেষে কমিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনাদায়ী টাকা আদায়ের ব্যবস্থা, দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, দায়েরকৃত মামলার তদারকি জোরদার এবং একই ঘটনার পুনরাবৃত্তিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দিয়েছে।কমিটির সভাপতি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। কমিটির সদস্য একেএম মাঈদুল ইসলাম, মো. আব্দুস শহীদ, মো. মোসলেম উদ্দিন, পঞ্চানন বিশ্বাস, মো. রুস্তম আলী ফরাজী, মো. শামসুল হক টুকু এবং মইন উদ্দীন খান বাদল বৈঠকে অংশ নেন। সিএন্ডএজি মাসুদ আহমেদ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদ্বয়, মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, অডিট অফিসের কর্মকর্তা এবং সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।এইচএস/ওআর/আরআইপি
Advertisement