দুই চালা ঘরের মাঝখানে বেড়া দিয়ে দুইটি কক্ষ বানিয়ে একপাশে বাবা-মা অপরপাশে তিন বোন এক ভাই রাতে ঘুমায়। একটা লাইটের আলোয় দুই কক্ষের কাজ সারেন তারা। এক টেবিলে চার ভাই-বোন পড়াশুনা করে। এক বাল্বের আলো ভালো দেখা না গেলেও কোনো উপায় নেই। যেদিন বিদ্যুৎ থাকে না, সেদিন আলোর অভাবে ঠিকমত লেখাপড়া হয় না। অভাবের সংসারে খাতা কেনার টাকা হলে কলম কেনার টাকা হয় না। এমন শত সমস্যার মাঝেও লেখাপড়া করে চায়না খাতুন এবার এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে।কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ডিগ্রি কলেজছাত্রী চায়না খাতুন। এর আগে সে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করে। অভাব আর সাংসারিক ঝামেলার কারণে এসএসসিতে জিপিএ-৫ না পেলেও এবার সেই অধরা জিপিএ-৫ ধরা দেয় চায়না খাতুনের কাছে। উপজেলার যাদুরচর দিগলাপাড়া গ্রামের কেরামত আলী ওরফে কেরামত ঘটকের মেয়ে চায়না খাতুন। জমাজমি বলতে বাড়ির ভিটে ছাড়া আর কোনো সম্পদ নেই কেরামত ঘটকের। ঘটকালি করে যা আয় হয় তা দিয়ে চলে তাদের ৬ সদস্যের সংসার। চায়না ছাড়াও তার বোন খাদিজা খাতুন (বিএ) ও মমতাজ খাতুন উচ্চ মাধ্যমিকে লেখাপড়া করে। চায়না খাতুন জাগো নিউজকে জানান, স্কুল-কলেজে বৃত্তির সুবিধা আর উপ-বৃত্তির টাকায় খরচ করেছি পরনের কাপড় আর খাতা-কলম। আমি নিজে বাড়িতে বাড়িতে শিশুদের প্রাইভেট পড়িয়ে রোজগার করেছি। আমি জানি বাবার আয় রোজগার নেই। যে টাকা আয় করে তাতে চাল কেনার টাকাও হয় না। এ অবস্থায় এখন পর্যন্ত আমার নিজের আয়ে লেখাপড়ার খরচ যুগিয়েছি। সমস্যা হলো এখন। এমনিতে মেয়ে মানুষ। বিভিন্ন স্থানে গিয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে। এজন্য ২০/৩০ হাজার টাকাও লাগবে। এতো টাকা কোথায় পাবো। এসব নিয়া চিন্তা করছি। ভাবছি আমার লেখাপড়া মনে হয় আর হবে না।চায়না খাতুনে মা সেলিনা বেগম বলেন, ‘মাইয়াক নিয়া খুবই বিপদে পড়ছি। ওর বাপের তো কামাই নাই। কিসের ঘটকালি করে খালি মাইনসের বাইত্তে দাওয়াত খায়। মাইনসের মাইয়াক ভালামন্দ খাবার দেয়। আর আমরা মাসে একদিনও দুধা কিনা খাওয়ান হাই না। আমরা গরীব মানুষ। আমরা কি শহরের নামি-দামি প্রতিষ্ঠানে মাইয়াক পড়ান হামু ? শহরে পড়তে একগাদি ট্যাহা নাগে। আমগর ঘরে একশ’ ট্যাহাও নাই। মেলা বিয়ার সমন্ধ আইসে। কিন্তুক মাইয়া আমার কিছুতেই বিয়া বসব না। কয়, মা আমি আরো লেহাপড়া করমু।’নাজমুল হোসেন/এআরএ/আরআইপি
Advertisement