এ যেন এক নৌ সাম্রাজ্য। চলছে জমজমাট নৌকার ব্যবসা। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এ ব্যবসা এলাকার মানুষের কাছে একটি অন্যতম ঐতিহ্য। নয়নাভিরাম নৌকার এ পসরা চোখে না দেখলে মনেই হবে না জলে-ডাঙায় এক সঙ্গে এতো নৌকার সমারোহ ঘটতে পারে। পিরোজপুরের সুন্দরী কাঠ সমৃদ্ধ এলাকা স্বরূপকাঠি উপজেলা এবং ঝালকাঠি সদর উপজেলার ২০ গ্রামের দেড় হাজারের বেশি পরিবার কয়েক যুগ ধরে নৌকা-বৈঠা তৈরি ও বিক্রি করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। জানা যায়, এ অঞ্চলের কৃষিজীবী মানুষের জীবন-জীবিকার প্রধান বাহনই হচ্ছে নৌকা। আর তাই নৌকা বেচা-কেনাকে কেন্দ্র করে সন্ধ্যা নদীর শাখা খালে যুগের পর যুগ ধরে বসছে এ নৌকার হাট। প্রতি শুক্র এবং রোববার বসে এ হাট।স্বরূপকাঠির আটঘর, আদমকাঠি, জিন্দাকাঠি, বাস্তকাঠি, বেঙ্গুলী, দলহার, আতাপাড়া, ইন্দুরকানী, কুড়িয়ানা এবং ঝালকাঠির ভিমরুলী, শেখেরহাট, শতদশকাঠি, ভিমরুলি, কাপুড়কাঠি, কৃর্ত্তিপাশা, জগদিশপুর, শাখাকাচি, কাচাবালিয়া, পোষন্ডা ও গাগর এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে এ নৌ সাম্রাজ্য। শেখেরহাটের নৌকা মিস্ত্রি ও ব্যবসায়ী আলামউদ্দিন জানান, ১ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত প্রকার ভেদে নৌকা বিক্রি হয় এ হাটে। জেলার বাইরে থেকে পাইকাররা বড় বড় ট্রলারে করে এসে একসঙ্গে ১৮ থেকে ২০টি নৌকা কিনে অন্য জেলায় নিয়ে বিক্রি করেন। তিনি আরো জানান, এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা যেহেতু নৌকায় করে খালের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য করেন, সে কারণে এখানে ডিঙি নৌকার চাহিদা বেশি। জৈষ্ঠ্য থেকে কার্তিক এ ছয় মাস আটঘর খালে প্রতি শুক্র এবং রোববার নৌকা ও বৈঠা বেচা-কেনা চলে। বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, তারা প্রতি বছর জৈষ্ঠ্য মাস থেকে নৌকা তৈরির কাজ শুরু করেন যা চলে আশ্বিন মাসের শেষ পর্যন্ত। কিন্তু কাঠ সঙ্কট, কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি ও গ্রামাঞ্চলে নৌকা ব্যবহার কমে যাওয়ায় নৌকা কারিগররা এই কাজে ক্রমশ আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। অন্যদিকে ইজারাদারদের অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসার সম্পূর্ণ মুনাফা ভোগ করতে পারছেন না কারিগর ও বিক্রেতারা। এ অঞ্চলের নৌকা ব্যবসায়ীদের দাবি, যুগ যুগ ধরে চলে আসা ঐতিহ্যবাহী এ নৌহাট সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ নেয়া হোক। এ ব্যাপারে ঝালকাঠি বিসিকের উপব্যবস্থাপক অসীম কুমার ঘোষ বলেন, ঝালকাঠি জেলার আওতায় নৌকা তৈরির মিস্ত্রীরা ঋণ সহায়তা নিতে এলে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।এফএ/এমএস
Advertisement