নারী অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপ হকিতে প্রথমবার অংশ নিয়েই বাংলাদেশের মেয়েরা ঘরে ফিরেছে ব্রোঞ্জ পদক নিয়ে। এটা এশিয়ার অনূর্ধ্ব-১৮ আসরে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক যাত্রা। চীনের দাহুতে হওয়া এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ৬-২ গোলে কাজাখস্তানকে হারিয়ে ব্রোঞ্জ জিতেছে।
Advertisement
চীন থেকে দেশে ফিরে দলের অধিনায়ক বিকেএসপির শিক্ষার্থী শারিকা সাফা রিমন একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জাগো নিউজকে। এ সাক্ষাতে তিনি চীনে তার দলের পারফরম্যান্স, আগামীতে আরও ভালো করতে প্রস্তুতি নিয়ে চাওয়াসহ নিজের হকিতে আসার গল্প শুনিয়েছেন এই কৃতী মিডফিল্ডার।
জাগো নিউজ: প্রথমবার নারী অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপ হকিতে অংশ নিয়েই তৃতীয় হয়ে পদক জিতেছে বাংলাদেশ। এই দলের অধিনায়ক আপনি। এ সাফল্যকে কীভাবে দেখছেন?
শারিকা সাফা রিমন: নারীদের এই প্রতিযোগিতায় আমরা প্রথম খেলেছি। তৃতীয় হয়েছি এটা আমাদের জন্য খুবই ভালো ফলাফল। আমরা যা খেলেছি তাতে মনে হচ্ছে, যদি আমরা আরও বেশি টুর্নামেন্ট ও প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে পারতাম তাহলে আরও ভালো পারফরম্যান্স করতে পারতাম।
Advertisement
জাগো নিউজ: বাংলাদেশ তৃতীয় হলো নাকি চতুর্থ হলো তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে প্রথম অংশ নিয়ে মাঠে কেমন পারফরম্যান্স হলো। অধিনায়ক হিসেবে আপনার মূল্যায়ন কি?
শারিকা সাফা রিমন: প্রথমবার অংশ নিয়ে সবাই যে এত ভালো খেলবে তা আমি ভাবতেই পারিনি। এখানে কয়েকজন ছিল সর্বশেষ অনূর্ধ্ব-২১ এএইচএফ কাপ খেলার। ওমানে খেলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কয়েকজনও ছিলেন। সব মিলিয়ে আমাদের দল খুবই ভালো খেলেছে।
জাগো নিউজ: এই সাফল্যের পেছনে দলের কোন শক্তিটা বেশি প্রভাব ফেলেছে? মানে কোন পজিশনে আপনারা ভালো করেছেন?
শারিকা সাফা রিমন: আসলে নির্দিষ্ট কোনো বিভাগে নয়, আমাদের ওভার অল সবাই ভালো খেলেছে। যারা প্রথম একাদশে খেলেছে তারা সবাই ভালো ছিল। তাদের মধ্যে বন্ডিংটা ছিল খুবই চমৎকার।
Advertisement
জাগো নিউজ: এর আগে আন্তর্জাতিক হকি খেলার অভিজ্ঞতা ছিল আপনার?
শারিকা সাফা রিমন: সর্বশেষ সিঙ্গাপুরে হওয়া এএইচএফ কাপে খেলেছিলাম আমি। এটা ছিল আমার দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট।
জাগো নিউজ: অনূর্ধ্ব-১৮ হকির যে দলটি চীনে গিয়েছিল সেখানে সব খেলোয়াড়ই কি বিকেএসপির? নাকি এর বাইরের কোনো খেলোয়াড় ছিল?
শারিকা সাফা রিমন: আমরা যারা গিয়েছিলাম সবাই বিকেএসপির শিক্ষার্থী। বাইরের কোনো খেলোয়াড় আমাদের দলে ছিল না।
জাগো নিউজ: আপনার জেলা নেত্রকোনায় কি হকি চর্চা আছে?
শারিকা সাফা রিমন: আমাদের ওখানে নেই। তবে আমাদের জেলার লক্ষ্মীপুর নামে একটা এলাকা আছে সেখানে হকির চর্চা হয়।
জাগো নিউজ: আপনি কি সেখানে হকি শিখতেন?
শারিকা সাফা রিমন: না না। আমি তো ফুটবল খেলতাম। কোনো দিন হকি স্টিক হাতেই নেইনি। হকির সাথে আমার কোনো পরিচয়ই ছিল না।
জাগো নিউজ: খেলতেন ফুটবল। এখন হকি দলের অধিনায়ক। কীভাবে কি হলো? যদি একটু খুলে বলতেন।
শারিকা সাফা রিমন: বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিকেএসপিতে আমার হকিতে ভর্তি হওয়া ছিল নাটকীয়ভাবে। আমি স্কুলে পড়া অবস্থায়ই ফুটবল খেলতাম। বঙ্গমাতা টুর্নামেন্টেও খেলেছি। আমার একটাই স্বপ্ন ছিল বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়া। ভর্তি হতে গিয়েই ফুটবল ছেড়ে নাটকীয়ভাবে হকিতে নাম লেখাই।
জাগো নিউজ: আপনি তাহলে ফুটবলে ট্রায়াল না দিয়ে হকিতে ট্রায়াল দিয়েছিলেন?
শারিকা সাফা রিমন: আমি ফুটবলে ট্রায়াল দিতেই বিকেএসপি এসেছিলাম। ফুটবলে ট্রায়াল দেই। পরদিন ছিল হকির ট্রায়াল। সিদ্ধান্ত নিলাম হকিতেও ট্রায়াল দেবো। সমস্যা হলো হকি স্টিকই তো ধরতে পারি না। ট্রায়ালের আধাঘণ্টা আগে একজনের কাছে হকিস্টিক ধরা শিখলাম। তারপর ট্রায়াল দিলাম। ফুটবল ও হকি দুটোতেই টিকে গিয়েছিলাম চূড়ান্ত বাছাইয়ে। তারপর ভর্তি হলাম হকিতে।
জাগো নিউজ: কি চিন্তা করে ফুটবল বাদ দিয়ে হকিতে ভর্তি হয়েছিলেন?
শারিকা সাফা রিমন: ওই বছর হকিতে প্রথম ছাত্র ভর্তি করিয়েছিল বিকেএসপি। আমি প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী। আসলে ফুটবলে যেমন দর্শক হয়, টানটান উত্তেজনা থাকে তেমন হকিতেও। আমি মনে করি হকিতে আরও বেশি। শেষ ১০ সেকেন্ডের মধ্যেও গোল হয়ে যায়। ফুটবলের চেয়ে অনেক ফাস্ট খেলা হকি।
জাগো নিউজ: এখন তো নারী ফুটবলে অনেক অর্জন বাংলাদেশে। অনেক আলোচনায়। আপনার কি কখনো মনে হয় হকির পরিবর্তে ফুটবল খেললে ভালো হতো?
শারিকা সাফ রিমন: এখন সেটা মনে হয় না। তবে এটা ঠিক, ফুটবল যেভাবে স্পন্সর পায় আমরা সেভাবে পাই না। আমরা সেরকম স্পন্সর পেলে আরও উন্নতমানের ট্রেনিংয়েরও সুযোগ পেতাম। তখন হকিতে আরও ভালো রেজাল্ট করতে পারতাম। ফুটবলের মেয়েরা বিদেশি কোচের অধীনে উন্নতমানের অনুশীলন করে। আমাদের তো সেই সুযোগ নেই।
জাগো নিউজ: আপনার পরিবারের কে কে আছেন? অন্য কেউ খেলাধুলার সাথে আছেন?
শারিকা সাফা রিমন: আমরা চার বোন ও এক ভাই। আমি সবার ছোট। আমার বাবা মো. ছামির উদ্দিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। আমাদের পরিবারের অন্য কেউ খেলাধুলা করে না। আমার বাবা ও বড় বোনের উৎসাহ এবং সমর্থনইে আমি খেলাধুলা করতে পেরেছি।
জাগো নিউজ: মেয়েদের হকিতে সামনে কি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আছে?
শারিকা সাফা রিমন: এ বছরের সেপ্টেম্বরেই হবে এএইচএফ অনূর্ধ্ব-২১ কাপ। এখন আমরা সেই টুর্নামেন্টে খেলার জন্যই প্রস্তুতি নেবো।
জাগো নিউজ: আগামীতে আরও ভালো করতে চাইলে এই দল নিয়ে কি পরিকল্পনা করা উচিত বলে অধিনায়ক হিসেবে আপনি মনে করেন?
শারিকা সাফা রিমন: আমরা যদি বেশি বেশি টুর্নামেন্ট খেলতে পারি, ম্যাচ খেলতে পারি তাহলে আশা করি এই দলটি ভবিষ্যতে আরও ভালো খেলা উপহার দিতে পারবে। এখন তো ব্রোঞ্জ পেলাম। তখন আরও ভালো কিছু পাবো।
জাগো নিউজ: ধন্যবাদ।শারিকা সাফা রিমন: আপনাকেও ধন্যবাদ।
আরআই/আইএইচএস/