১ উইকেটে ১০০ রান; এরপর ৮ উইকেটে ১০৫ রান। গতকাল বুধবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে এভাবেই ধসে পড়েছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ, মাত্র ৫ রানের ব্যবধানে ৭ উইকেটের পতন। যা ওডিআই ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ ধসের একটি।
Advertisement
এর আগে সবচেয়ে বাজে ধস ছিল ২০২০ সালে নেপালের বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের। যেখানে ২৩/১ থেকে ৩১/৮ হয়ে যুক্তরাষ্ট্র গুটিয়ে গিয়েছিল মাত্র ৩৫ রানে।
বাংলাদেশ পেসার তাসকিন আহমেদ স্বীকার করেছেন, কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যেভাবে দলের ব্যাটিং লাইনআপ ধসে পড়েছে, তা কষ্টদায়ক ও অপ্রত্যাশিত।
ম্যাচ শেষে তাসকিন বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে আমরা খুব ভালো শুরু করেছিলাম, কিন্তু এরপর... কঠিন হারের স্বীকার হলাম। ৫ রানে ৭ উইকেট হারানো—এটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল। আমরা চেষ্টা করেছি, কিন্তু কিছুই হলো না। হ্যাঁ, এটা মোটেও ভালো অনুভূতি না।’
Advertisement
১৭তম ওভারে ১ উইকেটে স্কোরকার্ডে ১০০ রান দেখে হয়তো তাসকিনদের মতো লোওয়ারঅর্ডাররা চাপমুক্ত হয়ে পড়েছিলেন। ভেবেছিলেন, হয়তো তাদেরকে ব্যাটিংয়ে নামতে হবে না। তার আগেই ম্যাচ জিতে যাবেন। তাই ড্রেসিংরুমে নির্ভার ছিলেন তারা। কিন্তু উইকেট এতই দ্রুত পড়েছে যে, তড়িঘড়ি করেই লোওয়ারঅর্ডারদের প্যাড, হ্যালমেট ও হ্যান্ডগ্লাভস নিয়ে প্রস্তুত হতে হয়েছিল। খুব কম সময়ই তারা পেয়েছিলেন।
বাংলাদেশের উইকেট পতন কতটা দ্রুতগতিতে হয়েছিল, তা বোঝা যায় তাসকিনের কথা থেকে। তিনি কফি খেতে খেতেই দেখেন ৫ উইকেট পড়ে গেছে।
তাসকিন বলেন, ‘ক্রিকেট যে কতটা অনিশ্চিত, সেটা আবার মনে করিয়ে দিল। আমি তখন ড্রেসিং রুমে কফি খাচ্ছিলাম, আর হঠাৎ দেখি পাঁচটা উইকেট পড়ে গেছে। আশা করি আমরা পরের ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াব। এবং সবাই এই ভুল থেকে শিক্ষা নেবে।’
টার্নিং পয়েন্ট নিয়ে টাইগার পেসার বলেন, ‘প্রেমাদাসার উইকেট একটু চ্যালেঞ্জিং, কিন্তু আজকে (ওয়ানিন্দু) হাসারাঙ্গার সেই ওভার থেকে যখন শান্ত রানআউট হয় আর তারপর তামিম আউট হয়ে যায়, তখনই আমাদের ধসটা শুরু হয়। একটা ওভারেই দুটি উইকেট। সেটাই ছিল টার্নিং পয়েন্ট। আমরা যেভাবে শুরু করেছিলাম, ভেবেছিলাম ৫-৬ ওভার হাতে রেখেই জিতে যাবো। কিন্তু ওই ধসটা আমাদের বড় ক্ষতি করে দিল। কষ্ট লাগে, কারণ আমিও এই দলের একজন। ব্যাটিং, বোলিং মিলেই তো আমরা একটা দল।’
Advertisement
তাসকিন স্বীকার করেছেন, বাংলাদেশের খেলা নিয়ে সচেতনতা কম। তিনি বলেন, ‘গেম অ্যাওয়ারনেসে আমরা এখনো শীর্ষ দলগুলোর থেকে কিছুটা পিছিয়ে আছি। তবে আমরা সেটা উন্নত করার চেষ্টা করছি, একটা ভালো পরিবেশ এবং সংস্কৃতি তৈরি করতে চাচ্ছি। আমরা অনেক দিন ধরেই এই ‘ট্রানজিশন পিরিয়ড’ কথাটা বলছি। হয়তো এটা একটু বেশি দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের এখান থেকে বের হয়ে আসতেই হবে। অন্য কোনো পথ নেই। আমরা কাজ করছি, এবং সবাই চেষ্টা করছে।’
কেউ কেউ উইকেটকে দুষতে পারেন। কিন্তু তেমন অজুহাত দেখাননি তাসকিন। তিনি মনে করেন, উইকেটটা খুব একটা কঠিন ছিল না ব্যাটিংয়ের জন্য। জাকের আলীর ইনিংস সেটার প্রমাণ।
তাসকিন বলেন, ‘দেখুন, জাকের (জাকের আলী ৬৪ বলে ৫১ রান করেন) শেষ দিকে খুব ভালো ব্যাট করেছে। ওর সাথে যদি আরও দুই-তিনজন ব্যাটার টিকে থাকতো, তাহলে ম্যাচটা জিততে পারতাম। হ্যাঁ, আমরা ভালো ব্যাটিং করিনি। কিন্তু দু-তিনজন ব্যাটসম্যানকে যেভাবে খেলতে দেখলাম, তাতে মনে হয় না উইকেটটা খুব খারাপ ছিল। এটিই আমাদের ব্যর্থতা। আমরা মোটামুটি ভালো বল করেছি, আরও ভালো হতে পারত। তবে যা হয়েছে, সেটা মেনে নিতে হবে।’
এমএইচ/এএসএম