ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব বা টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্ম যেন এখন আমাদের নিত্যকাজের অংশ। প্রথম দিকে সোশ্যাল মিডিয়া বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু হলেও ধীরে ধীরে সোশ্যাল মিডিয়া হয়ে উঠেছে মানুষের আয়ের উৎস। ব্যবসা বাণিজ্যের মার্কেটিং থেকে শুরু করে কেনা-বেচা সবই হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যা বিশ্বের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এনেছে অভূতপূর্ব পরিবর্তন।
Advertisement
বিশ্বজুড়ে লাখো মানুষ এখন সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে নিজেদের ব্যবসা দাঁড় করাচ্ছেন। আর এই প্রবণতা বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে বিস্তৃতভাবে। বিশেষ করে নারীদের মধ্যে এই ধারা লক্ষণীয়, যারা ঘরে বসেই ফেসবুক পেজ, ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট বা ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে চালাচ্ছেন সফল উদ্যোগ।
রান্নার রেসিপি, হস্তশিল্প, কসমেটিকস বা বুটিক-ঘরে বসেই এসব পণ্যের ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করছেন অনেকে। আর সেখান থেকেই তৈরি হচ্ছে অর্ডার, বেচাকেনা এবং ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে একটি ক্ষুদ্র কিন্তু দৃঢ় ব্যবসার ভিত।
সোশ্যাল মিডিয়াভিত্তিক ব্যবসার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এর জন্য প্রয়োজন হয় না বড় মূলধনের। একটি স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই যাত্রা শুরু করা যায়। পণ্যের ছবি তুলে পোস্ট করা, কাস্টমারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং অর্ডার নেওয়া-সবই সম্ভব একটি ফোনেই।
Advertisement
আরও পড়ুন
বন্ধু খোঁজা থেকে ব্র্যান্ড গড়ার কারিগর সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকের ‘ভিডিও’ থেকে আর আয় করা যাবে নাবাজার গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ২০২৫ সালের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া কমার্স সেক্টর কয়েক হাজার কোটি টাকার বাজার তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে ছোট উদ্যোক্তা ও হোম বেইজড ব্যবসার জন্য এটি এক বিশাল সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে।
আগে যেখানে বিক্রয় মানেই দোকানদারি, সেখানে এখন রিলস, ভিডিও আর পোস্ট দিয়েই পণ্য বিক্রি হচ্ছে। একজন উদ্যোক্তা কিভাবে নিজের পণ্যের প্যাকেজিং করেন, সেটা নিয়ে রিল বানিয়ে সেটিকে ‘ভ্যালু অ্যাডেড কনটেন্ট’ হিসেবে উপস্থাপন করছেন। এতে কাস্টমারও আকৃষ্ট হচ্ছেন, আবার উদ্যোক্তার প্রতি তৈরি হচ্ছে আস্থা।
অনেকে আবার ‘লাইভ সেলিং’ করেও সফল হচ্ছেন। লাইভে এসে পণ্যের বিস্তারিত তুলে ধরছেন, দর্শক সরাসরি প্রশ্ন করছেন আর লাইভেই অর্ডার দিয়ে দিচ্ছেন। সোশ্যাল মিডিয়ার এই লাইভ সুবিধা যেন ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য এক অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।
Advertisement
তবে এই যাত্রা এতটা সহজও নয়। প্রতারণা, ভুয়া রিভিউ, পেজ হ্যাকিং, অনলাইন বুলিং বা কাস্টমারদের অনৈতিক মন্তব্য-এসব সমস্যাও আছে। অনেক নারী উদ্যোক্তা বলেছেন, তারা নিজের ছবি বা ভিডিও পোস্ট করলেই অপ্রত্যাশিত ইনবক্স পান, যা তাদের মানসিকভাবে ক্লান্ত করে তোলে।
তাছাড়া অনেকে ডিজিটাল মার্কেটিং বা কনটেন্ট কৌশল না জানার কারণে পিছিয়ে পড়েন। ফলে শুধু পণ্যের গুণমান ভালো হলেই হবে না, তার সঙ্গে থাকতে হবে সঠিক উপস্থাপন ও ক্রেতার মন বোঝার কৌশলও।
বর্তমানে অনেক এনজিও ও অনলাইন প্রশিক্ষণ প্ল্যাটফর্ম উদ্যোক্তাদের সহায়তা করছে। তবে সরকারি পর্যায়ে আরও ব্যাপক প্রশিক্ষণ, ই-কমার্স সংক্রান্ত সহযোগিতা ও অনলাইন ব্যবসার আইনগত কাঠামো তৈরি হলে এই খাত আরও গতিশীল হতে পারে।
সোশ্যাল মিডিয়াভিত্তিক ব্যবসাকে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে যুব উন্নয়ন, নারী উদ্যোক্তা সহায়তা বা ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্পের আওতায়। এতে করে তরুণরা প্রযুক্তির পাশাপাশি আত্মনির্ভরশীলতাও শিখবে। সোশ্যাল মিডিয়া হয়ে উঠছে জীবিকা অর্জনের, স্বপ্ন দেখার এবং সমাজে নিজের পরিচয় তৈরি করার এক শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম। বিশেষ করে তরুণ ও নারীদের জন্য এটি যেন নিজের মেধা ও পরিশ্রমের জোরে উঠে দাঁড়ানোর এক ডিজিটাল আশ্রয়স্থল।
সানজানা/কেএসকে/এমএস