স্তূপ করে রাখা আছে রং-বেরঙের সব পুরোনো প্লাস্টিকের বোতল। সেগুলোর মধ্যে বালুভর্তি করে একটির পর একটি পর্যায়ক্রমে বসানো হচ্ছে। সেগুলোর ওপর সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে গাঁথুনি।
Advertisement
এভাবে ধীরে ধীরে সেটি রূপ নিচ্ছে দৃষ্টিনন্দন এক একটি দেওয়ালে। এভাবেই ইট ছাড়া প্লাস্টিকের ‘বোতল বাড়ি’ বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন শরীয়তপুরের প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের ইমান ঢালী নামের এক মুদিদোকানি, যা এরইমধ্যে সাড়া ফেলেছে স্থানীয়দের মধ্যে। প্লাস্টিকের এমন পুনর্ব্যবহার পরিবেশের জন্য সুবার্তা মনে করছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গোসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্টি ইউনিয়নের মাইঝারা এলাকার বাসিন্দা ইমান ঢালী। পাঁচ বছর আগে ইউটিউবে বোতল দিয়ে নির্মাণ করা একটি বাড়ির ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হন তিনি। বিষয়টি নিয়ে আলাপ করেন স্ত্রী রুনা লায়লার সাথে। একপর্যায়ে তিনি সম্মতি দিলে প্রবল ইচ্ছে জাগে বোতল বাড়ির নির্মাণের। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী একবছর ধরে গোসাইরহাট বাজার থেকে প্রতিনিয়ত বোতল সংগ্রহ শুরু করেন।
বোতলগুলো বিভিন্ন দোকানির কাছ থেকে ১০-২০ টাকা কেজি দরে কেনেন ইমান ঢালী। এভাবে গত এক বছরে ৪০ হাজার বোতল জমান। সেগুলো তিনি এবং তার স্ত্রী বালুভর্তি করে প্রস্তুত করেন বাড়ি নির্মাণের। এরপর বিষয়টি স্থানীয় রাজমিস্ত্রির সঙ্গে আলাপ করে গত ১৫ দিন ধরে চার কক্ষবিশিষ্ট একটি বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন তিনি।
Advertisement
এরইমধ্যে বাড়িটির প্রায় অর্ধেক নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এতে খরচ হয়েছে দুই লাখ টাকা। আর পুরো বাড়িটি ছাদসহ সম্পন্ন করতে আরও আট লাখ টাকার প্রয়োজন হবে বলে জানান ইমান ঢালী।
ইটের চেয়ে সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব হওয়ার এমন উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানান মুদিদোকানি ইমান ঢালী। আর তার বাড়ি তৈরির এমন উদ্যোগে খুশি স্থানীয়রা।
ইমান ঢালী জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রথমে যখন ভিডিওটি দেখি তখনই সিদ্ধান্ত নেই বোতলের বাড়ি করার। স্ত্রী যখন সম্মতি দিলো তখন থেকেই ধীরে ধীরে পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোতে থাকি। সবশেষে আমি আমার স্বপ্নের বাড়িটি নির্মাণে কাজ শুরু করতে পেরেছি।’
তিনি বলেন, বোতল দিয়ে বাড়ি তৈরিতে খরচ কম। পরিবেশেরও ক্ষতি করে না। তাই এই বাড়ি ব্যবহার করায় পরিবেশ ভালো থাকবে বলে আমি মনে করি।
Advertisement
স্থানীয় বাসিন্দা সিফাতুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের এলাকার ইমান ঢালী একটি বোতল বাড়ি তৈরি করছেন শুনে দেখতে এসেছি। এসে দেখি এটি সত্যিই সুন্দর। মিস্ত্রিদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি বোতল দিয়ে বাড়ি তৈরিতে খরচ কম হয়। আমার ইচ্ছে আছে সামনে আমিও একটি বোতল বাড়ি তৈরি করবো।’
বাড়ির নির্মাতা রাজমিস্ত্রি ইব্রাহিম সরদার বলেন, ‘আমি এর আগে অনেক ইটের ঘরবাড়ি নির্মাণ করেছি। এই প্রথম প্লাস্টিকের বোতলের বাড়ি নির্মাণের কাজ করছি। বোতল বাড়ি তৈরিতে খুব ধীরে ধীরে সাজিয়ে গুছিয়ে কাজ করতে হয়। বালুভর্তি একটির পর একটি বোতল সাজিয়ে সিমেন্ট দিতে হয়। বোতলের বাড়িতে আলাদা রঙ করতে হবে না, বোতলের রঙ দীর্ঘদিন থাকবে। তাছাড়া এটি সহজে নষ্ট হয় না বলে ইটের চেয়েও দীর্ঘস্থায়ী হবে।’
এ বিষয়ে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রাসেল নোমান বলেন, প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বাড়ি তৈরির বিষয়টি জানতে পেরেছি। এটি সরকারের থ্রিআর পলিসির মধ্যে পড়ে। অর্থাৎ পরিত্যক্ত প্লাস্টিক পুনরায় ব্যবহার করা হচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে এটি ভালোই মনে হচ্ছে। কেননা প্লাস্টিকগুলো সরাসরি পরিবেশে যাচ্ছে না। ভবিষ্যতে এই প্রজেক্টটি আমাদের নজরে থাকবে।
এসআর/এমএস