নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ফারিয়া আক্তার মিম (১৪) নামে এক শিক্ষার্থী মাদরাসার সাত তলা ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছে। শিক্ষার্থীর স্বজনরা এটিকে পরিকল্পিত দাবি করলেও সেটি অস্বীকার করছে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ।
Advertisement
রোববার (২৯ জুন) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ১নং ওয়ার্ডের পাইনাদী নতুন মহল্লায় এ ঘটনা ঘটে। আহত শিক্ষার্থী ফারিয়া আক্তার মিম পাইনাদী কলসি বিল্ডিং এলাকার প্রবাসী মো. মামুন মিয়ার মেয়ে।
জানা গেছে, সে পাইনাদী নতুন মহল্লা এলাকার বিমান ভবন নামক একটি বাড়ির জামিয়া মাদানিয়া হাদিউল উম্মাহ মহিলা মাদরাসার খুছুছী বিভাগের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। রোববার বিকেলে ঘুম থেকে উঠে হঠাৎ সে মাদরাসা ভবনের ৭ তলার ছাদ থেকে লাফ দেয়। ওই প্রতিষ্ঠানের আবাসিক শিক্ষকরা দেখতে পেয়ে দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যান। একপর্যায়ে রোগীর অবস্থার অবনতি হলে তাকে ধানমণ্ডির পপুলার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে ওই শিক্ষার্থী আইসিইউতে ভর্তি। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এদিকে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ার ঘটনাকে সন্দেহের চোখ দেখছে আহত শিক্ষার্থীর স্বজনরা। পরিবারের দাবি, পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ভুক্তভোগীর পরিবার থেকে সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করা হয়নি। তবে লোক মারফত জেনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ।
Advertisement
আহত শিক্ষার্থীর খালা তিতলি আক্তার বলেন, রোগীর অবস্থা মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বাঁচার সম্ভাবনা ১০% বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
তিনি আরও বলে, ‘অকারণে ফারিয়ার লাফ দেওয়ার কথা না। তার ওপর ছাদ থেকে পড়ে যাওয়ার পর মাদরাসা কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে খবর না দিয়েই হাসপাতালে নিয়ে গেছে। এটাও আমাদের কাছে সন্দেহের। পরে আমরা খবর পেয়ে ছুটে গিয়েছি। আমরা এটার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।’
জামিয়া মাদানিয়া হাদিউল উম্মাহ মহিলা মাদরাসার শিক্ষা সচিব বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি, তাই তেমন কিছু বলতে পারছি না। তবে ঘটনার দুই দিন আগে থেকে ফারিয়ার মন খারাপ দেখেছি।
মাদরাসাটির (প্রিন্সিপাল) পরিচালক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি বাসায় ছিলাম। পরে ঘটনা সম্পর্কে জেনে দ্রুত এসে তাকে হাসপাতালে আনার ব্যবস্থা করেছি। বিকেলে ওর সঙ্গে একজন শিক্ষক ঘুমিয়ে ছিলেন। মূলত আমাদের মাদরাসায় বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা ঘুমানোর সময় থাকে। সেই হিসাব অনুযায়ী ওই শিক্ষার্থী গতকাল একজন শিক্ষকের সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিল। ওই শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলার পর তিনি আমাকে বলেছেন, ফারিয়ার দুপুর থেকেই মন খারাপ ছিল। তার সঙ্গে থাকা শিক্ষক নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে ওজু খানায় যান। এই ফাঁকে ফারিয়া ছাদে গেলে এই ঘটনা ঘটেছে। এখন আল্লাহ তায়ালা ভালো জানেন।’
Advertisement
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহিনূর আলম জাগো নিউজকে জানান, ঘটনা সম্পর্কে শুনে রাত ৩টা পর্যন্ত মাদরাসা পরিদর্শন করেছি। আমরা শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা যেমনটা দেখেছি যে ওই মাদরাসায় নিয়মকানুন যথেষ্ট রয়েছে। মেয়েটি ৭ তলা থেকে কেন লাফ দিলো, সে সম্পর্কে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও ৬ জন নারী শিক্ষক কারোই ধারণা নেই।
আহতের পরিবারের দাবি পরিকল্পিত ঘটনা, এমন কথার জবাবে ওসি বলেন, এখন পর্যন্ত স্বজনরা থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করেনি। তারা হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করছে। আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত পরবর্তীতে বিস্তারিত বলা যাবে।
মো. আকাশ/এফএ/এমএস