দেশজুড়ে

খেয়াঘাট ইজারা নিয়ে বিপাকে ঠিকাদার

খেয়াঘাট ইজারা নিয়ে বিপাকে ঠিকাদার

বরিশালে কীর্তনখোলা নদীর খেয়াঘাট (বেলতলা) ইজারা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ঠিকাদার। জেলা পরিষদ কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়া ওঠানো নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই বাগবিতণ্ডায় জড়াচ্ছে খেয়াঘাট ইজারাদারের লোকজন ও সাধারণ যাত্রীরা।

Advertisement

একদিকে সরকার নির্ধারিত ভাড়া দিতে নারাজ সাধারণ যাত্রীরা, অপরদিকে সরকারি কোষাগারে কোটি টাকার বেশি জমা দিয়ে খেয়াঘাট ইজারা নিয়ে টাকা তোলার বিষয়ে সংশয়ে রয়েছেন ঠিকাদার। বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর বেলতলা খেয়াঘাটে গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই খেয়াঘাট থেকে (বরিশাল-চরমোনাই-বরিশাল) প্রতিদিন পাঁচ হাজার লোক যাতায়াত করে। জুলাই আন্দোলনের পর কোনো ইজারাদার না থাকায় জেলা পরিষদের লোকজন খেয়াঘাটের ভাড়া উত্তোলন করে। সেসময় দুই পাড়ের লোকজনের কাছ থেকে নদী পার হতে জনপ্রতি ২ টাকা থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হত। দীর্ঘ কয়েক মাস জেলা পরিষদের লোকজন ২-৫ টাকা ভাড়া উত্তোলনের পর ইজারা দেয় খেয়া ঘাটটি। এক কোটি ৮ লাখ টাকা রাজস্ব দিয়ে ঘাটটি ইজারা পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাকওয়া এন্টারপ্রাইজ।

ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা রাকিব খন্দকার বলেন, এই খেয়াঘাট দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার লোক যাতায়াত করে। যার অধিকাংশই গরিব ও খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের কাছ থেকে ইজারাদারের লোকজন জোরপূর্বক ৮ টাকা করে ভাড়া উত্তোলনের চেষ্টা চালায়। খেয়াঘাটের ভাড়া জনপ্রতি ৫ টাকার ওপরে কোনোভাবেই নিতে দেওয়া যাবে না।

Advertisement

একই দাবি করেন ওই এলাকার হাজারো মানুষ। তারা বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া উত্তোলন বন্ধে এলাকার হাজারো মানুষ মানববন্ধন করেছে। এরপর প্রয়োজনে জেলা পরিষদ ঘেরাও করা হবে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাকওয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী রিয়াজ মাতুব্বর হীরা বলেন, খেয়াঘাট ইজারা দেওয়ার সময় পূর্বের সরকার নির্ধারিত ভাড়া ৪ টাকার পরিবর্তে নতুন করে ৮ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে দেয় জেলা পরিষদ। এরপর থেকে ঘাটে ৮ টাকা ভাড়া চাইলেই জনগণের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা বাধে। বর্তমানে লস দিয়ে দীর্ঘ তিন মাস ধরে ৫ টাকা করে ভাড়া উত্তোলন করা হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত ভাড়া চাইতে গেলেই জনগণের সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এমনকি দু’দিন আগে সরকার নির্ধারিত ৮ টাকা ভাড়া চাওয়ায় ঘাটের একজনকে মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, মারধরের বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় চরমোনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. জিয়াউল করিম একতরফা বিচার করেন। পরে খেয়াঘাটের ভাড়ার বিষয়টি সমাধানের জন্য জেলা পরিষদ, পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসকসহ সব দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ইজারার অর্ধেক টাকা উত্তোলন করাও সম্ভব হবে না।

এ ব্যাপারে চরমোনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. জিয়াউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

Advertisement

বরিশাল জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী বিপ্লব কুমার বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, খেয়াঘাটের ভাড়া বিভাগীয় কমিশনার ও মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই। এখন ভাড়া বাড়ানো অথবা কমানোর কোনো সুযোগ নেই। সরকার নির্ধারিত ভাড়াই ওঠাতে পারবে ঠিকাদার। সেক্ষেত্রে ঠিকাদার যদি ভাড়া ওঠাতে ব্যর্থ হয় তাহলে আমরা তার পাশে আছি।

তিনি আরও বলেন, ঘাটে ভাড়া উত্তোলন নিয়ে মারামারির খবর শুনেছি। ভাড়া উত্তোলন নিয়ে পরবর্তীতে আর যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য কোতয়ালি মডেল থানা ও কাউনিয়া থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।

এফএ/জেআইএম